পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Woo জমাইবার সুবিধা পায় নাই। সন্ধ্যার পর পুৰ্ব্বদিগন্তকোণে যে কয়েকখানি তরল কালো মেঘ ভাসিয়া উঠিয়াছিল--তাহাষ্ট ক্রমশ: দলপুষ্ট আকারে সারা আকাশখান ছাইরা ফেলিবার উপক্ৰম করিয়াছে । তবুও দুষ্ট চারিটি দুঃসাহসী নক্ষত্র, শক্ৰ চলাচলির অবসর-ফাকে তাহীদের কালো পোষাকের স্থানে স্থানে আগুন লাগাইয দিয়া আবার সপ্তপণে লুকাইয়। পড়িতেছিল । তাহাদের মতই দুঃসাচসা চারিটি প্রাণী, মেঘের অন্ধকারে ঘনীভূত জঙ্গল-পথের অন্ধকার, বাধা-বিঘ্ন অগ্রাহ করিয়া, ক্ষদ্ব লণ্ঠনের সহায়তায় পূৰ্ব্বকথিত ভগ্ন মন্দির-সংলগ্ন অশ্বথবুক্ষতলে যখন অগসিয়া দাড়াইল, তখন প্রসাদপুরের সীমান্ত পাহারায় দ্বিপ্রহরের ঘণ্টা বাজিয়া উঠিল। পথিমধ্যেই মাঝে মাঝে মৃদ্ধ পাথেয়াজের স্বরে মেঘ ডাকিতেছিল, পথিকদল এখানে আসিয়া দাড়াইতে না দাড়াইতে মেঘ কড় কড়, শঝেই সাড়া দিয়া উঠিল। সঙ্গে সঙ্গে দিগদিগন্তপ্রসারিত তড়িৎকম্পনে তাহাদের মূৰ্ত্তিতে এমন একটা রূপান্তরিত ছায়ালোক প্রতিফলিত হইয়া উঠিল যে, পরস্পরের মুখের দিকে চাওয়া চাওয়ি করিয়া তাহীদের বিভ্রম জন্মিতে লাগিল ; তাহার অস্তি বা নাস্তি ? এই পৃথিবীরই চিরপরিচিত লোক তাহারা—অথবা অন্ত কোন জগ ের সদ্যঃ কেন্দ্রদষ্ট জীব ? নিজেদের সেই অপ্রকৃত অদ্ভুতমূৰ্ত্তি দেখিয়। অনাদির বড়ই আমোদ বোধ হইল,--সে বিছাতের প্রতি বিদ্রুপভঙ্গীতে মুখভঙ্গী করিয়া-— একবার সাকাসের ক্লাউনের নাচ নাচিয়া লইল । তাহা দেখিয়া বসন্ত ও শরৎকুমারের হস্তসংবরণ দুঃসাধ্য হইয়া উঠিল । তাহাদের মৃদ্ধ চাপা হাসিতে বিজন বনপ্রদেশের স্তব্ধতা সহসা ভাঙ্গিয়া গেল ; নিদ্রিত পক্ষিগণ পাখী ঝাড়া দিয়া একবার ডাকিয়া উঠিল, একটা শৃগাল তাহীদের মুখের দিকে চাহিয়৷ পাশ ধেসিয়া চলিয়া গেল,—পরক্ষপেই মেঘগৰ্জ্জনের সহিত কেক্কাহুম্বা শব্দে জঙ্গলভূমি প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠিল, আপার কিছু পরেই রজনীর এই অকাল জীবনচাঞ্চল্য নীরবতামর্থ হইয়া পড়িল । দীনেশ কিন্তু সঙ্গীদের আনন্দমত্ততার সহিত যোগ রাখিতে পারে নাই । সে যদিও প্রকাশুভাবেই এখন ইহাদের দলভুক্ত, দেশপীড়নে যে দেশসেবা হয় ন, শরৎকুমারের এই উপদেশ যদিও একান্তভাবেই সে শিরোধার্য্য করিয়াছে, তথাপি নবগুরুর প্রতি এই অকুণ্ঠ আশ্রয় নিভরতাও তা হার মন হইতে পূৰ্ব্বজীবনের বিভীষিকা মুছি দিতে পারে নাই। স্বর্ণকুমারী দেবার গ্রন্থাবলী পথিপ্রদর্শনে সঙ্গিগণকে এই অশ্বখবৃক্ষতলে আনিয়া ফেলিয়া, নিঃসঙ্গ নির্লিপ্ত স্নানমুথেই সে শিকড়-বিজড়িত পাদপমূলের এক স্থানে বসিয়া পড়িল এবং লণ্ঠনটা পাশে রখিয়া, মন্দির গুহামুখের ইষ্টক সরাইতে প্রবৃত্ত হইল । আবার মেঘ ডাকিল, বিদ্যুৎ থেলিয়া গেল— সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি আরম্ভ হইল। কিন্তু বড় বড ফোটায় অল্প বৃষ্টি পড়িয়া এমন সহসা তাহ আবার থামিয়া পড়িল যে, অশ্বখ-গাছের সব পাতাও তাহাতে ভিজিল না । বাটপাড়ীতে আগত মনুষ্য তিন জন আপন আপন অঙ্গবস্ত্রের সামান্ত আদ্রত। হস্তম্বারা ঝাড়িয়া ফেলিলেন । অস্ত্রভারবহন উদ্দেতে ইহারা সকলেই সৈনিক বেশ ধরিয়াছিলেন, পরিধানে র্তাহীদের পশমী লঘু নিকার-বকার এবং মাথায় কানঢাকা লোম-টুপী । খুব বেশী বৃষ্টি না হইলে এই বৰ্ম্মপরিচ্ছদ ভেদ করিয়া তাহদের অঙ্গে জলপ্রবেশের সম্ভাবনা ছিল না । দীনেশ প্রবেশপথ মুক্ত করিয়া লণ্ঠন ধারণ করিল, —অন্ত সকলে তাহার অনুবত্তী হইলেন। দুই তিনটা সোপানধাপ অতিক্রম করিয়া মনিদরের ভগ্ন চাতালে তাহারা আসিয়া পড়িলেন, এখানে আসিয়া শরৎকুমার দীনেশের হাত হইতে লণ্ঠনটা স্বহস্তে লইয়া ঘুগ্রইম ফিরাইয়া একবার চারিদিক নিরীক্ষণ করিয়া দেখিলেন । দেখিয়া বিস্মিত হইলেন, দুর্গের আকারেই এই ক্ষুদ্র স্থান স্বরক্ষিত। ভাঙ্গা প্রাচীবের উপর সাজান ইটের স্ত,প জঙ্গলের ঝোপের সহিত মিলিয়া-মিশিয়া পরিখার মতই দুৰ্ভেদ্য হইয়াছে। বেষ্টনীর চারিদিকে মাঝে মাঝে গোলাকার ছিদ্র, ইহার মধ্য হইতে শত্রুর গতিবিধিও নজরে পড়ে এবং বন্দুকও চালান যায়। ইঙ্গ যেন ‘আনন্দমঠেরই ক্ষুদ্রতর পরিকল্পনা । চাতাল হইতে র্তাহারা প্রথম কক্ষে প্রবেশ করিলেন । মাতৃমন্দিরে মাতৃমূৰ্ত্তি দর্শনের আকাঙ্ক্ষাই সৰ্ব্বাগ্রে তিন জনের মনে জাগিয়া উঠিল—কিন্তু দেয়ালে কালিকাদেবীর একখানা সাধারণ পট ছাড়া অন্ত কোন ছবি কিংবা অপহৃত অস্ত্ররাশিও সেখানে দেখিতে পাইলেন না । অতঃপর দীনেশের সহিত অন্য ক্ষুদ্রতর গুহাকার কক্ষে প্রবেশ করিয়া তাহারা দুইটি মাত্র বন্দুকের সন্ধান পাইলেন। এই কক্ষটি বিস্ফোরক-প্রস্তুতাগার, তাহ পাঠক জানেন । এই গৃহের এক কোণে বহু পূর্বের পাষাণ-করালীমূৰ্ত্তিম ংসাবশেষ পাথর তিন চার টুক্র পুঞ্জীকৃত হইয়া পড়িয়া ছিল,-সিদূরমওনে পাথরগুলার আকার