পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন-রাত্রি লাগিয়ে দিলে ! তোমার কি ফের অস্বথ করেছে ? আবার বাড়ী যাবে না কি, তা হ’লেই ত সৰ্ব্বনাশ ।” কুন্দের বিষঃ মুখেও কৌতুকরেখা ফুটিল। মৃদুহাসি হাসিয়া সে কহিল, “না, সে সব কিছু না—” “তবে কি ?” “আমার দাদা ও সন্তোষদাদাকে রাজাবাহাদুর কৰ্ম্মচ্যুত করেছেন।” “কেন ? কি অপরাধে ?” “অস্ত্রশাল থেকে বন্দুক-টন্দুক কি সব না কি চী গেছে ।” 漫 পণ্ডিত মহাশয় ভাবিতভাবে কহিলেন,—“তোমার দাদার এমন মোটা মাইনের চাকরীটা গেল । ভাববারই ত কথা ।” “কিন্তু দাদা ত আর চুরী করেন নি। তবে র্তার এ সম্বন্ধে কতকটা গাফেলি হয়েছে বটে । সন্তোষদা না কি – তার ছেলেছোকরা বন্ধুলাস্কবদের নিয়ে অস্ত্রশালায় আডড কর্ত। তা’ দাদ। কি ক’রে জানবেন যে, ভদ্রলোকের ছেলেরা চোর হবে।” “তা ত ঠিক - “এই কথা যদি রাজাবাহাদুরকে কেউ বুঝিয়ে বলে!” “তোমার দাদা কি তা বলেন নি ?” কুন্দ একটু চটা মেজাজে কহিল,—“তিনি কি বলেছেন না বলেছেন, আমি জানিনে— সম্ভবত: বলেছেন,–কিন্তু ফল ত কিছুষ্ট হয় নি। এখন সুপারিসই একমাত্র শেষ উপায়!” “তুমিই ত রাজাবাহাদুরকে বলতে পার ” “সাহস হয় না,—পণ্ডি ১ মহাশয় ; আপনি বলুন।” সামুনম্নকণ্ঠে কুন্দ এই অনুরোধ করিল। কিন্তু পণ্ডিত নয়ন বিস্ফারিত করিয়া বিস্ময় প্রকাশ করিলেন – “আমি রাজাবাহাদুরকে বলব ! আমি যে কখনও মুখ তুলে তার দিকে চাই নি! বেশ মুরুবিব ধরেছ, কুন্দ ” “তবে রাজকন্যাকে বলুন। তা’ ত পাবেন ? তিনি যদি রাজাবাহাদুরকে বলেন—তবে দাদা নিশ্চয়ই মাপ পাবেন।”

  • কেন, রাজকন্যা ত তোমারষ্ট প্রিয়সখী, কুনা বলতে তিনি অজ্ঞান—তুমিষ্ট বল না।”

“ন, আমার ভাইয়ের কথা বলতে আমার লজ্জা করে, বিশেষ তিনি যখন কতকটা দোষী ।” আসল কথা, কুন্দ মনে মনে সন্তোষকে সন্দেহ S& করিতেছিল, সেইজন্ত রাজকন্যার নিকট এ প্রসঙ্গ উত্থাপনে তাঙ্গর সাহসে কুলাইতেছিল না। পণ্ডিত মহাশয় বলিলেন, “আচ্ছ,বেশ। আমিই তবে রাজকুমারীকে বলব,— এখন পার্থীকে নেও একটু ? “কুন্দ-কুন্দ ক’রে চেচেয়ে ওর গল যে ভেঙ্গে গেল, একটু আদর কর ওকে ৷” পণ্ডিত মহাশয় কথা কহিতে কহিতে দাড়ির পরিবর্তে অনবরত এতক্ষণ পার্থীটির মাথায় হাত বুলাইতেছিলেন, সে কখনও ঘাড় পাতিয়া নীরবে আরামটা উপভোগ কবিতেছিল, কখনও বা মাথা তুলিয়া নাচিতে নাচিতে ‘কুন্দ কুন্দ’ বলিয়া ডাকিয়া উঠিতেছিল, কুন্দের এতক্ষণ সে দিকে কিছুমাত্র মনোযোগ ছিল না ; পণ্ডিত মহাশয়ের কথায় হাসিয়া সে এইবার পার্থীটিকে ভস্তে গ্রহণ করিল, পার্থীট আদর-প্রত্যাশায় মাথা নীচু করিয়া দিল, কুন্দ তাহার মাথায় হাত বুলাইতে লাগিল । পণ্ডিত মহাশয়ের বহুদিন প্রত্যাশিত মনের আকাঙ্ক্ষণ সহসা যেন পুর্ণ হইল, এই চিত্রের দিকে অনিন্দ-নিনিমেধনয়নে তিনি চাহিয়া রহিলেন । কিন্তু মৰ্ত্তোর আনন্দ চিরদিনই ক্ষণস্থায়ী ; সহসা মোটরের ভেঁপুর শব্দ র্তাহীদের কর্ণে প্রবেশ করিল। কুন্দ ব্যগ্রভাবে বলিল,—“রাজকন্যা আসছেন ; যান, পণ্ডিত মহাশয়, এই বেলা যান : র্তা’কে এই বেলা ধ’রে পড়ন ।” পণ্ডিত মহাশয়ের তখন যষ্টিতে মোটেই ইচ্ছা করিতেছিল না, এই শুভক্ষণে যখন প্রেমালাপের জন্ত র্তাহার প্রাণ হাঁপাইয়া উঠিতেছে — তখনই কি না দৈনিক প্রথায় বিদারের কড়া হুকুম ! পণ্ডিত মহাশয় ক্ষুঃচিত্তে কহিলেন,—“যাচ্ছি কুন্দ, এত তাড়াতাড়ি কি, তিনি ঘরে বসুন,— আমি তা’কে গিয়ে বলছি।” কুন উৎকষ্ঠিত আবেগে বলিল, “তিনি ধরে আসবেন কি হাসিকে নিয়ে বাগানে বসবেন, কে জানে ? তখন আর সুবিধা পাবেন না - যান— পণ্ডিত মহাশয়, এখনি ধান—অ1র দেরী করবেন Fil " পণ্ডিত মহাশয় দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া পাগীর উপর ঝুঁকিয়া অশ্রীপুর্ণ দাড়িটা তাহার ঘাড়ে আদরভরে ঘসিয়া দিলেন । এই অবসরে তাহার অলিম্বিত শ্মশ্রীর অগ্রভাগ কুন্দের হস্ত স্পর্শ করিল, তন্মধ্য দিয়া তড়িৎ-প্রবাহ বাহিত হইয়াছিল কি না কে জানে । কিন্তু মুখ তুলিয়া পণ্ডিত মহাশয় তাহার কোন লক্ষণ দেখিলেন ন; ; পার্থীকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন,