পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/২৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্প-প্রবন্ধমঞ্জুষা এ বড় কঠিন ঠাই, কিন্তু শেলি-বায়রণের ন্যায় তাহার কবিত্ব-প্রতিভা যে সমালোচনী এবং সমালোচকের বহু উৰ্দ্ধে, নিন্দ-প্রশংসার অতীত অমরশক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত, ইহাই সে শাস্তিকে অনুভব করাইতে অাসিত । কান্তি যখন শাস্তির ঘরে ঢুকিল, তখন সে লিখিতেছিল। কাঞ্জিকে দেখিয়া তাড়াতাড়ি কাগজপত্রগুলা দেরাজবন্দী করিল—কিন্তু দীর্ঘ কাগজের লিথ পৃষ্ঠাটা কাস্তির নজর এড়াইল না । কান্তি হাসিয়া বলিল, “কি লিখা হচ্ছিল । আমাকে দেখেই অমনি ঢাক গুডু-গুড় । কাল বুঝি মেল-ডে 1" শান্তি হাসিয়া বলিল, “সে খবরটাও ত রাখ দেখছি।” কান্তি বলিল, “তোর জন্যে রাখিনে- অামার টিটবিটটা আসে ধে । কিন্তু কাল মেল আসবে —মেল যাবে ত সেই পরশু । বাস রে, কি বড় বড় চিঠি । ফেল করবি দেখছি তুই জামাইবাবুকে । কি যে মাথামুণ্ডু এত লিখিস, আমি ত ভেবেই পাই নে !” "আচ্ছা, তোমা; সময় আত্মক না, দেখা যাবে তখন তুমি কি কর ।” আমাকে এমন fool পাস নি। সে সময়ট। কবিতা লিখলে আমার পরকালের কাজ হবে। একটা নতুন কবিতা লিখেছি।--শোনু দেখি । ভাবসহযোগে কবিতা পাঠ করিয়া শাস্তির মুখের দিকে চাহিয়া সে জিজ্ঞাসা করিল, “কেমন লাগলো ?” শান্তি বলিল, “বেশ।* অপ্রত্যাশিতভাবেও কাস্তি এই উত্তরই প্রত্যাশা করিতেছিল। শান্তি ঠেকিয়া শিখিয়াছে, দাদার কবিতার প্রশংসা করিতে পারে না—তাই দাদা এমন চটিয়াছে তাহার উপর যে, লাইব্রেরীর বই একথান। চাহিয়। আর সে পায় না। আত্মরক্ষার প্রবৃত্তি মানুষের সর্বপেক্ষ প্রবল, অতএব আজ আর সে অপ্রিয় সত্য কথা কহিল না ; অfরও এক কথা, তাহার পূৰ্ব্বের কবিতা হইতে ইহা অনেক ভাল। কাস্তি শাস্তির প্রশংসালাভে অত্যন্ত আহলাদিত হইয়। বলিল, “বিনয়েরও এ কবিভাটা খুব ভাল লেগেছে ।” २80 “সেই আসল কথা । আমি আর সত্যি কবিতার মৰ্ম্ম কি বুঝি। শুনে কি বল্পে বিনয় ?” “সে ত একেবারে মসগুল ! বলে, ঠিক যেন রবি বাবুর কবিতাই সে শুনছে।" এতটা বাড়াবাড়ি শাস্তির সহ্য হইল না ; বলিয়া ফেলিল, “তোমরা দশে মিলে দেখছি রবিবাবুর অস্তিত্বটাই লোপ ক’রে ফেলবে ।” কাস্তি কিন্তু এ কথায় রাগ না করিয়া প্রসন্নমুখেই বলিল, “কি যে বলিস ? তার অনুকরণে র্তাকে ত আমরা বাড়িয়েই তুলছি।” “তা সত্য ! কাকের রব নইলে ত স্বৰ্য্য প্রকাশ হয় না। আচ্ছ, তোমার সে কবিতাটা ‘ভারতী কি নিয়েছে ?” “ভারতী ? সে হ’ল মেয়ের কাগজ, হাড়হুদ পক্ষপাতি ! যদি তোর নাম নিয়ে দিতুম, ত৷ হ’লে হয় ত বা নিত ” শান্তি হাসিয়া বলিল, “কোনও এক সময়ে মেয়ের কাগজ ছিল বটে ‘ভারতী’, কিন্তু এখন ত তোমার স্বজাতিরাই ‘ভারতীর সম্পাদক ।” “আমার স্বজাতিদের ত বিজাতির প্রতি আরও বেশী মায়, ‘ভারতীর পৃষ্ঠায় আমাদের আশাভরসা বড়ই কম - বলিতে বলিতে কাস্তির হাতের কাগজখানা হঠাৎ নীচে পড়িয়া গেল, সে তুলিতে গিয়া দেখিল—আরও একখান কাগজ সেখানে পড়িয়া আছে । শাস্তির খাত হইতে সেখান নীচে পড়িয়া গিয়াছিল, শান্তি তাহ। লক্ষ্য কয়ে নাই। কাগজখানা হাতে লইয়। কাস্তি বলিল, *এণ্ড যে কবিতা, তুইও দেখছি আমার দেখাদেখি কবিতা লিখতে ধ’রেছিস্ -ত তাল।” শাস্তি অকুনয় করিয়া কাগজখানা ফিরিয়া চাহিল, কাস্তি না দিয়া পড়িতে আরম্ভ করিল “সত্য কহি সখি সভ্য কহি, চঞ্চল বায়ু আমি চপল নহি । আমি-ভালবাসি ভালবাসাতে ভালবাসি সবে হাসাতে পুলক রঙ্গ ভাসাতে আমি অধীরে বঙ্কি । আমি কাহারও দুঃখ ভুলি না, কাছারে কভু ত ছলি না,