পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/২১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১২ আর দলের লোকের নিকট ইহার ডাক নাম ক্ষেপ ভৈরবী । বারুণীর মাতা অরুন্ধতী আনন্দকল্যাণবধী মুগ্ধ দৃষ্টিতে ক্ষণকাল কঙ্গকে নিরীক্ষণ করিয়া দেখিয়৷ প্রসন্ন স্বরে বলিলেন, “বারু, দেখ দেখি কে এসেছেন ?” বারুণী গুচ্ছ প্রবেশ কালে.আশে-পাশে নজর দেয় নাই, এখন সচকিত দৃষ্টিতে মুখ ফিরাইয়া ভৈরবীকে দেখিয়া কুষ্টিত ও অপ্রসন্ন হইয়া পড়িল । ইহার সহিত কয়েক বৎসর পূৰ্ব্বে কাশীধামে অন্নপূর্ণমন্দিরে বারুণীদের দেখাগুন । সেই হইতে ইগরা যে ভৈরবীর কিরূপ সুনজরে পড়িয়াছেন, কলিকাতায় আসিলেক্ট ইনি একবার ইঙ্গদের দেখিতে আসিবেনষ্ট আসিবেন । ভৈরবী অর্থপ্রত্যাশী নতেন, অতএব অরুন্ধতী ইহাতে র্তাঙ্গার নিঃস্বার্থ দর্শনাকুরাগই দেখিতে পায়েন । কিন্তু বারুণী র্তাহার এই নিঃস্বার্থ স্নেহের মৰ্ম্মগ্রহণে একেবারেই অক্ষম । কারণ, যেরূপ বাহ্যিক রঙচঙে ভাবে বলিঙ্গদয় সহজে মুগ্ধ হয়, তাহার অভাব ইহাতে সম্পূর্ণ । ভৈরবীর চেহারাখনিও প্রিয়দর্শন নষ্ঠে, আর সাজসজ্জাও বেশ একটু কিস্থতকিমাকার । লামাদের ন্যায় মুণ্ডিত মস্তকে সদ্য-গজান সজারুব কাটার মত খোচা খোচা চুল আর রেখাবলী-ভর ছাইপাশ-মাখ মুথের মধ্যে গাজ-ধূমপানজনিত জলন্ত অঙ্গর সম রক্তবর্ণ দুই চক্ষু দেখিলেই বারুণীর প্রাণের ভিতব কেমন একটা তয়-শিহরণ উঠিত। তখন অরুন্ধষ্ঠী থালা সম্মুখে রাখিয়া একখানি আসনের উপর বসিয়া পান সাজিতেছিলেন। কিছু দূরে ঘরের কোণে আসনের উপর উপবিষ্ট ভৈরবী বাম হস্তে গাজা রাপিয়া ডান হস্তের আঙ্গুল দ্বারা তাহ মলিতে মলিতে বারুণীর দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া বলিলেন, “আয় কলকেমুখী বেটী, কাছে এসে ব’স " কলিকা হইল তাহার প্রাণদাতা গঞ্জিকার আধারবস্তু, অতএব অন্য কোন সম্বোধনে আীর তৎপ্রতি তাহার প্রাণের অনুরাগ এমন পরিক্ষারতাবে ব্যক্ত করিতে পারেন! কিন্তু ভৈরবীকে দেখিলেও যেমন বীরুণী বিরক্ত হয়, তাহার কথা শুনিলেও তেমনই তাহার গায়ে জাল ধরে । এমন কি, ঠাহীর আদরবাক্যও গালিগালাজের মতই তাহার সর্বাঙ্গে বিধিতে স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী থাকে। বরুণী বসিল না, চুপ করিয়া দাড়াইয়। রছিল, ভৈরবী তাছার হাতের গাজা কলিকার মুখে রাখিয়া তাহা নামাইয়া রাখিয়া, বারুণীর জঙ্গ আনীত টপ-কেীট। অন্বেষণে প্রবৃত্ত হইলেন । আলখাল্লার এই থলিটি তাহার সম্পত্তি-ভাণ্ডার ; যত কিছু প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিতে ভরপুর। তিনি চলিবার কালে ইঙ্গ জাহাজের পালের মতই ফুলিয় তাহার ক্ষুদ্র দেহটির অগ্ৰে অগ্ৰে চলে, অরি বসিলে উদরীরোগের আনুমানিক সিদ্ধান্তে ভক্ত-হৃদয় মমতা-পূর্ণ হুইয়া উঠে। তাহার আলখাল্লার এই চলন্ত মূৰ্ত্তি দেখিলে দশকের হাস্ত সংবরণ করা দুঃসাধ্য হইয় উঠে, কিন্তু বাস্ রে । হাসিলে কি আর রক্ষা আছে ! ক্রুদ্ধ অভিশাপবাক্যে তৎক্ষণাৎ তাহার লয়প্রাপ্ত হইবার সম্ভাবন । সাধারণ অশ্রাব্য গালিগালাজের বুলি যদিও তিনি ব্যবহার করেন না, কিন্তু তিনি বিড়বিড় করিয়া যাঙ্কা বলেন, অভিধান-অলব্ধ সেই দুৰ্ব্বোধ্য ভাষা তাহাকে অধিকতর ভীত করিয়া তোলে। ভৈরবী খুজিয় পাতিয়া বুকের ভিতর হইতে অবশেষে কোটাটি বাহির করিয়া বলিলেন, “আয় রে তুফান-তুলুনীর বেটী আয়, টিপ পরিয়ে দিই।” বারুণী নড়িল না। ম৷ বলিলেন, “যা, ভৈরবী মা’কে প্রণাম কর গিয়ে ।” এই সময় বাতাসী জ্বলন্ত টীকা অানিয় কলিকার উপরে রাখিল । যদিও ভৈরবীর আলখাল্লার মধ্যে চকুমকি প্রভৃতি আগুন প্রস্তুতের সরঞ্জমাদি থাকিত, কিন্তু গৃহস্ত-বাটীতে আপিলে তিনি নিজে আগুন জালাইতেন না । জ্বলন্ত গজার কলিকাটি বাতাসী তাহার হাতে ধরিয়া দিবামাত্র ভৈরবী টপের কোটা নীচে রাখিয়া দুই হাতে কলিকাটি ধরিয়া সজোরে একবার টান দিয়া ধোয়াট উড়াইয়ু দিলেন । কি বীভৎস-দৃশু ! বীরুণীর অসহ্য হইয়া উঠিল ; সে মৃদু স্বরে মা’কে বলিল, “ম, আমি রান্নাধরে যাচ্ছি।” ভরবী ভtহ শুনিতে পাইলেন । গাজার ধুম তখন তাছার মাথায় বেশ চড়িয়া উঠিয়াছে ; ক্ষেপ মেজাজে বলিলেন, “চ’লে যাওয়া হচ্ছে । কোথা ষাবি রে দেমাকী বেটী! আয় বলছি, নইলে ভাল হবে ন৷ ” অরুন্ধতী তীত হইয়া পড়িলেন। দুৰ্ব্বাস মুনির