পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন-রাত্রি কতবার তখন থেকে মনে হয়েছে, ভাগ্যিস্ তুমি, আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলে । বিধাতাকে মনে মনে কত না ধন্যবাদ দিয়েছি। তুমি ভাগ্যবতী, হাসি, রাজা ক্ষণজন্ম পুরুষ, এমন স্বামী লাভ ক’রে তুমি ধন্ত হও–ধন্ত হও, হাসি ” মোটর বাড়ীর কম্পাউণ্ডে চুকিল, শরৎকুমার ব্যাকুল স্বরে বলিলেন—“আর সময় নেষ্ট, হাসি সময় নেই—এক দিন আমার আকুল প্রার্থনীর উত্তরে —“ন’ ব’লে আমার জীবন আনন্দহীন ক’রে দিয়েছিলে, আজ আমার অমুরোধ, প্রার্থনা সফল কর, হাসি,—বল চ্যা—রাজা বাহাদুরকেই তুমি -” তাহার কথা সমাপ্ত হইতে না হইতে বারান্দার ভিতর গাড়ী আসিয়া পড়িল—হাসি অস্তে আস্তে বলিল--"আপনি আগে আমাকে কথা দিন যে -” আর বোঝাপড়া চলিল না, দু’জনের মুখ বন্ধ হইয়া গেল ; শচীন্দ্র ছুটিয়া আসিয়া গাড়ীর দরোজাট খুলিয়া ধরিয়া বলিল—”এই যে শরদ । আসবেন না একবার ভিতরে ?” “না ভাই—হাতে অনেক কায আছে ।” অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ ব্যাঙ্ক ফেল হওয়াতে সুজন রায় যে ক্ষতিগ্ৰস্ত হইয়াছেন, রাণীগঞ্জের সম্পত্তি হইতে সে ক্ষতি পুরণ করিয়া লইবেন, এই আশায় তিনি বুক বধিয়াছিলেন, --কিন্তু চিরশত্রু অতুল রায় সে আশাতেও তাঁহাকে নিরাশ করিলেন । এখন তাহদের সুদশা লাভের একটিমাত্র উপায় ; যদি বিজনকুমারের সহিত রাজকন্যার বিবাহ ঘটাইতে পারেন,—তবেই তাহার সকল দিক বজায় থাকে ; ধনসম্পত্তি, মান মৰ্য্যাদা সকলই রক্ষা পায় । কিন্তু ইছা ত একান্ত ভাবেই অতুলের অনুগ্রহের উপর নির্ভর করিতেছে । পুৰ্ব্বেই ত স্বজন রায়ের এ প্রস্তাব অতুলেশ্বর অগ্রাহ করিয়াছেন, আর এখন এ কথা তুলিলে তিনি ত তাহাকে লাঠি দিয়া বিদায় করিবেন —তবুও স্বজন রায় এ সঙ্কল্প মন হইতে তাড়াইতে পারিলেন না—ছলে বলে কৌশলে ইহা সিদ্ধ করিবার মতলব উ{াটিতে লাগিলেন । স্বজন রায়ের ধৰ্ম্মে কোন দিনই মতি ছিল না— মঙ্গলশক্তির আরাধনা তিনি কথনও ভুলিয়tও করেন ৰাষ্ট-কিন্তু সংঘাতিনী দৈবশক্তির প্রতি চিরদিনই 8-3) তাহার অটল বিশ্বাস । বিপদে অণপদে পড়িলেই করালী কালীর মাননা করিয়া থাকেন । আজও করিলেন, কালীঘাটে দেবীপদতলে শত পাঠা বলি পড়িল,-গৃহস্থাপিত চামুণ্ডামূৰ্ত্তি মহিষ-বলিদানে পূজিত হইলেন। উপরন্তু ইতিপূৰ্ব্বে কখনও যাহা করেন নাই চামুণ্ডামূৰ্ত্তির পদতলে এক দিন সন্ধ্যাপুজার সময় অনেকক্ষণ ধরিয়া ইত্যা দিয়া পড়িয়া রহিলেন । উঠিয়া দেখিলেন -চামুণ্ডী কণ্ঠের প্ৰেতমুগুগণের কাধের উপর দুইটা করিয়া হাত বাহির হইয়াছে । সেই হাতে বমুর্বাণ ধরিয়া জনে জনে তাহার প্রতি প্ৰভঙ্গী করিয়া হাসিতেছে । সুজন রায়ের মনে দেবীর ইঙ্গিত ব্যক্ত হইল । রায়-বংশের সৌভাগ্যস্থচন যে ধনুকের প্রসাদে, সেই ধনুক লাভে যে র্তাহীদের ভাগ্যেও রাজ্য ও রাজকন্তী লাভ ঘটবে, র্তাহার সংস্কাবান্ধ মন এই কথাই বারবীর করিয়া ঠাহীকে বলিতে লাগিল । বিজনকুমার আজ প্রাতঃকালে কলিকাতাযাত্রার পুৰ্ব্বে বপন পিতৃপ্রণাম করিতে আসিল তখন তিনি চামুণ্ডাদেবীর জপমালা হস্তে বৈঠকখানার বারনদায় বিচরণ করিতেছিলেন, আর মাঝে মাঝে রেলিঙ্গের উপর ঝুঁকিয়া নিড়নীধারী মালী দুইজনের চতুর্দশ পুরুষের প্রতি মিষ্ট ভাষা প্রয়োগে তাহাদিগের অন্তরাত্মাকে কৃতাৰ্থ করিয়া তুলিতেছিলেন। ব্যাঙ্ক ফেল হওয়া পৰ্য্যন্ত সকাল বেলাটা তাহার জপের মালা তাতেই কাটে, তবে এ জন্ত সাংসারিক কোন কৰ্ম্মেই র্তাহার বাধা পড়ে না । মালা ফিরাইবার সময় যেমন উৎসাহে মাঝে মাঝে দশমহাবিদ্যার স্তুতি পাঠ চলে, ততোহধিক উৎসাহে ভৃত্যগণ যথাসময়ে অভ্যর্থিত হয় । পুত্র প্রণাম কবিয়া উঠিয়া দাড়াইবার পর তিনি তাহার ইংরাজা বেশভূষাসম্পন্ন আপাদমস্তক বিরক্তকটাক্ষে নিরীক্ষণ করিয়া ব্যরানার একখান চৌকী দখল করিয়া লইয়া বলিলেন, *আজ আবার যাওয়া হচ্ছে কোথা ?” পুত্র বেশ সপ্রতিভ ভাবেই উত্তর করিল,— “আজ্ঞে কলকাতায় ।” পিতা চামুণ্ডামূৰ্ত্তির স্তোত্র একবার আবৃত্তি করিয়া লইয়া জপমালা মস্তকে ঠেকাইবার পর তাহা গলদেশে তুলিয়া লইয়া বলিলেন,—“যখন তখন কলকণত৷ অণর কলকাতা । খরচ যোগায় কে ?”

  • কেন আপনার আদেশেই ত যাচ্ছি, মোকদ্দমা রুজু করতে হবে না ?”

সুজন রায় পুৰ্ব্বেই কেন্সিলের মত লইয়া বুঝিয়াছিলেন, মোকদ্দমায় তাহার জয়লাভের সস্তাবনা