পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্প-প্রবন্ধমঞ্জুষা বার সেই মনমাতানে রূপ-সজ্জার তারিফ না করিয়া থাকিতে পারে না। সুমিত্রার পরণে লtলপেড়ে শাড়ী, গলায় পুথির মালা, কানে সোনার চাকতি, নাকে ঝুটা মুক্তার নাকছবি, হাতে রূপার বাউট, এন্তদ্ব্যতীত বাকী অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উলকিভূষণে ভূষিত। সহসা সুমিত্রার আবির্ভাব উপলব্ধি করিয়া, চমকিয়া কাস্তিচন্দ্র সেই দিকে চাহিয়া, ক্রুদ্ধস্বরে বলিল, “তুই এলি কোথা থেকে, চ'লে যা বলছি ! আমাকে বিরক্ত করিস নে।” সুমিত্র দাদাবীবুর বকুনিতে বিন্দুমাত্র ন৷ টলিয়া, উলকির উপর রসকলিকাটা 'চেপটা-চেপেটা মুখখান দেরীজের উপর প্রতিষ্ঠিত আরপির প্রতিবিম্বে একবার দেখিয়া লইয়া হাসিয়ু বলিল, “আহা মরি—সীতে ঠাকুরাণী অশোকবনে হায় হায় করছেন—শুনি বুক ফাটিকিরি উঠিছে ।” কান্তি আবার ক্রুদ্ধস্বরে বলিল –“হাসি হচ্ছে দেখ না, চ’লে যা বলছি এখান থেকে !” সুমিত্ৰ দমিবার পত্রিী নয়—বেশ সপ্রতিভভাবেই উত্তর করিল, "হামুছি না দাদীবাবু-কাল্লায় মোর বুক ফাটকিরি যাউছি –হায় রে সীতে ঠাকরুণ জনমজুখিনী জনক-কন্যে ।” কাপ্তিচন্দ্র আবার তাঁহাকে একটা তাড়া দিল— তাড়। থাইয়। সে অঙ্গুরোধের স্বরে বলিল - "দাদাবাবু গে, আর একবার গানটি বল না গে৷ ” এই সময় কান্তির একজন বয়স্ত যদি না আসিয়া দেখ দিত, তবে আরও কতক্ষণ ধরিয়! এইরূপ অভিনয় চলিত, কে জানে। নবাগতকে দেখিয়া, ঝুটির উপরকার অঞ্চলটা মাথার উপরে আর একটু টানিয়া দিয়া, তেলের বাতিটা মেজের উপর হইতে তুলিয়া লইয়। সে চলিয়া গেল। গৃহের বাহিরে গিয়াই এমন অপরূপ স্বরে হাসিয়া উঠিল যে, তাহ হাসি বা কাল্লা, নিপুণ দার্শনিকই তাহ বলিতে পারেন । বিনয় কাস্তিবাবুর কাছে জাসিয়া কুকিয়৷ টেবলের কাগজের দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া বলিল, *লিখছ তা হ’লে ? অামি তোমাকে তাড় দিতে এসেছিলুম-বন্ধু।”

  • এসেছে, বেশ করেছ—শোন দেখি, একবার— বল দেখি, কেমন লাগে ?”

বিনয় বলি, “একবারে রাত্রেই শোনা যাবে ; Հ8Ց একটু কাষ আছে-এখনি যেতে হবে ।” কান্তি চৌকি হইতে উঠিয়া—বন্ধুর হাত ধরিয়া তৈলমলিনতায় প্রতিদ্বন্দ্বিপরায়ণ পাশের চৌকিখানার উপর তাহাকে বসাইয়া বলিল --"ছোট্ট কবিতা, বেশী সময় যাবে না, শুনতেই হবে বিন । যদি তোমার ভাল লাগে, তবেই কম্পিটিসনে যেতে মন যাবে।” কবিতাটি সে মুরে-লয়ে-তানে আবৃত্তি করিয়া বন্ধুবরকে শুনাইল। শুনিয়া বিনয় মাথা নাড়িয়া প্রশংসিতদৃষ্টিতে কহিল, “হ্যা, হয়েছে ভাল, ছন্দটা ঠিক যেন রবিবাবুরই—আর অনেক কথাও এর মধ্যে র্তার,– অথচ ঠিক অনুকরণও নয়—আজি সভা থেকে নিশ্চয়ই তুমি উপাধিভূষিত হবে ; ভাল কথা, তারতলক্ষ্মীর বিজ্ঞাপনট কি দেখেছ ?” “ন, সময় কই ? কাগজখানাও ত আমি এখনও পাই নি ।” “প’ড়ে দেখিল তবে সুবিধামত । কাগজখানা--অামি এখন চলুম।” বিনয় চলিয়া গেল, সগৰ্ব্বে সানন্দে কাস্তি আর একবার কবিতাটা পড়িল –তাহার পর খাতথিান যথাস্থানে রাখিয়া বলিল, “আচ্ছ, এইবার দেখা যাক, কি খুৎ ধয়েন জমির বিদ্বষী ভগিনী—তার কাছ থেকে ত এক দিনও একটু মনথোল প্রশংসা পেলুম না। এণ্টেন্স পাশ করেছেন তিনি ফাষ্ট্র ডিভিসনে, এই গরবেই গেলেন প্রশংসা ব কিছু সব যেন তারই প্রাপ্য । আরে, কবিতা লেখা-- অীর পাশ করা কি এক কথা না কি ? পাশ হচ্ছে ত লাখো লোক— আর কবিতা লিখতে পারে ক’জন। তিনিও কবিতা লিখতে মুরু করছেন— তা যদিও বুঝতে পেরেছি— ছেড়াখোড়া ছ? একটা কাগজের টুকরতে তার নমুনা পাওয়া গেছে, ভাঙ্গ৷ টুকরিতে স্থান পাবারই তা জিনিষ বটে। যা হ’ক্‌, এটা যদি ভাল না বলে ত নিশ্চয় বুঝব Jealeusy ! – সেরেফ Jealousy ! তা ছাড়া আর কিছু নয় ।” রেখে যাচ্ছি R শাস্তির বিধবা মাতা শাস্তিকে লইয়। ভ্রাতার বাড়ীতেই থাকেন। কান্তিচজ শাস্তির মামাতে ভাই, উভয়ে প্রায় একই বয়সী, কাস্তি বছরখানেকের মাত্র বড়। এণ্টেন্স পরীক্ষা দিয়াছিল দুইজনে