পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

.মিলন-রাত্রি নিয়োজিত এই অপরূপ-রূপা রূপরাণীর হস্তধৃত ভাগ্যদও ? এ দণ্ডস্পর্শে র্তাহার ভাগ্যও যে এক দিন ঘূরিয়া যাইতে পারে—এ কথা কিন্তু রাজার মনে উদিত হইল না । রাজা দাড় টানিতে ভুলিয়া গেলেন, তাহার হাতে স্তব্ধমুগ্ধ অনাহত দাড়ের উপর দিয়া হ্রদের রজতধারা ছলকিয়া যাইতে লাগিল। অদূর হইতে সহসা সঙ্গীতধ্বনি উঠিল,— “আমি বাধলাম গান— হোলো না ত গান গাওরা ।” হাসি এতক্ষণ হাল ধরিয়া নীরবে আকাশের উজ্জল ছবিখানির দিকে চাহিয়াছিল, গান শুনিয়া উৎকর্ণ হইয়া বলিয়া উঠিল,—“কে গান গাচ্ছে ? বেশ ত গলা ।” রাজা সচকিতভাবে জলে দাড় ফেলিয়! বলিলেন, —“কেউ গাচ্ছে না কি ? আমি ত শুনতে পাচ্ছিনে।" হাসি বলিল,—“না আমিও আর শুনতে পাচ্ছিনে, গান বন্ধ হয়ে গেছে।” রাজা সজোরে দুই এক বার দাড় ফেলিয়া বলিলেন, “হাসি, তুমি একটি গান গাও না—” হাসি হালটা দোলাইয়া কছিল,—“কি যে আপনি বলেন ? আপনি একটি গান ।” রাজা একবার আকাশের চন্দ্রকলার দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া পুনরায় মর্ত্য-চন্দ্রের দিকে চাহিয়া একটু হাসিয়৷ বলিলেন,- “কেন, মন্দ ত কিছু বলি নি, তুমি এক দিন এই হ্রদে নৌকা চালাতে চালাতে যে গানটি গেয়েছিলে, গাও না সেই গানটি হাসি—” হাসি সাফ জবাব দিল –“মনে পড়ছে না—সে গান। আপনি একটি গান্‌ ৷” রাজা হাসিয়া বলিলেন,--“তোমার আদেশ অবগুই পালনীয়, – কিন্তু আনন্দ-সঙ্গীত আমার ত কিছু মনে আসছে না ।” হাসি বলিল –“না-ই আম্বক- যে গান আপনার মনে আসছে, তাই গান।” দিবালোকের শেষ কণাটুকুও সহসা স্তিমিত হইয়। পড়িল ৷ শীতসন্ধ্যাকে ৰসস্ত অকুল করিয়া, অfকাশের শশিকল তাহার কোমল মধুর ছটা সকৌতুকে হাসির অঙ্গে ছিটাইয়া দিল। কি যেন একটা বিস্তুত স্মৃতি রাজার মনকে কুয়াসাচ্ছন্ন করির ফেলিল, সহসা তিনি কেমন যেন উন্মনা হইয়া পড়িলেন --- হাসির দিকে আর না চাহিয়াই আনমনে যুদ্ধস্বরে গান ধরিলেন— |రిసి “ভেসেছি স্রোতের টানে কুলে কি অকুলে কে জানে ? তরঙ্গ-ছন্দে কুহক আনন্দে মনতরী চলে বেগে বাধা না মানে ৷” সহসা তাহার হাতের দাড় ইঙ্গ-পাশ্বের কুলভূমিতে লাগিয়া নৌকাখানাকে একটু সরাইয়া দিল । হাসি কিন্তু বেশ প্রকৃতিস্থভাবে হালটা টানিয়া রাখিল । রাজা অপ্রস্তুতভাবে দাড় ঠেলিয়া নৌকা ফিরাইয়া লইলেন - র্তাহার গান জমিতে না জমিতে তাহ বন্ধ হইয়া গেল। হাসি একটু হাসিয়া লইয়া কহিল, —“থামলেন কেন । গান না--বেশ চমৎকার গানটি ।” রাজাও হাসিয়া হাসির অনুকরণে কহিলেন,--- “মনে পড়ছে না।” হাসি কহিল,—“আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি—

  • দাড়ে দাড়ে বাজে চঞ্চল স্বর,

গতির নেশায় মতি ভরপুর ; কে জানিতে চায় চলেছি কোথায়— পাতালতলে বা বিমানে—?” রাজা কুতূহলী হইয়া কহিলেন,—“তার পর ?” হাসি কহিল,- “অtল আমার মনে নেই, এবার আপনি- গান্‌— ” রাজা গাহিলেন-- ঐ ডাকে নিশীথের লাশী । আসি আসি আলি--এই আমি আসি । চল চল নেয়ে, আরো বেগে পেয়ে, ঐ যে আলোক ঝলক হানে— কোন অজানায় কে জানে । রাজার উচ্চুসিত গানের স্বরে আকাশের চাদ যেন নেশায় বিহবল হইয়া হ্রদের বুকের মধ্যে র্কাপিয়৷ কাপিয়া উঠিল । হাসি কিন্তু গানটা শেষ হইলে, বেশ অটল স্থির সংযতভাবেই ধীরে ধীরে কহিল,— “গানটি আমি রাজকুমারীর মুখে অনেকবার শুনেছি ; আপনারই রচনা না ?” রাজা বলিলেন,—“কষ্ট, আমি ত রাণীর মুখে এ গান কোনো দিন শুনি নি ?” তখন নৌকাখানা হ্রদের এক প্রান্তে আসিয়া পড়িয়াছিল হাসি হালের মুখ ফিরাইতে ফিরাইতে কহিল,--“আচ্ছা, আপনি প্লাজকুমারীকে রাণী বলেন –কিন্তু—কি স্তু— ”