পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২ হইতে পারে, ইহা মনে করিতেও তিনি সাতিশয় কষ্ট বোধ করিলেন । ইহার ফলে, উক্ত চৌর্য্য ঘটনার অপর যে একটা সম্ভাবিত দিক আছে, তাহাকেই প্রবলতর সম্ভাবনার ভিত্তিতে দাড় করাষ্টবার দিকেষ্ট র্তাহার ইচ্ছার গতি চালিত হইল। সুদক্ষ ব্যারিষ্টারের ন্যায় তৎপক্ষীয় মুক্তি-তর্কের অালোচনাপ্রবৃত্ত হইয়া তিনি কছিলেন,— "ছেলেরা এর মধ্যে লিপ্ত থাকা অসম্ভব নয়, লিপ্ত আছে ব’লেই মনে হয়,কিন্তু ষড়যন্ধী—আমার বিশ্বাস স্বজন রায় খুড়, ছেলেরা তার চর মাত্র । হরিরামের কথাই এ সম্বন্ধে আমার প্রমাণ ব’লে মনে হয় ।” গুণমাচরণ বললেন,-“কিন্তু প্রমাণ-প্রয়োগ ত তার কথtয় বেণী কিছু পাওয়া যায় নি ? “দরকার ছিল না । প্রসাদপুরের আদিরাজ সনাতন রায়ের ধর্ক সম্বন্ধে আমাদের বংশগত একটা প্রবচন অণছে, আপনি বোধ হচ্ছে তা জানেন না, জানলে হরিরামের কথার মধ্যে প্রমাণ-মুক্তির অভাব দেখতেন না ।” শ্যামাচরণ কৌতূহলাকা স্ত্র চিত্তে হস্তের চুরুট ছাইনানীতে রক্ষা করিয়া বলিলেন—“আপনাদের বংশে প্রবাদ প্রবচনের অভাব ত কিছু নেই ; তার মধ্যে কোনটি শুনেছি, -কেন্টি শুনি নি, তা ত এখন মনে পড়ছে না ।” বলিতে বলিতে র্দী ছাইয়া, গ্রামাচরণ র্তাহার চৌকিগান রাজার মুখামুখিভাবে একটু ঘুরাইয়া লষ্টয়া পুনরুপবিষ্ট হষ্টলেন । রাজা বলিলেন,-“সেই প্রবচনের সার ও সংক্ষেপ মৰ্ম্ম এই –সনাতন ধনুক বে-দখল হ’লে রাজ-বিভ্রাট ঘটলে এবং বিনি দখল করবেন, তিনিই রাজা হবেন । এখন জানেন ত রায়ুখুড়র মনটি কি ধাচে গড় । ঐ বাক্যটিকে বেদবাক্যের মত আঁকড়ে ধ'রে, চিরদিনই এ ধুত্ব কটি হাত করবার ফন্দীতে তিনি আছেন ৷” এই প্রসঙ্গে সহসা শ্যামাচরণ মনশ্চক্ষুতে দেখিলেন, প্রসাদপুরের মৃত একটি নর-বানরের প্রহরিমূৰ্ত্তি। মুঞ্জন রায় কর্তৃক উৎপীড়ননিযুক্ত উক্ত বনমামুখটি রাজ-হস্তে নিহত হয় । অতঃপর অতুলেশ্বরের প্রসাদভোগিরূপে এই বেশে সে দ্বারদেশের শোভ সম্পাদন করিতেছে । শুiমাচরণ সহস্তে কহিলেন,—“হ্যা, ফন্দীতে শকুনি মামাকে রায় মহাশয় হার মানিয়েছেন সন্দেহ নাই । তবে রাখে কৃষ্ণ মারে কে । কোন ফনীতেই স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী ত আপনাকে বা আপনার ধনুককে তিনি ঘায়েল করতে পারছেন না ।” হৃদয়ের কৃতজ্ঞতা রাঙ্গার নয়নে উথলিয়া উঠিল। তিনি উদ্ধদৃষ্টি হইয়া, মনে মনে সৰ্ব্বাস্তঃকরণে র্তাহার মঙ্গলময় ভাগ্যদেবতাকে স্মরণ করিয়া কহিলেন,— “চ্যা, রায় পুড়র এত উৎপীড়নের মধ্যেও আমি এবং আমাদের ধন্ত্রদেবতা উভয়েই যে এখনো টিকে আছি, এটা আশ্চর্য্যেব কথা বই কি ! জানেন ত, রাজ্যের লোকের বিশ্বাস, সনাতন ধনুক প্রাণবস্ত দেবতা–তার অঙ্গে হাত লাগিয়ে কোন শত্রুরষ্ট নিস্তার নেই ।” 叠 “কিন্তু এ বিশ্ব:স আপনার সংস্কার-অন্ধ খুড় মহাশয়কে ত বিচলিত করতে পারে নি ?” “বরঞ্চ চালিতই ক’রে আসছে। তিনি মনে করেন, তার ঘরে অধিষ্ঠানলাভের জন্য ঠাকুর ম’রে আছেন ; অতএব ঠাকুরকে জাগ্রত ক’রে তোলাই তঁর কর্তব্য কার্য্য। লোকে যদি নিজের নিশ্বাসফুৎকারে বিশ্বাসকে সজীব সৈনিক ক’রে না তুলত, তা হ’লে কি জগতে এত লাঠালাঠি মারামারি হতে পায়—এইটে ভাবুন দেখি ?” “ত ত বটেই। তবুও সে কথাটা সহজে মনে পড়ে না ।” “স্বজন খুড় গটতে শিখে পর্য্যন্তই বোধ হয় আমাদের উপর অগত্রমণ সুরু ক’রে দিয়েছেন, আর আমরাও বৰ্ম্ম এ টে দিব্যাস্ত্রকেও ব্যর্থ ক’রে আসছি। - অনাদির মা’র বিবাহের সময় কাকাবাহাদুরকে রায-খুড় কিরূপ বিপদে ফেলেছিলেন, শুনেছেন কি সে গল্প মহারাণীর নিকটে ?” শ্যামাচরণ আগ্রহসহকারে উত্তর করিলেন,-— “ন৷ ” “রায় খুড়ই এ বিবাহের সম্বন্ধ আনেন। পাত্র র্তারই দূরসম্পর্কীয় আত্মীয়, বর সভাস্থ হয়ে বস্বামীয়ে রায় খুড় বলেন, “রায়-বংশের পদ্ধতি অনুসারে বরকে ধমুক উঠিয়ে বল-পরীক্ষা দিতে হবে—সভাস্থলে ধনুক আনীত হোক।” উদ্দেশু অবশ্য বুঝেছেন । বর যাত্রীর সঙ্গে তার যে সব গুপ্ত লাঠিয়াল আছে, পথ থেকে তারা ধনুক লুঠ ক’রে নিয়ে যাবে।” এই পৰ্য্যন্ত বলিয়। রাজা একটি চুরুট মুখে লই৷ তাহাতে দেশলাই সংযোগে রত হইলেন। এই উপন্যাস-কাহিনীর শেষভাগে পৌছিতে শুীমাচরণ তথম এতই কৌতুহলাত্রান্ত যে, তাহার হার তামাকুখণর লোক ও রাজদৃষ্টাস্তে প্রলুব্ধতার লক্ষণ প্রকাশ না করিয়া অধীরভাবেই উপকথাশ্রবণলোলুপ