পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిషి করিলেন । কিছু পরে শরৎকুমারও অনাদির সহিত প্রসাদপুরযাত্রার পূৰ্ব্বে তাহার বিদায়-পদধূলি লইবার জন্ত আগমন করিলেন । একমাত্র অনাদি প্রসাদপুরের চৌর্য্য-রহস্ত ভেদ করিতে সমর্থ হইয়াছিল । এখন প্রসাদপুর মে শরৎকুমারের পক্ষে নিরাপদ স্তান নতে, ইহা সে ভাল করিয়াই বুঝিল । কিন্তু শপথে তাহার মুখ বন্ধ, কোন কথা স্পষ্ট করিয়া খুলিয়া বলিবার যে নাই ; বন্ধুর এই সম্ভাবিত বিপদে নীরব রক্ষিকপে সে তাহার अझ्यांढौ झझेल । ত্ৰৈয়োদশ পরিচ্ছেদ শরৎকুমার সন্তোধের বাম বাহুমূল পরীক্ষা করিয়া বুঝিলেন, পিস্তলেব দ্বারা সে আহত হয় নাই । ক্ষতলক্ষণে কোনরূপ বিস্ফোটক দ্রব্যের আঘাতই প্রতীত হয়। ঘটনাস্থলে তৎক্ষণাং হাতটা কাটিয়ে দিলে সে বঁাচিতেও পারিত—কিন্তু এখন সে ক্ষষ্ঠ যে ভাবে আবক্ষঃ বিস্তার লাভ করিয়াছে, তাহাতে সে অাশা অল্প ; - তথাপি বাহুচ্ছেদ ছাড়া তিনি অন্ত কোন উপায় দেখিলেন না । অপারেসনের পর প্রায় সপ্তাহকাল কাটিয়া গিয়াছে। রোগীর অবস্থা আজ অল্প ভাল, মাঝে মাঝে সে চেতনালাভ করিতেছে, কিন্তু মানুষ চিনিবার শক্তি এখনও ফিরে নাই, কথাবাৰ্ত্তাও খুব এলো-মেলোঁ । একবার চক্ষু মেলিয়। অনাদির দিকে চাহিয়া সে বলিল,— গুরুদেব ?” অনাদি এখানে আসিয়া অবধি তlহার সেৰায় নিৰুক্ত আছে। হাসপাতাণের দুই এক জন কম্পাউণ্ডার সহকারী মাত্র, মাঝে মাঝে আসিয়া অনাদিকে অব্যাহতি প্রদান করে। ডাক্তারের অাদেশে বাহিরের লোকের এপানে একেবারেই rপ্রবেশ নিষেধ। সস্তোষের দলের লোক এ পর্য্যন্ত কেহ জানে, না যে, সে পীড়িত অবস্থায় হাসপাতালে পড়িয়া অাছে,– সকলেই জানে সন্তোষ রাজার কাছে, কলিকাতায় । অনাদি সন্তোষের মাথায় হত বুলাইতে বুলাইতে উত্তর করিল,-“কি সন্তোষ ভাল আছে ত ?” সে প্রশ্ন রোগীর মাথায় পৌছিল না—সে পূৰ্ব্বের ছায় বিজড়িত অস্পষ্ট স্বরে কহিল,—“দেশশত্ৰু শরৎকুমার-মেরেছি তা’কে গুরুদেব ।” স্বর্ণকুমারী দেবার গ্রন্থাবলী বলিতে বলিতে তাহার চক্ষু আবার বুজিয়৷ আসিল। কিছু পরে পুনরায় চোথ খুলিয়। সে বলিল, *আপনার আদেশ পালন করেছি—সে মরেছে।” উগ্র আঙ্গলাদে সে হাসিতে চেষ্টা করিল,—পারিল না- হাসির ভঙ্গীতে তাহার মুখ বিকৃতভাব ধারণ করিল। অনাদি ব্রাণ্ডি-মিশ্রিত ঈষদুষ্ণ দুগ্ধ তাহীর মুথে প্রদান করিলেন, পান করিয়া সে নিঝুম রহিল,— সে দিন আর কোন কথাই কহিল না'। শরৎকুমারকে মারিবার উদ্দেস্যে বোমা প্রস্তুত করিতে গিয়া তাহার দ্বারাই সে সে নিজে ঘায়েল হইয়াছে, সস্তোষের কথা হইতে অনাদি ও ডাক্তার উভয়েই তাহা সুস্পষ্ট বুঝিলেন। দ্বিতীয় দিন শরৎকুমার আসিয়া তাহাকে ঔষধ দিবার পর সহসা সে বিছানায় উঠিয়া বসিল,— তাহাকে দেখিয়া বিকৃতকণ্ঠে বলিল,—"কে তুমি —শু: ১৫ নম্বর ?” শরৎকুমার মস্তকের ইঙ্গিতে মৌনে তাহার কথায় সায় দিয়া ধীরে ধীরে তাহাকে পুনরায় বিছানায় শোয়াইয়া দিলেন। সে কহিল,— “বিজুমিএল, জন্ম ভবানী,—-জালীও লণ্ঠন,—দোলাও নিশান,--” শরৎকুমার বুঝিলেন,- লণ্ঠন অর্থে স্বাধীনতার আলোক, তিনি প্রত্যুত্তরে কহিলেন,—“জয় জয়— জালো আলো—” এ কথায় তাহার মুখটা প্রফুল্ল হইয়া উঠিল, কিন্তু ওষ্ঠ ধরে অল্প একটু হাসির রেখাপাত হইতে না হইতে তাহার নয়ন মুদ্রিত হইয়া পড়িল । সহসা আবার কিছু পরে জাগিয়া সে বলিয়া উঠিল “সে কাগজখান ?” “কি কাগজ ?” “বুঝতে পার না,——রজার— রাজার ” বলিয়া আবার নীরব হইয়া পড়িল। শরৎকুমার ও অনাদি উভয়েই উৎকণ্ঠিত হইয়। ভাবিলেন— রাজার কি ন জানি কাগজ সে আত্মসাৎ করিয়াছে। কিন্তু সে দিন তাহার নিকট হইতে আর কোন কপাই পাওয়া গেল না । তৃতীর দিন সকালে ক্ষতস্থানে ঔষধাদি দেওয়ার পর সে বেশ যেন প্রকৃতিস্থ হইয়া উঠিল। ডাক্তারের দিকে পূর্ণকটাক্ষে চাহিয়া কেমন যেন অস্বস্তি বোধ করিতে লাগিল। ডাক্তার বুঝিলেন,- উহাকে সে চিনিবার চেষ্টা করিতেছে এবং এই প্রয়াস শ্রম তাহার দুৰ্ব্বল মস্তিষ্ককে এখনই ক্লাস্ত করিয়া তুলিৰে, তিনি তাহার চক্ষুর আড়ালে গৃহের অন্যত্র সরিয়৷