পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

☾b• “দেখুন, মাপ করবেন। একলব্য আদর্শ ভক্ত, সে বিষয়ে দ্বিবাক্য নেই. কিন্তু এই ভক্তিনিষ্ঠার বিনিময়ে গুরুর নিকট তিনি কি দান পেয়েছিলেন, তাই বলুন ত ?” দণপতি কি বলিবেন, যেন ভাবিয়া পাইলেন না । রাজকুমারী ঘুণা-কুষ্ঠিত স্বরে কহিলেন.—“পত{রণা, স্বার্থ উদ্দেশুপুর্ণ প্রতারণ ছাড়া গুরুর কাছে তিনি আর কিছু পান নি । এই কথাটা মনে কলেষ্ট আচার্য্য দ্রোণের পিরুপে অামাল সমস্ত মন বিদ্রোহা হয়ে উঠে এবং এ থেকে কি শিক্ষা পান্স জানেন ? মনের স্বাধীনতা-খোয়ান ভক্তি বা মুক্তি কিছুই নিরাপদ নয় ।” বলিয়া রাজকুমাবা একটু হাসিলেন. কিন্তু গুরুর দিকে চাfষ্টয় পুঝিলেন, তাহার এ পাক্য গুরু হুংপ্রতি শ্রেম বুঝিয়া যেন পীড়িত হইয়াছেন । আপনাকে অপরাধী জ্ঞান কবিয়া রাজকন্যা বিনীতস্বরে কহিলেন,--আপনাকে আপার বলছি, আমার আশা আপনি ত্যাগ করুন ; আপনার পথ আমার পথ এক নয়,-- অবিচলিত ভক্তি ভাল অামাতে নেই। আমার কর্তব্য আমাকে স্বতন্ত্র পথে টানে ৷” কি অর্থে রাজকুমাপী এই কর্তৃপ্য শব্দ ব্যবহার করিলেন, তাই ঠিক না বুঝিয়। দলপতি কহিলেন, “কিন্তু দেশাত্মবোধ যার জন্মেছে. তার কাছে দেশকৰ্ত্তব্য সব চেয়ে বড় । এষ্ট ব বাবোধ থেকেই রামচন সীতাকেও লিসভক্তন করেছিলেন ।” “আমার কিন্তু মনে হয় রামচন্দেব পত্নী শ্যাগ বিশ্ব-প্রেমিকের কর্তব্যবোধ । এষ্ট সুপের গানই অহরহঃ আমি শুনতে পাই ।” শত লোকের মস্থদাত গুরু আজি বালিকার কথার নিৰ্ব্বাক হইয় গেলেন, তাঙ্গার ইচ্ছা হইল, এই দেব-প্রতিমার পদতলে তিনি লু&ত হইয়া পড়েন । উচ্ছ্বসিত আবেগে বহুদিন পরে তাঙ্গর কণ্ঠ হইতে সহস ধ্বনিত হঠল, “ওঁ সৎ গুরু”। এই মন্ত্র বহু পূৰ্ব্বে এক দিন এক জন ব্রহ্মচাবীর মুখে তিনি শুনিয়াছিলেন, পরে শস্ত্রাচারী দেশসেবক হ’য়। এই বাক্য তিনি একেবারেই ভুণিয়া যান । অtছ আবার সহসা এই মন্ত্র উচ্চাবণপুৰ্ব্বক উঠিয়া দাড়াইয়া মাথা নেয়াইয়া তিনি রাজকুমারীকে বলিলেন, পদধূলি দিন, দেবি, আপনার উপদেশই অামাব শিরোধ র্য্য ।” এ কি অপরূপ কথা । কি বলেন ইনি ! জ্যোতি*ী সচকিতে উঠিয়া সমস্ত লজ্জিতভাবে একটু দূরে সরিয়া দাড়াইয়া কছিলেন, “ছি ছি, আমাকে লজ্জা দেবেন না। আপনিষ্ট আমার প্রশম্য ।" স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী গুরুদেবের অবনত মস্তক আবার উন্নত হইল, মোহ-মুক্তভাবে তিনি আবার আসন গ্রহণ করিলেন। কিছু পবে কুন্দ নিকটে আসিয়া বলিল,—“সময় ষ্টয়েছে, গুরুদেব !” অন্ত লোকের আগমনবার্তাবিজ্ঞাপক এই সঙ্কেতবাক্যে একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও ক|নন-মন্দির ত্যাগ করিয়া, কুন্দের অনুবন্তী হইতে তিনি বাধ্য হইলেন । কি" ইজনে নিভূত-পথে চলিয়া ও নবাগত দলের লক্ষ্য এড়াইতে পারিলেন ন। । পথিমধ্যে দূরে দূরে এক দলের ছায়া-মূৰ্ত্তি অন্য দল দেfপতে পাইল । অন্ধকারের মধ্যেও দলপতি শরৎকুমারকে চিনিলেন। চিনিবামাত্র মুহূৰ্ত্ত পুৰ্ব্বের নিৰ্ব্বিকার শুদ্ধ কল্পনা র্তাহাকে ত্যাগ করিল। ঈৰ্য্যাবিষাক্ত দৃষ্টিবাণ র্তাহার দিকে নিক্ষেপ করিয়া ধ্ৰুতচরণে তিনি চলিয়া গেলেন । কুন্দ তখন কাননে না ফিরিয়া গৃহাভিমুখী হইল। অনাদি ও ডাক্তার লতা-মণ্ডপের দিকে অগ্রসর হইলেন । লতামণ্ডপের কাছাকাছি আসিয়া অনাদি কছিল, “আপনি এগোন, ডাক্তার-দা, আমি কুন্দকে একটু বকুনি দিয়ে এখনি আসছি। যাকে তাকে সে রাজকন্যার কাছে অণনে কেন ?" লপতিকে দেখিয়া অনাদির বড়ই মন খারাপ চতীয়া গিয়াছিল । শরৎকুমার লতা-মণ্ডপের বাঙ্গিরে ক্ষণকাল নিস্তন্ধে দাড়াইয়া রহিলেন । এখনও মাঘ মাস পড়ে নছ, শ্রীপঞ্চমীর এখনও অনেক বিলম্ব আছে, অথচ শীত নাই, হঠাৎ অসময়ে দক্ষিণ বাতাস বহিয়া উঠিমুছে, লতা-মণ্ডপের মাথায় কঠোর আচ্ছাদনের উপরে, থামগুলির গায়ে গায়ে ফুলে ভরা— গোলাপ এবং যুথিকার লতা এবং মণ্ডপ বাহিরে বাগানের কেয়ারীতে রজনীগন্ধ, হাস্মুহান এবং চন্দ্রমল্লিক প্রভৃতি ঋতুপুষ্পের ঝাড়, প্ৰমত্ত আনন্দে কঁপিয়া কাপিয়া গন্ধে দিক ভরাষ্টয়া তুলিয়াছে। শরৎকুমার বাগানেল এই শোভাদৃশুের দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া ভাবিলেন, এ মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী যিনি, তিনি আরও কত সুন্দর। আজ কৃষ্ণপক্ষের তৃতীয়া, পুৰ্ব্ব দিকে গাছ-পালার মধ্যে আগুন ধরিয়া উঠিয়াছিল, এখনই চাদ উঠিবে ; কিন্তু শরৎকুমার চন্দ্রোদয় দেখিবার জন্য অপেক্ষা না করিয়া মওপমধ্যে প্রবেশ করিলেন। অন্তদিন যখন রাজকুমারীকে তিনি দেখিতে অ৷ইসেন, কত না আনন্দ হর্ষ তাহার সমগ্র মূৰ্ত্তি হইতে উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠে, আজি ছায়ার দ্যায় স্নানমুখে তিনি রাজকন্যার নিকট আসিয়া দাড়াইলেন। রাজকন্ত বুঝিলেন, দলপতিকে এখানে