পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন-রাত্রি দিয়াই দেওয়ান মহারাণীর সে আদেশ-পত্ৰ শুমা চরণকে পাঠাইয়া দিলেন। শুiমাচরণের হাতে জ্যোতিৰ্ম্ময়ী ঠাকুরমাকে এইরূপ একখানি পত্র দিল -- শ্ৰীচরণকমলেষু, শত শত প্রণামপুৰ্ব্বক নিবেদন,--- ঠাকুর-মা, সু-খবর জানিবেন। আমি নূতন মায়ের স্নেহে আমার হারা-মাকে ফিরিয়া পাইয়াছি। বাবারও মনোনীত হইয়াছে। ইহা আমার অনুমান মাত্র নহে, যথেষ্ট প্রমাণ পাইতেছি । এখন আপনি আসিয়া শুভদিন নিৰ্দ্ধারণ করিবেন। সবিশেষ খবর শ্ৰামাচরণ-কাকার নিকট পাইবেন । অলমতিবিস্তরেণ । আপনার চিরস্নেহের—প্রণতা—রাণী । চিঠিখানি পড়িয়া ঠাকুর-মার মুখ উজ্জল হইয়া উঠিল। কিন্তু পরমুহূর্তেই তাছা রাহুগ্ৰস্ত ভাব ধারণ করিল। তিনি বিষঃভাবে শুiমাচরণকে কছিলেন, “খবর ত শুভ বটে, কিন্তু মেয়েটিও বড় হয়ে উঠেছে, তার একটা গতি না ক’রেও ত এ কাযে মন দিতে পারছিনে। যথন অতুলকে বিয়ের জন্ত জেদ করেছিলুম তথন মেয়ে ছোট ছিল—এখন আগে ভাগে বাপের বিয়েই বা দি কি ক’রে ? কি বল তুমি বাবা ?” গুণমাচরণ মাথা চুলকাইয়া বলিলেন, “যা বলে ছেন, তা ঠিক বই কি ? তবে দেরী হ’লে আবার এ দিকে রাজার মতিগতি না ফিরে যায় ।” “দেরী কেন হবে ? চার হাতে একই সময়ে বাধন পড়ক না ? এখানে ত বরকত্ব তুমি,-- তোমার ইচ্ছাতেই ত কৰ্ম্ম ।” শুiমাচরণ কথার অর্থ বুঝিয়াও বোকা বনিয়া নীরব হইয়া রহিলেন। মহারাণী তখন একটু হাসিয়া অর্থ ব্যাথ্যা করিয়৷ কহিলেন—"বর ত আমাদের সকলেরই মনে এক রকম ঠিকই হয়ে আছে--তবে সাত কথা না হ’লে বিয়ে হয় না-এই যা ! তুমি এবার তোমাদের দিক থেকে প্রস্তাবটা পাক ক’রে ফেলে, শুiমাচরণ ।” শ্যামাচরণ মহারাণীর চরণে দৃষ্টি রাখিয়া বলিলেন —“আপনি কি শরতের কথা বলছেন ?” "এতক্ষণে কি সেটা বুঝলে বাবা ! রাজারষ্ট অনুরূপ মন্ত্রীও বটে ! তখন মুখ তুলিয়া চাহিয়া সহস্তভাবে শুiমাচরণ &S কহিলেন, "মাপ করবেন মহারাণি, আমার দ্বারা ঘটুকালী-টটুকালী হবে না। আমি বরকর্তা হ’তে চাইনে, আপনি, বরকর্তা কস্তাকর্তা উভয় কৰ্ত্তাই হয়ে এ সম্বন্ধটা পাক ক’রে ফেলুন । জানেন ত আজকালকার ছেলেরা মা-বাপ মানে না, তা আমি ত মাম। কিন্তু আপনাকে সে ঠিকই মানৰে ।” মহারাণী বলিলেন—“কথাটা কি জান শ্যামাচরণ, শু্যামসুন্দরকে ছেড়ে আমার ঘরের বাইরে আর কোথাও যেতে ইচ্ছা করে না। সব হারিয়ে একটি অতুলে ঠেকেছে আমার, ছবেলা দেবতার দোরে র্তার মঙ্গল কামনা না করলে আমার দিন বৃথা যায় ।” কিন্তু শুমম্বন্দরীর কথা ভূল্লেও ত চলবে না, भl ! “না ; তাই বা ভুলতে পারি কই ? যাব কলকাতায়, কিন্তু বেশী দিন যেন থাকৃতে না হয় বাবা, সে ভরে তোমার উপর । তুমি গিয়ে সব আয়োজন ক’রে ফেলে, আমি শো মুহূর্বে সেখানে পৌছে, আমার কৰ্ত্তব্য শেষ ক’রে ঘরে বেী-জামাই একসঙ্গে যেন নিয়ে আসতে পারি ;– সেখানে পৌঁছেই এই চিঠিখানি রাণীর হাতে দিও।” শুভাশীৰ্ব্বাদ দীর্ঘায়ুযন্ত, রাণিজি, তোমার পত্র পাইয়। বড়ই সন্তোষলাভ করিলাম। কিন্তু আমারও তোমাকে একটি স্বসংবাদ দিবার আছে । আজ প্রাতঃকালে মন্দিরে যাইবার সময় দেখিলাম---তোমার নব-মল্লিকার গাছটিতে অসময়ে একটি কুঁড়ি ধরিয়াছে, আর একটি প্রজাপতি তাহার উপর বসিয়া আছে । আমি ইহার যে অর্থবোধ করিলাম, তাহীতে মনটা বড়ই প্রফুল্প হইয়া উঠিয়াছে । কিন্তু তোমার নিকট হইতেও ইহার অর্থব্যাখ্যা চাই । রাণীর ঘথন জোর তলপ, তখন গৃহদেবতাকে ছাড়িয়াও শাস্ত্ৰ হুকুম তামিল করিব এবং একেবারে জোড়ামাণিক লইয়া ঘরে ফিরিব । ইহার ব্যবস্থা করিতে শুiমাচরণকে বলিলাম তুমিও প্রস্তুত থাকি ও । তোমার শুভাকাঙ্কিণী ঠাকুর-মা । রাণী চিঠিখনি পড়িয়া, হাসিয়া দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়৷ ভাবিল, “ঠাকুর-মার যেমন কথা ।” তাহার পর আর একবার চিঠি পড়িতে গিয়া--উপরের কোণে ছোট অক্ষরে লেখা কথাগুলিব দিকে নজর পড়িল -- "মনে রেখে রাণিজি, তুমি বিয়ে না করলে তোমার বাবা কখনই বিয়ে করবেন না।”