পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন-রাত্রি চেকবই আমি যখন বার করি,সন্তোষ তথন তা দেখেছিল এবং পরে কোন সময়ে এসে সেখান যে চুরী ক'রে নিয়ে গেছে, তাতেও সন্দেহ নাই। কিন্তু পিস্তলট চুরী ক’রে তোমার বাক্সে রাখার উদ্ধেশ্ব কি ?” শুামাচরণ কহিলেন, তোর সঙ্গে কি তার শত্রুতার কোন কারণ ঘটেছে ?” “কই, আমি ত কিছুই জানি নে। তবে তাদের সমিতিতে যোগ দেবার জন্য সে অামাকে দেখা হ’লেই ডাকৃত, আমি তাতে রাজি হই নি । এতেই যদি তার কাছে অপরাধী হয়ে থাকি।” হঠাৎ শরৎকুমারের মনে পড়িল, সেই সন্ন্যাসীকে, তাহার সহিত এ ঘটনার কিছু যোগ আছে না কি ? বিচিত্র কি ? কিন্তু এ কথা শরৎকুমার বাহিরে প্রকাশ করিলেন না- কেন না, রাজকুমারী এ সংস্রবে জড়িত । গুমারণ বুলিলেন, “স্পষ্টই ত তা হ’লে বোঝা যাচ্ছে, কেন সে তোমার শত্র হয়েছে ! বিপ্লবপন্থী ওরা, সোজা লোক ত নয় ? তোমাকে যে ওরা খুন ক’রে বসে নি, এই ঢের - এখন যা’ বাবা, কাপড়চোপড় গুছিয়ে ফেলগে " শরৎকুমার বলিলেন, —“যাচ্ছি, মামা, কাপড় গোছাতে আমার সময় বেশী লাগবে না, আপনি আশ্বস্ত থাকুন--আমি ঠিক সময়েই দেওয়ানের সঙ্গ ধর্ব " তাহার পর রাজার উদ্দেশে কছিলেন, *আপনার পিস্তল আপনিই রাখুন তবে, আমি প্রসাদপুর যাচ্ছি – দেখি, সন্তোধের কাছ থেকে এ সম্বন্ধে কিছু খবৃর আদায় করতে পারি কি না ।” রাজা বলিলেন, “না, পিস্তলট। তুমিই কাছে রাখ--যে রকম যড়যন্ত্র চলেছে দেখছি তোমার সতর্ক থাকা উচিত ।” শরৎকুমার পিস্তল উঠাইয়া লইয়া মৌখিক ধন্যবাদ না দিয়া নীরব নমস্কারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিলেন। হামাচরণ শরৎকুমারের পুৰ্ব্বকথার উত্তরে কহিলেন, “শুধু এ পিস্তলরহস্তের কথা নয় - অনেক কথাই তা’র কাছ থেকে আদায় করতে হবে--- বুলি, বাবা ? এখন সারিয়ে তোল ত তাকে আগে সেখানে গিয়ে ।” রাজা বলিলেন,—“হ্যা, যমের সঙ্গে লড়াই করার জন্তই আপাততঃ প্রসাদপুরে তোমাকে পাঠান হচ্ছে, ডাক্তার, বিয়েটার পরে আমরাও গিয়ে পড়ব ।” হামাচরণ বলিলেন, “দেখিস্ যেন হার মানিস নে, বাবা, তা হ’লে আমার মাথা ষ্টেট হ’বে—বুঝলি లS ত ? বিয়ের সময়টাই ঠিক তোর চ'লে যেতে হচ্ছে— অণুভার মনে খুবই দুঃখ হবে, কিন্তু উপায় ত নেই।” শুiমাচরণের নিজের মনে যে ইহাতে কতটা দুঃখ হইতেছে, সে কথা আর তিনি বলিলেন না । কিন্তু শরৎকুমারের তাহা বুঝিতে বাকী রহিল না। একটা বিধাদের ছায় তাহার মনেও ঘনীভূত হইয়া আসিতে লাগিল । হাসির আবরণে সে ভাব চাপিয়া তিনি বলিলেন, “আমি অণকে বুঝিয়ে বলব এখন। আর দেরী কর্ব না, মামা, আমি চলুম,- কাপড় গুছিয়ে এখনই আবার আসছি।” তার পর সলজ্জ দৃষ্টিতে রাজার দিকে চাহিয়৷ আধোবাধে ভাবে তিনি কহিলেন, “মতির মালাগাছটিও তা হ’লে নিয়ে যাই,—রাজকুমারীকে ফিরিয়ে দিয়ে প্রসাদপুরে বাবার কথা তাকে ব’লে আসি ।” শরৎকুমার মাল। লহুয়া মৃদুহাস্তে ক্ষিপ্রপদে চলিয়া গেলেন,– রাজা গুtমাচরণকে বলিলেন,— “দেখুন, গাঙ্গুলি-মহাশয়, প্রসাদপুরের অস্ত্রচুরীর খবর এখন পুলিসকে জানিয়ে কায নেই– খবরের কাশজে ও বিজ্ঞাপন দেওয়া এখন বন্ধ থাকৃ। আমাদের বিরুদ্ধে একটা যে ষড়যন্ত্র চলছে, সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে—কিন্তু কি রকম ধরণের সে ষড়যন্ত্র, কোথা থেকে তার উৎপত্ত্বি - ব ত দিন তা না জানা যায়— তত দিন খুব সাবধানে চলতে হবে । পুলিস এখন এ খবর পেলেই—প্রথমে সন্দেহ করবে শরৎকুমারকে এবং তার গ্রেপ্তারেই পুলিসের কৰ্ত্তব্য শেষ হ’বে ।” গু|মাচরণ ব্যস্ত হইয়া বলিলেন,—“তবে আমি চলুন- যে ছোকরাকে বিজ্ঞাপন গুলা দিয়েছি—তার কাছ থেকে এখনই সেগুলো ফেরত নিষ্ট গিয়ে । অবশু সে বিজ্ঞাপন কাল যাবার কথা—আজি না,— তবুও সাবধানের মার নেই।” শু্যামাচরণ চলিয়া গেলে রাজা রেলিঙের নিকট আসিয়া দাড়াইলেন । তখন হ্রদের পরপারে অতল দিগন্ততলে স্বৰ্য্য-গোলক ডুবিয়া পড়িয়াছে – মৃতপতির অমুগামিন সিন্দূরসীমস্তিনী সতীর দ্যায় শীত-অপরাহু বেপা, শেখ গৌরবে হাসিয়া উঠিয়াছে। কাননের তরু-শিখরে, হ্রদের জলে, প্রস্তরমূর্তির আননে ক্রীড়মান রক্তিমাছটা ধীরে ধীরে যুদ্ধ হইতে মৃদুতরভাবে সাম্রাহের ছায়ালোকে কিরূপ অপরূপভাবে আত্মলোপ করিতেছিল, রাজা দাড়াইয়া স্তন্ধভাবে সেই শোভা দেখিতেছিলেন । জ্যোতিস্ময়ী আসিয়া পিতার কণ্ঠলগ্ন হইয়া তাহার ধ্যানভঙ্গ