পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*も8 কুন্দ হাসি চাপিয়া কহিল, “ধরুন তাই ?” *আরে—বিশ্বসংসার যে প্রেমে চলছে, তোমার আদেশ ত সে মানবে ন কুন্দ !” “কিন্তু নীরব ভালবাসাই শ্রেষ্ঠ ভালবাসা, ‘প্লেটনিক’ প্রেমই পবিত্র প্রেম। প্রকাশে তার মহাত্ম্য চ’লে যায়।” “তুমি কি স্বষ্টিলোপ করতে চাও কুন্দ ? এই বিশ্বসংসারই ত প্রেমের প্রকাশ ।” “কিন্তু, নীরবতায় কি প্রকাশ নেই ?” “থাকতে পারে—কিন্তু—কিন্তু স্বল্পবুদ্ধি মানব এখনো সে পাঠ শেখে নি। সেই জন্যই ভাব ভাষা চায়,—অনুরাগ মিলন চায়, আর জীবজগতে এই মিলনের পরিণতিই বিবাহ ।” এমন মুক্তকণ্ঠ কোর্টসিপ কুন্দের ভাল লাগিল ম। যে সময় বিবাহের নামে বেথুন স্কুলের মেয়েরা খড়গহস্ত হইয়া উঠিত—সেই সময়ে কুন্দ সে দলের মধ্যে এক জন প্রধান ছিল । অবস্থাচক্রে, বয়সে, জ্ঞানে, তাহার এই মতের হস্তিকারিত। সে বুঝিতে আরম্ভ করিয়াছে,—তবুও সে ভাব তাছার মন হইতে একেবারে মুছিয়া যায় নাই। পণ্ডিত-মহাশয়ের অনুরাগ-প্রকাশে তাছার মন আপত্তি বোধ করিতেছিল না, কিন্তু প্রকাশের পথটা একটু বাক হইলেই তাহার মনঃপূত হইত। সে বিরক্তির স্বরে কহিল, “পণ্ডিত-মশায় ও সব কথা বলবেন না, আমি মিনতি করছি ।”

  • কেন ? এতেও কি দোষ আছে ?” “অাছে !" “কিন্তু তোমার বাপ-মাও ত বিবাহ করেছেন ; তারা ত দোষ বিবেচনা করেন নি।”

কুন্দ এ কথায় সত্য সত্য রাগিয়া গেল—বলিল, *ধারা দোষ মনে করেন না, তারা ত বিবাহ করছেনই এবং করবেনই। আমি দোষ মনে করি,—আমি করব না।” পণ্ডিত মহাশয় হতাশভাবে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, “কি করবে তুমি ?”

  • দেশের কাজ করব ।” *আমিও ত সেই পথের পথিক ৷” “কিন্তু আপনার ভুল পথে চলেছেন,—আমাকে গুরুদেবের অঙ্কিা মেনে চলতে হবে ।”

পণ্ডিত-মহাশয় প্রমাদ গণিলেন । কুন্দের স্বরে —তাহার ভাবে-ভঙ্গীতে তিনি একটা দৃঢ়তা দেখিলেম । তাহার মন বলিতে লাগিল—কুন্দ কি একটী বিপদচক্রের মধ্যে পা দিতে বসিয়াছে—তিনি স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী কোর্টসিপ ভুলিয়া গিগা বলিলেন, “তুমি কি ক’রে জানলে যে র্তাদের পথ ঠিক ? “ঠিক জানি আমি । সন্তোষ-দী বলেছে।” তিনি বুঝিলেন, কুন্দকে এ পথ হইতে দূরে রাখা এখন তাহার সাধ্যাতীত, তাহীদের দলে প্রবেশ করিরাই তাহাকে রক্ষা করা ছাড়া অন্য উপায় নাই । বলিলেন, “বেশ, আমিও তোমার গুরুর শিষ্য হব। গুরুর দেখা পাব কোথায় ? কি করতে হবে ?” কুন্দ আহলাদের সহিত বলিল, “গুরু এইখানে শস্ব আসবেন বলেছেন। তখনই বুঝবেন কি করতে হবে, না হবে—আমি আর কিছু বেশী বলতে পায়ব না।” এই সময় দাসী আসিয়া বলিল, “রাজকুমারী অাজ পড়বেন নাই । আপুনি বাড়ী যাও গে।” পণ্ডিত-মহাশয় উঠিয়া দাড়াইয়। দীর্ঘনিশ্বাস সহকারে কুন্দকে বলিলেন, “চঞ্জেম তবে, গুরুদেব এলে যেন খবর পাই ।” সপ্তদশ পরিচ্ছেদ ম্যাজিষ্ট্রেট-ভবনে গিয়া আজ প্রথম জ্যোতিৰ্ম্ময়ী জানিলেন যে, তাহারা বদলি হইয়া প্রসাদপুর হইতে চলির ঘাইতেছেন। রাজকুমারী মৰ্ম্মাহত হইয়া পড়িলেন । গৃহে ফিরিয়া খানিকক্ষণ ধরিয়া কাদিলেন, তাহার পর বৈকালিক বেশভূষা খুলিয়া ফেলিয়া মন্দিরে ঘাইবার সাজ পরিয়া লইয়া কালীর পটখানি আনিবার জন্ত রাজার ঘরে গেলেন । তিনি তখন সে ঘরে ছিলেন না, পাশেই শরৎকুমারের ঘর, হয় ত বা এখন তিনি বারানাতেই আসিয়া বসিয়াছেন,—একবার বারনায় আসিয়া দাড়াইবার জন্য মন চঞ্চল হইয়া উঠিল। কিন্তু হাতের কালী-মুৰ্ত্তির দিকে চাহিয়া সেই বিষম পিপাসাও সবলে চাপিয়া লইয়া তিনি গৃহনিগুণন্ত হইয়া দিদিমার মহলে প্রবেশ করিলেন। দিদিম৷ মন্দির গমন উদ্দেশ্রে তখন বারানায় পদার্পণ করিয়াছেন—জ্যোতিৰ্ম্মীকে দেখিয়া, চরণ সংযত করিয়া কহিলেন, “আজ যে আমার রাধারাণীর অসময়ে উদয় ?--মন্দিরে যাবি বুঝি ? সাজসজ্জা যে সেই রকম ?” “হ্যা ঠাকুর-মা, অনেক দিন দেব-দর্শনে যাই নি, তাই আজ ইচ্ছে ছেলে। দেখ দেখি তোমায় জন্তে क् ि७रनहि ?*