পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন-রাত্রি দেখিয়া ডাক্তার ক্ষুণ্ণ হইয়াছেন। আজ ত রাজকুমারী মনে মনেও বলিতে পাবিলেন না, “আমি র্তাহার সহিত দেথা করিয়াছি, ইহাতে তোমার কি ?” তিনিও নিজেকে কেমন যেন অপরাধী মনে করিখ চুপ করিয়া রছিলেন । চাদগান গাছপালাব উপরে উঠিয়া লতা-মণ্ডপের পাশ দিয়া উভয়ের মুখে জ্যোৎস্না ঢালিয়া দিল, উভয় হৃদয়েব প্রচ্ছন্ন পেমতরঙ্গ সে জ্যোৎস্নাকে আকুল করিয়া তুলিল। কিছু পরে শরৎকুমার বিষগ্ন স্বরে বলিলেন, “রাজকুমারি, বিদায় নিতে এসেছি।” এমন বিষাদীদ স্বব ত ডাক্তারের মুখে আর কোনও দিন রাজকুমারী শুনেন নষ্ট। তাহাব হৃদয় বেদনা-বিগলিত হষ্টয়া উঠিল । তিনি বলিলেন, “বিদায় ? কেন, কোথায় যাচ্ছেন ? বিলাত যাওয়া কি ঠিক হয়ে গেছে ?” ডাক্তার বলিলেন, “বিলাত যাবার এথনো কিছু বিলম্ব আছে, মার্চের এদিকে আর বিলাত বাগুয়৷ হবে না। রাজা . বাহাদুরও সে সময় আপনাকে নিয়ে বিলাতে যাবেন বলেছেন। তাষ্ট আমি অপেক্ষা ক’রে অছি * রাজকন্যা একটু আশ্বস্ত হইয়া বলিলেন, কোথায় যাবেন এথন ?” রাজা বাহাদুর বারণ করিয়াছেন, তাই প্রসাদপুরের উল্লেপ না করিয়া তিনি বলিলেন—

  • মফঃস্বলে ।” "কেন যাচ্ছেন ?” “একটু কায পড়েছে।” “কাউকে বুঝি অস্ত্র করতে হবে ?” “আমার আগব অন্য কি কায ?" “কবে যাবেন ?” “কাল ভোরেই যেতে হবে ?” *ফিরবেন কবে আবার ?” *দেরী হবে খুব সম্ভবত: ।” শরৎকুমার চিকিৎসা করিতে যাইতেছেন, ফিরিতে দেরী হইতে পারে, ইহাতে দুঃখ হইব। কি আছে ? এমন ত প্রায়ই যান । কিন্তু তবুও রাজকুমারীর মনের মধ্যে দুঃখ জমাট বাধিয়া উঠিল । সহজ উচ্ছ্বাস রুদ্ধ করিলেই তাহার চাঞ্চল্য প্রবল হইয়া উঠে। এত দিন রাজকুমারী শরৎকুমারের প্রতি তাহার প্রেমভাবকে মনে মনে বন্ধুত্ব বলিয়াষ্ট স্বীকার করিয়া লইয়াছেন । দিদিম’ার চিঠি পড়িয়া পর্যান্ত তিনি যেন নিজেয় কাছে নিজে সহসা ধরা পড়িয়া किोब्रांtछ्न ।

তবে d:S শরৎকুমার আবার বলিলেন, "অনেক অসন্তোষের কারণ দিয়েছি, ক্ষমা করবেন ।” কি মনে করিয়া এ কথ। শরৎকুমার বলিলেন, তাহা রাজকুমারী বুঝিলেন, কিন্তু সে প্রসঙ্গে কোন কথা উত্থাপন না করিয়া মনের ব্যথা ক্ষীণ হাসিতে প্রচ্ছন্ন রাথিয়া বলিলেন, “আমাকেও ক্ষমা করবেন ডাক্তার-দা । অনেক সময় অনিচ্ছাতেও রূঢ়কথা বলেছি হয় ত। যদি সুবিধা হয়—মাঝে মাঝে চিঠি লিখবেন—একটু আধটু ” বচ্চ পুৰ্ব্বের বিদায়দিনের কথা মনে পড়িল,— সেদিনও হাসি র্তাহীকে চিঠি লিখিবর অনুরোধ করিয়াছিল, কিন্তু সে অনুরোপে এরূপ করুণ কাতরতা ছিল না ত ! ডাক্তার বলিলেন, “আপনার যখন আদেশ, তপন লিখব, রাজকন্ত ; কিন্তু আপনি ?”— “আমি বলতে পারিনে, ডাক্তার-দা । কি আর লিখব ?” মাটীতে ঝরা গাছের পাতার উপর জুতার শব কানে আসিল । এগনই অনাদি আসিয়া পড়িবে। শরৎকুমার তাড়াতাড়ি হাত বাড়াইয়া দিয়া আগ্ৰহব্যাকুল কণ্ঠে বলিলেন,- “বিদায় দিন, আজ, রাজকথা !" * এ পর্য্যন্ত র্তাহাবী কথনও'সেকহাও করেন নাই। অlজ জ্যোতিৰ্ম্ময়া তাহার দাবী অগ্রাহ্য করিলেন না, শরৎকুমার সবল হস্তে বীজকুমারীর ধৰ্ম্মাক্ত কোমল হাতপানি ধরিয়া, ছুইজনে নয়নে নয়নে চাহিলেন। র্তাহাদের মিলিত হস্তের অণু-পরমাণু হইতে আবেগ তরঙ্গ উথলিয়া উঠিয়া নয়ন-তারকায় কেন্দ্রীভূত হইল । এতদিন পূরিয়া তাহারা উভয়ে ষে--ভাব যে কথা অস্তুনিভৃতে চাপিয়া রাগিয়াছেন, এই ক্ষুদ মুহূর্বে স্পর্শের মধ্য দিয়া তাহীদের অবিশ্বাসী নয়ন তাহা ব্যক্ত করিম দিল ; তাহারা যেন কথা কহিয়া উঠিল । জ্যোতিৰ্ম্ময়ী ডাক্তারের হাত হইতে হাত ছাড়াইবার চেষ্টা করিলেন না, কিন্তু নয়ন অবনত করিলেন । দুই বিন্দু তপ্ত অশ্র নেত্রচু্যত হইয়া শরৎকুমারের হাতে আসিয়া পড়িল । অনাদি আসিয়া তাহীদের গত বাধা দেখিয়া মনে মনে বেশ আনন্দ অনুভব করিল। সেই মুহূর্বে একটা কোকিল কুচ কুক্ত করিয়া ডাকিয়া উঠিল । ত্রয়োবিংশ পরিচ্ছেদ কৃষ্ণপক্ষ রাত্রি, কিন্তু চন্দ্ররাজের অনুপস্থিতিকালে আজি জ্ঞারকারাজি তাহীর সভাঙ্গনতলে আলর