পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

G. R. তখন রাত্রিকাল—দাসী অtহরের খবর দিয়া গিয়াছে, বালিক তাড়াতাড়ি চিঠিখানি মুড়িয়া দেরাজের মধ্যে রাথিয়া চলিয়া গেল । অtহারাস্তে গৃহে ফিরিয়া চিঠিখান আর একবার তাঙ্গর পড়িতে ইচ্ছা হইল, কিন্তু সে ইচ্ছ। অপুর্ণ রাখিয়াই সে শুইয়া পড়িল। তখন তাহাকে চিঠি পড়িতে দেখিলে কুন্দ কি ভাবিবে ? যদি এ সম্বন্ধে কোন কথা কুন্দ জিজ্ঞাসাই করে— তবে কি উত্তর দিলে সে ? পরদিন প্রভাতে কুন্দ শয্যা ত্যাগ করিয়া যাক্টবার পর জ্যোতিৰ্ম্ময়ী অার একবার চিঠিখানি পড়িয়া লইয়। তেতালার ছাতের উপর উঠিল। প্রায় প্রতিদিনই সে উদয়-শোভা দেখিতে এখানে আসে । আজ কিন্তু আধ ঘণ্টা দেরীতে আসিয়া ৪ পুৰ্ব্বদিগন্তে কোথাও একটু উজ্জ্বল রাগ দেখিতে পাইল না। রাত্রিকালে বৃষ্টি হইয় গিয়াছে, ভিজ। গাছপালার মাথার উপর কুয়াশার কালে পাতে ঢাকা সর্ঘ্যের আলে। প্রভাতে সন্ধ্যার ভাব ধারণ করিয়াছে। মাঝে মাঝে সজল চঞ্চল বাতাস উঠিয়া ঝাউ, দেবদারু, শাল, তাল প্রভৃতির শাখা জ্বলাইয়া দিয়া সেই কৃষ্ণ নিবিড় পটে যে ছিদ্র রচনা করিয়া দিতেছে, একটু অরুণ-জ্যোতির দর্শনব্যাকুল জ্যোতিৰ্ম্মণী তন্মধ্যে নয়ন প্রবিষ্ট করিয়া দিতে না দিতে সেই ছিদ্রপথ—মুহুর্তে মেঘ জমাট হইয় পড়িতেছে। জ্যোতিৰ্ম্ময়ী আজ ক্ষুঃচিত্তে অন্ধকার আকাশের দিকেই করযোড়ে চাহিয়া অস্তুদেবতার ধ্যান সমাপন করিল। অতঃপর নীচেযাইবার উদ্দেশ্রে পশ্চিমে ফিরিয়া, সহস স্তম্ভিত হইয়া দাড়াইল। এ কি অপুৰ্ব্ব দৃপ্ত । পুৰ্ব্বদিকে এক বিন্দু রক্তিম রাগ নাই, আর পশ্চিম আকাশের স্তরে স্তরে উষার নানাবর্ণ অলিপন চিত্রিত। এখনই যেন স্বৰ্য্যদেব ইহার মধ্য দিয়া পূর্ণ মহিমায় আপনাকে ব্যক্ত করিয়া দিবেন । রাজকুমারী বিস্ময়স্তিমিত দৃষ্টিতে এ চিত্র অবলোকন করিয়া মনে মনে কহিলেন, “হে অন্তদেবতা। এ কি ইঙ্গিত করিতেছ তুমি ? তোমার উদ্দেশুপথে অসম্ভব ও কি সম্ভবরূপে মূৰ্ত্তি-পরিগ্রহ করে ? তবে তাহাই হউক, তোমার ইচ্ছা দ্বারাই আমাৰে ইচ্ছাযুক্ত কর হে প্রভু, অনন্তশক্তিধারী বিধাতৃপুরুষ ।” একবিংশ পরিচ্ছেদ বসন্ত এবং অনাদি এই দুই জনে ষে একবার বিদ্রোহী দলের সংস্রবে আসিয়াছিল, তাহ পাঠক স্বর্ণকুমারী দেবার গ্রন্থাবলী অবগত অাছেন । বসন্তু এখন রাজ-কোতোয়ালির নারক । কনফারেন্সের সময় ইহার কার্য্যপটুতার সন্তুষ্ট হইয়। রাজা বাহাদুর ইহাকে এই পদে নিযুক্ত করিয়াছেন । শরৎকুমার আজ প্রাতঃকালে কলিকাতা যাত্রা করিয়াছেন, মধ্যাহ্ন-ভোজনের পর হইতে ইহারা উভয়ে কোতোয়ালির বহির্দিকের একটি ঘরে বসিয়া নিবিষ্টচিত্তে সন্তোষের নোটবহিখানার অর্থভেদ কfরতে চেষ্টা করিতেছিল। নামের সঙ্কেত, বাক্যের সঙ্কেত মোটামুটি তাহারা এক রকম বুঝিয়া লইয়াছে, নম্বরের সঙ্কেতও অনেকটা বুঝিয়াছে। বুঝিতে পারিতেছিল না কেবল নম্বরগুলার সহিত বাক্যশব্দগুলার ঠিক যোগাযোগ । ইহা মিলাইতেই তাহদের প্রাণান্ত হইয়া উঠিয়াছিল । যেমন— একটা চন্দ্রবিন্দুর পর ২ × ৫ নম্বর ইহার পর একটা বাণফলক ও চতুষ্কোণ চিহুের নীচে লেখা পিংপং । পিংপং অর্থাৎ প্রাণপণে শপথবদ্ধ লোক ইহা তাহার শব্দসঙ্কেত হইতে আগে বুঝিয়াছিল, অতএব মোটামুটি তাহারা এই বুঝিল, পিংপং দল কোন রেলগাড়ীকে ডিরেল করিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। চতুষ্কোণ গাড়ী এবং বাণফলক ধ্বংসের চিহ্ন-সঙ্কেত বলিয়া তাহার। গ্রহণ করিল। কিন্তু ২ x ৫ এই নম্বরের সহিত উক্ত সঙ্কেতের কি যোগ, তাছা ত বুঝা গেল না। অনাদি বন্সিল,—“খুব সম্ভব—এটা লোকসংখ্যা । দুজন থেকে ৫ জন লোক এ কাষে জোটার অর্ডার পেয়েছিল ।” বসন্ত বলিল,—“না হে, তা নয় ও নম্বর হচ্ছে সমস্থের সঙ্কেত। দেখছ না, প্রথমেই চন্দ্রবিন্দু অর্থাৎ তিথির তারিখ—তার পর এল মাস দিন ।” "ত যদি হয় – তা হ’লে কাষের কাল প’ড়ে যায় ভবিষ্যতে আগামী ফেব্রুয়ারী মাসের a তারিখে । সে দিন ভোরবেলা কোন হুমড়োচুমড়ের কলকাতায় আসার কথা আছে না কি হে ?” “কই, তা ত শুনি নি।” “ত যখন শোন নি, তখন তোমার ব্যাখ্যাটা নিরর্থক ব’লেই পেধ করা গেল ; ও নম্বরগুলা কখনই Future tense as, Past fogson আগেই একটা ট্রেণ ডিরেল হয়েছিল—মনে নেই • খুব সম্ভব, এই কৰ্ত্তারাই ভ করেছিলেন । যা হ’ক, এ সঙ্কেতটার সঙ্গে বোঝাপড়া এক রকম হয়ে গেল, এবার অণর একটা ধর দাদা ?” কিন্তু দ্বিতীয় সঙ্কেতটাও ঐরূপ যবস্থবভাবে মীমাংসিত হইতে না হইতে সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনীভূত হইয়া নোটৰহির