পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন-রাত্রি ভালবাসিয়াছেন, যাহার প্রত্যাথ্যান তাহঃকে মৃত্যুদণ্ড দান করিয়াছিল – অীজ বাস্তবিকই সে তাহার কে? তাছার বিস্মৃতিতেই ত তিনি নব-জীবন লাভ করিয়াছেন,—ইহা যে সত্য কথা । তবু কেন সেই অতীত প্রেমরূপার সান্নিধ্য র্তাহাকে এমন অভিভূত করিয়া তুলিল ! প্রাক্তনসংস্কার-মোহে নব-জীবনের প্রকৃত সহজ ভাব এমন ভারগ্রস্ত, অপ্রকত, অবনত হইয়া পড়িল । কিন্তু হাসির অনর্গল উচ্ছ্বসিত বাক্যে র্তাহার মনের এ ভারও ক্রমশঃ কমিয়া আসিতে লাগিল । সে আবার বলিল,-—“বল না, শলদা ?” তখন তিনি প্রকৃতিস্থ ভাবেই মুছ হাস্তে উত্তর করিলেন, “কি বলব ?” "এতদিন ধ’রে একটি দিনও কি দেখা দিতে নেই ?” “তুমি যে দেখা করতে চাও, তা ত মনে হয় f?” “বটে ! বেশ যা হ’ক্‌ ! আপনি ভুলেছেন ব’লে কি সবাই ভুলবে না কি –কিন্তু আমি ত ,—যে-—* হাসি থামিয়া গেল, শরৎকুমার একটু হাসিয়া বলিলেন,--“কি চাও না তুমি, হাসি ?” "আপনি যে আমাকে ভূলে যাবেন — এটা আমি মোটেই চাইনে,—বুঝলেন ত । আমাকে বোন্‌ ব’লে— বাল্যদর্থী ব’লে চিরদিনই আপনার মনে রাখতে চলে ।” শরৎকুমারের হাসি ঠোঁটে মিলাইয় গেল, একটু থামিয়া থামিয়া বলিলেন, “তা কি নেই মনে কর গ” হাসির সাফ জবাৰ—“করি বষ্ট কি,- খুবই করি। বলুন, শরদা–কথা দিন---এই অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করবেন না ?”

  • আমি ত মনে করি, এ কথার উত্তর দেবার কোনো দরকার নেই।”

“আছে,--বলুন তবুও, শরদা, আমাকে আপনার সুখ-দুঃখের সব কথা মন খুলে বলবেন ; কথা দিন,--বলুন ।” শরৎকুমার বাহিরের দিকে মুখ ফিরাষ্টয়া একটু গভীর স্বরেই এ কথার উত্তরে কন্সিলেন,—“আমার মুখ-দুঃখ কিছু নেই ত হাসি।” হাসি এবার রাগ করিয়া কহিল,- "ছ’জনেই সমান, কেউ কিছু বলতে চায় না,-আচ্ছ, বেশ, নাই বলেন। আমি সব জানি “ বলির চুপ করিয়া রহিল । وودس لأنه 8S শরৎকুমার একটু হাসিয়া ভtহার দিকে চাহিলেন। হাসি যখন দেখিল—তাহার অভিমান নিষ্ফল, তখন আবার মিনতি করিয়া বলিয়া উঠিল—“শরদা, লক্ষ্মীটি, বলুন না, আপনার মুখে শুনলে কতটা আহলাদ হবে, বলুন দেখি !" শরতের ইচ্ছা হইল, তাহাকে তাহার নব-জীবনের কথা আদ্যোপশন্ত খুলিয়া বলেন হাসির অনুরোধ তাহার হৃদয়ের অস্তুস্তল ভেদ করিল,—তথাপি তিনি তাহা পরিলেন না, নীরব হইয়া রছিলেন,-- কিছুক্ষণ পরে কহিলেন, - “হাসি, ও কথা থাকৃ।” হসি মনে মনে একটা গুরু বেদন উপলব্ধি করিয়া রহিল, তবে কি সে ভুল বুঝিয়াছে ? এখনও কি শরৎকুমার তাঁহাকে ভোলেন নাই ! শরৎকুমার যদি বলিতেন, তিনি রাজকুমারীকে ভালবাসেন, তাহা হইলে হাসি কতটা না শাস্তি লাভ করিত। ধীরে ধীরে সে চাঁপা-কষ্টে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিল,— শরৎকুমার তাঙ্গকে ব্যথিত দেখিয়া কহিলেন,— “তুমি যে আমাকে ভাইয়ের অধিকার দান করলে —এতে সত্যই আমি বড় সুখী ।”— হাসি বিদ্রুপের স্বরে কহিল, "শুনে আনন্দিত হলুম।” শরৎকুধার হাসিয়া কছিলেন,--"কিন্তু স্বরে ত আনন্দভাব প্রকাশ পাচ্ছে না।”

  • আপনি যে আমায় দান বেশ স্বচ্ছন্দ মনে গ্রহণ করেছেন, তারও ত প্রমাণ আমি পাচ্ছিনে । —আচ্ছ, বলুন না শরদl,—আমি জানি, আপনি রাজকুমারীকে ভালবাসেন কেন অামাকে সে কথা আপনি খুলে বলতে সঙ্কোচ কৰছেন ? সত্যই আমার বড় দুঃপ হচ্ছে । বলুন, শরদ বলুন।"

শরৎকুমার একটু দম লইয়া বলিলেন, —“ন হাসি, রাজকুমারীকে আমি ভালবাসি,---এ কথা আমি বলতে পারিনে । তিনি ক্ষণজন্ম,--রূপেগুণে তিনি মহীয়সী তাব উচ্চ সদয়ভাবে কে না মুগ্ধ হয় ? অামি ও মুগ্ধ । অামি তাকে মনে মনে পূজা করি । এ শুধু গুণের প্রতি, উচ্চ ভাবের প্রতি পূজা, কিন্তু, একে ত ভালবাসা বলা যায় না,— ভালবাসায় যে প্রত্যাশা থাকে, এতে তা ত নেষ্ট --- তারাকে, চাদকে কে না ভালবাসে,-কিন্তু তাতে কি কোন প্রত্যাশ থাকে ? আমার এই প্রত্যাশাঙ্গীন পূজাকে ভালবাসা বলা যায় না।” শরৎকুমারের মনের রুদ্ধ উৎস মুক্ত আবেগে সহসী উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিল। তিনি থামিলে হাসি আনrন্দ হাসিয়া বলিল,—*বড় আহলাদ--বড় আনন্দ