পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/২০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3 е е শরৎকুমার চিঠিখানি গ্রহণপূর্বক পড়িয়া রাজকস্তার হাতে প্রত্যপণ করিয়া কহিলেন, "মিনি লিখছেন—তিনি দেখছি গুণগ্রাহী।”

  • fতনি আপনাকে নমস্কার জানিয়েছেন—দেখেছেন ত r কি উত্তর দেব ?”

“ফিরিয়ে দেবেন নমস্কারটা।” এমন ঔদাসীন্তের সঙ্গিত কথাটা শরৎকুমাল বলিলেন যে, জ্যোম্বিীর পুৰ্ব্বগঠিত বিশ্বাস বেশ একটু টলমল করিয়া উঠিল । বলিলেন, “চিঠি পড়ে ত মনে হয়—আপনার সঙ্গে তার বিশেষ অtভূীয়তা আছে।” “ভুল আপনার।--মোটেই না।” বিদায়-দিনে হাসির প্রত্যাখ্যানের কথা মনে জাগিয়া উঠিল,-- কিন্তু আজ আর সে স্মৃতিতে তাহার দীর্ঘনিশ্বাস পড়িল না। শরৎকুমার নিজেই যেন তাহাতে একটু বিস্মিত হষ্টলেন । জ্যোতিৰ্ম্ময়ী বলিলেন, “আপনার আত্মা কিন্তু চুপি চুপি অঙ্গ কথাই প্রকাশ করেছে।” “কি রকম ?” *অসুখের সময় অনেকবারই হাসির নাম আপনার মুখে শুনেছি।” শরৎকুমারের রক্তহীন পাংশুমুখে সহসা লজ্জার আভা চমকিয়া গেল ! “সত্যি না কি ? প্রলাপের ঘোরে কি কথা ন জানি শরৎকুমার বলিরাছেন – আর রাজকুমারী ভাগ শুনিয়া কি না জানি মনে কবিয়াছেন, ছিঃ---ছিঃ !” সব কথা রাজকন্যাকে খুলিয়া বলিতে তাহার ইচ্ছা হইল। কিন্তু চন্দ্রালোকে বা মান দীপশিখার নিকট বসিয়া ষে সব কাহিনী বলা যায়,—দিনের ফ্যাক্‌-ফ্যাকে উজ্জল আলোক তাহাঁর পক্ষে প্রতিকুল ।--তাহা ছাড়া অনাদি ছোকর ঘরের কোণে বসিয়া আছে, যদিও সে নভেল পাঠে মগ্ন—তবুও ত এক জন তৃতীয় ব্যক্তি ঘরে উপস্থিত । শরৎকুমার মৌন হুইয়া রহিলেন,~র্তাহার ভাষা এই সঙ্কটের সময় তাঙ্গকে পরিত্যাগ করিল,— ঘড়িটাও কি ছাই এই মুহূর্তে র্তাহার শত্রুত৷ করিবে —সশকে এই সময় ৪টা বাজিয়া উঠিল । জ্যোতিশ্ময়ী উঠিয়া দাড়াইয়া কহিলেন, “উঠি তবে আজ, ৪টে বেজে গেল, অfমাদের আবার অtজ চায়ে যেতে হবে । একটু সাবধানে থাকবেন, এখনও দুৰ্ব্বল অাছেন ।” উত্তরের অপেক্ষা না করিয়াই বালিকা চলিয়া গেল। শরৎ চোখ বুজিয়া শুইয়া পড়িলেন। একটা কষ্টের অবসাদে তাহার দুর্বল শরীর একান্ত ক্লাস্তিপুর্ণ হইয়া উঠিল। যে সত্য এত দিন তাহার নিকট লুকায়িত স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী ছিল—আজ তাহাতে তিনি সচেতন হইয়া উঠিলেন, বুঝলেন, অমুখের পুৰ্ব্বে যে তিনি ছিলেন—আজ সে-তিন নাই। হাসির যে হাসিটুকু তিনি এত দিন হৃদয়নিভৃতে লুকাইয়। রাখিয়াছিলেন, আজ ত আর তাহার সন্ধান পাইতেছেন না। জ্যোতিৰ্ম্ময়ীর গ্যোতিঃসাগরে তাহার শেষ রশ্মিটুকুও যে সহস৷ মিলাইরা পড়িয়াছে ! কেমন করিয়া কোন মুহূর্তে এ ঘটনা ঘটিল, তাহা তিনি বুঝিলেন না, এইটুকু শুধু বুঝিলেন যে, জ্যোতিৰ্ম্ময়ী এখন তাহার মনে একমাত্র জাগ্রত দেবতা ! অদৃষ্টের এ কি নিষ্ঠুর উপহাস! তিনি হাসিকে ভুলিতে চাহিতেছিলেন সত্য, কিন্তু এমনি করিয়া তপ্ত হইতে তপ্ত তর অনলদাহের মধ্যে ডুবিয়া কি ? হাiসকে যখন তিনি ভাল বাসিয়াছিলেন, তখন তাহাকে দুষ্প্রাপ্য মনে করেন নাই, সেষ্ট জন্ত তাহাকে আত্মসমর্পণ করিতে কখনও তাহার কুণ্ঠ বোধ হয় নাই, ॥কন্তু জ্যোতিৰ্ম্ময়ী যে তাহার পক্ষে একান্তই দুল্লভ বস্তু ; তাহার কাছে আত্মবেদন জানাইতেও যে সাইস নাই, জ্যোতিৰ্ম্ময়ী স্বর্গের তারক।-- আর শরৎকুমার মৰ্ত্তোর মানব ! চিরদিন এই অনলদাহ নীরবে তাহাকে হৃদয়মধ্যে বহন করিতে হইবে ষে ! “ভগবান, এমন নিষ্ঠুর তুমি ! অথবা ষ্টহাই তোমার করুণা ? গৃষ্ঠী হইবার জন্ত আমাকে তুমি স্বষ্টি কর নাই। এ জীবন পরার্থে দান করিতেই তুমি ইঙ্গত করিতেছ। তাছাই হউক, তোমার ইচ্ছাই পুর্ণ হউক, বল দাও প্রভু – বল দাও ।” জ্যোতিৰ্ম্মীও বেশ স্বচ্ছন্দমনে গৃহে ফিরিলেন না। অন্ত দিন শরৎকুমারের অজ্ঞাতে র্তাহার উচ্চুসিত আনন্দ-বিকিরণ হইতে তিনি যে কণিকারাশি কুড়াইরা আনেন, সেই অালোকে অনেকক্ষণ ধরিয়া তাহার হৃদয় আলোকিত ক’রয় রাখে, কিন্তু অণজ তাহার পরিবর্তে একটা অন্ধকার বেদনা-ভার লষ্টখt সেখান হইতে তিনি বিদায় গ্রহণ করিয়াছেন । তাহাদের দুজনের মধ্যে এ কি কুয়াসার ব্যবধান আজ ! র্তাহার অন্ত:প্রাণ “হায় হায়” করিয়া উঠিল, কিন্তু তিনি তাহাকে সবলে কশাঘাত করিয়া—শাসনবাক্যে বারবার করিয়া কষ্টিতে লাগিলেন, “ভালই ত সে ভালই। রে অবোধ মন,—তুমি এত দিন যাহা চাহিয়াছিলে, ভগবান আজ তাহা গ্রাহ করিলেন, এখন দুঃখ করিলে চলিবে কেন ? তাহার মঙ্গলদান কৃতজ্ঞহৃদয়ে গ্রহণ করিয়া সুখ অনুভব কর । ব্যক্তিবিশেষের জন্ত হাঁ হতাশ করা তোমার