পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বপ্নবাণী তোমাদের অভিধানে কোন কথা যে শ্লীল এবং কোন কথাই বা অশ্লীল, সমস্ত পাণিনি শাস্ত্র উন্টে তা আমার কাছে ছজ্ঞেয় রয়ে গেছে । এ সম্বন্ধে আমি একেবারেই গওমুখ -একটা গল্প করব কুন্দ ?” . কুন্দ চুপ করিয়া রহিল,—তাহার আজ্ঞার অপেক্ষ না করিয়াই পণ্ডিত মহাশয় বলিলেন, “দেখ, একবার আমি একটি ব্রাহ্মবাড়ীতে পুরাণ-ব্যাখ্যা করতে যাই ।” ঐটেই যা আপনার আসে—কিন্তু সমিতি হওয়া পৰ্য্যন্ত । পুরাণপাঠও ত আপনি ছেড়ে দিয়েছেন।” “তবু ভাল,—আমারও এক জন মল্লিনাথ আছে ; কিন্তু তুমি যাই বল, মেমসাহেব সে দিন আমাকে বড়ই অপদস্থ করেছিলেন।” কুন্দ তাহার কথার ভঙ্গীতে না হাসিয়া থাকিতে পারিল না, হাসিয়া কহিল, “তার কি আর কোন নাম নেই ?” পণ্ডিত-মহাশয় উৎসাহিত হইয়া কহিলেন, “সত্যি কথা যদি বলতে হয়, তার বা তার স্বামীর আসল নাম যে কি, তা অামি ঠিক বলতে পারল না। যে বন্ধুটি আমাকে তাদের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি পরিচয় করিয়ে দেবার সময় মিসেস্ বটবাল বা ঘটকাল এই রকম কি একটা নাম যেন গিন্ধিঠাকরুপের বলেছিলেন ; কিন্তু সে নামটা আমার মাথা থেকে কপূৰ্ববৎ একেবারেই উপে গেছে। মনে আছে কেবল একটুকু যে, তার বাড়ীর চাকর-বাকররা মেমসাহেব ব'লে তাকে সম্ভাষণ করছিল।"

  • আচ্ছা বেশ ! এখন আসল গল্পে নমুন ।” “সে লজ্জার কথা আর কোন মুখে বলি ! অভিমন্ব্যবধ ব্যাখ্যার ভূমিকায় যেমন বলেছি যে, অভিমন্ত্র্য যখন গর্ভে ছিলেন, তখন পিতা-মাতার আলাপপ্রসঙ্গে তিনি ব্যুহপ্রবেশ-নিয়ম শিক্ষা করেছিলেন,–অমূনি মেমসাহেব ত্রস্তভাবে ছোট ছেলেমেয়েদের সেখান থেকে উঠিয়ে দিলেন,—আমার সহসা বাকৃরোধ হয়ে গেল, কি না জানি অজ্ঞানকৃত মহাপাপে এরূপটা ঘ’টলো বুঝে উঠতে পারলাম না ! ছেলেরা চ'লে যেতে মেমসাহেব বলেন, ‘ওরূপ খারাপ কথা ছেলেদের কাছে বলা ঠিক নয়।” আমার কণ্ঠতালুকা শুষ্ক হয়ে উঠলে,—মনে করতে চেষ্ট করলুম খারাপ কথাটা কি বলেছি। কিন্তু মস্তিক্ষ তখন শূন্ত, কিছুতেই তা বোধগম্য হোল না । পুরাণপাঠ ঐ-খানেই শেষ ক’রে আমার সে দিন চ’লে

ఇevరీ আসতে হোল । ভাই তোমাকে বলছি— তোমাদের শ্লীল ভাষার অভিধানখানা আমাকে তুমি পড়াবে কুন্দ ” “কি যে বলেন পণ্ডিত-মশায় ?” “না, আমি ঠিকই বলছি। আমি তোমার গুরু হ’তে চাইনে ; তুমিই আমার গুরু হও।” পণ্ডিত মহাশয়ের অমুরগিরঞ্জিত স্বর কুন্দের খারাপ লাগিল না ; এই শ্মশ্রীবহুল বিজ্ঞ ব্যক্তিরও যে তাহা হইতে গাম্ভীর্য নষ্ট হইয়াছে, ইহাতে সে বেশ একটু গৰ্ব্ব বোধ করিল। পণ্ডিত মহাশয় তাহার মৌনতায় সাহস পাইয়! আবার বলিলেন, “আমি প্রাণের কথা বলছি কুন্দ, তুমি আমার মন-অসনে দেবীরূপে অধিষ্ঠিত হও, নইলে আমার জীবন ব্যর্থ হবে।” নিজের এই উচ্ছ্বসিত বাগ্মিতায় পণ্ডিত-মহাশয় নিজেই অবাক হইয়া গেলেন, কুন্দও অসন্তুষ্ট হইল না, কিন্তু তুষ্টির ভাব গোপন করিয়া তুষ্ণীভাব ধারণ করিয়া কহিল, “কি যে বলেন আপনি ?” “বুঝতে পারছ না কুন্দ ! তুমি বিনা আমার জীবন বৃথা ।” কুন্দ হাসির ফেলিল, বলিল, “আমি বে ব্রাহ্ম পণ্ডিত-মহাশয়, আপনার জাত যাবে যে ” “তোমারি পাদপদ্মে জাত-ধৰ্ম্ম অনেক দিন মনে মনে অঞ্জলি দান করেছি কুন্দ ?” “কিন্তু আমি ত তা করি নি । থাকতে চাই।” হরি হরি | পণ্ডিত-মহাশয় এতক্ষণ নিজের দিকটাই দেখিতেছিলেন, কুন্দের তরফ হইতে এ-রকম আপত্তি উঠিতে পারে, তাহ মনেও করেন নাই। তাহার বিস্মিত মনের আবেগ হস্তের সাহায্যে শ্মশ্র রাশিকে ঘন ঘন দোল দিতে লাগিল। কিছু পরে বলিলেন, “ঠাট্টা করছ কুন্দ ।” “না ঠাট্ট নয়। দেখুন পণ্ডিত-মশায়, এরূপ কথা শোনা আমাদের অভ্যাস নাই, লজ্জা করে, অন্ত কথা বলুন।" পণ্ডিত মহাশয় ইপি ছাড়িয়া বাচিলেন, আপাততঃ দাড়ীবেচারীও নিস্কৃতি পাইল । তাহার পুরাতন কথা স্মরণ হইল। লজ্জা ভাঙ্গাইতে অনেকট সময় লাগিয়াছিল বটে, তার চেয়ে তবু এটা সহজ মনে হইতেছে। তিনি প্রকাশ্যে বলিলেন, “কিন্তু অনভ্যাসকেও অভ্যাসে আন চাই ত ।”

  • দরকার দেখি না ।” কিন্তু পণ্ডিত-মহাশয় নাছোড়বান্দা,—বলিলেন, “কিসের দরকার নাই ? প্রেমাম্রাগের ?”

আমি যে জাতে