পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬২ উত্তর হইল, “তোমরা একটু দূরে দূবে থেকে, নাম কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে—তপন সময়ে চিত একটা উত্তর যুগিয়ে যাবে । ক’টা গাড়ী আসবে টাকা নিয়ে জান দীনেশ ?” দীনেশের অাগেই বসন্থ উত্তর দিল – “ধনপতির দুটি গাড়ী আসছে বলেই আমি জানি।” “বেশ, ঠিক হয়েছে । ডাকাতব ত এখানেই আগে আসছে, ন দীনেশ ?” “ষ্ঠ্য । তুলক্রামে য। বীর আগে দেবী প্রণাম করা আমাদের একটা নিয়ম । অস্ত্রের অনাটন হ’লে তা ও এখান থেকে নিয়ে স্থা গুয়া হয় ।” “বেশ, বেশ, বাশা বাজিয়ে দাও । আমরা বেরিয়ে পড়ি, ওদের এখানে পাঠিয়ে আমরা গাড়ীর হেপাজতে নিযুক্ত থাকুব, বুঝলে ত ?” বসন্ত ও অনাদি একবাক্যে বলিয়া উঠিল, “বুঝেছি । চলুন, চলুন " র্তাহারা বায়ুগতিতে যেন ধাবমান হইলেন, দীনেশও বাণী বাজাইয়া দিয়া তাহদের অনুবৰ্ত্তা ङझेट ! সহসা পরশুরামজির দর্শনলাভে ডাকাতের দল অত্যন্ত উৎসাহিত হইয়া উঠিল । শরৎকুমার বলিলেন, “বিলম্ব বেশী নেই, তোমরা দেবীপ্রণাম ক’রে এস, আমরা পাহারায় থাকি, ইতিমধ্যে গাড়ী আটক করব।” এক জন উত্তর করিল, “তোমাব সঙ্গে আর ক’জন আছে সর্দার ? অাটুকাতে পাবে ত ? নয় ত আমরা ও দু-চার জন থেকে যাই ।” শরৎকুমার বলিলেন, "কিছু দরব বি নেই, দেবীপ্রণাম না করলে কার্য। সফল হয় না, আমাদের সকলেরই সঙ্গে অস্ত্র আছে।" সদার পরশুরামের উপর সকলেরই অগাধ ভক্তি, আজ গুরু আসেন নাই, বিজুমিঞাও অনুপস্থিত, ইহাকেই সদার মানিয়া লষ্টয় তাহারা সকলে মন্দিরমুখী হইল। শরৎকুমার সশস্ব সসৈন্স রাস্তার উপরে অগসিয়া গাড়ীর অপেক্ষা করিতে লাগিলেন । দৈব আজি সুপ্রসন্ন,— দুইটার সময় সাধারণতঃ ধনপতির গাড়ী এই পথ দিয়া যায়, আজ একটার অনতিক্ষণ পরেই গাড়ীর আওয়াজ পাওয়া গেল। তাহার। ছুটির তদভিমুখী হইলেন । বসন্ত ও অনাদি প্রথম গাড়ীর এবং শরৎকুমার ও দীনেশ দ্বিতীয় গাড়ার ঘোড়ার মুখের বলগা ধরিয়া গাড়ী থামাইয়া দিলেন। খুব একটা হৈচৈ পড়িয়া গেল, কোচমান লোকজন ডাকু ডাকু করিয়া চীৎকার করিয়া উঠিল, গাড়ীর স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী মাথার উপরে শায়িত ভোজপুরী পালোয়ান দুই জন মুখনিদ্রা ত্যাগ করিয়া বন্দুক ধবিল। কিন্তু মুহূৰ্ত্তমধ্যে এই হৈচৈ শেষ হইয়া গেল। ইহার চারিজনই মুখেব খোলোষ ত্যাগ করিয়া আপনদিগকে পুলিস বলিয়া তlহাদের অভয় প্রদান করিলেন, শুনিয়া তাহারা গোলাম বনিয়া গেল। দুই গtড়ার কোচমানেব পাশে অনাদি ও বসন্তকে চড়িতে বলিয়া দীনেশের সহিত শরৎকুমার সহিসের পাশ্বের স্থান দখল করিলেন । বসন্তের গাড়ীখানা ছিল গোড়ার দিকে, আজ্ঞা পাইবা মাত্র সে ঘোড়া হাকাইয়া চলিয়া গেল। অনাদি তাহার অমুবৰ্ত্তা হইবার ইচ্ছাস ঘোড়া দুইটাকে চাবুক কষাইবামাত্র পশ্চাৎদিক হইতে শরৎকুমার আজ্ঞা করিলেন—“এক মুহূৰ্ত্ত ঘোড়া থামাও, অনাদি, আর একটা গাড়ীর শব্দ যেন আসছে।” অনাদি রাশ কৰ্ষিয় ধরিল। উভয়েই কান খাড়া করিয়া দ্রুতগামী গাড়ীর আওয়াদ শুনিতে পাইলেন। কিন্তু অাওয়াজ হইতে বুঝিলেন যে, গাড়ীখান। এখানে পৌছিতে অন্ততঃ ৫ মিনিট বিলম্ব হইবে । ততক্ষণ এ গাড়ী বিজন রাস্ত অতিক্রম করিতে পরিবে । তিনি নামিয়া দাড়াইয়া অনাদিকে গাড়ী হাকাইয়া চলিয়া যাক্টতে অজ্ঞা করিলেন । অনাদি মনে মনে অস্বস্তি বোধ করিল, কিন্তু তাহার আজ্ঞা পালনে ত বিরত হইতে পারে না । অনাদি একবার কেবল বলিল-- “আপনার কাছে ত কোন অস্ত্র নেই, ডাকাতরা ত আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে।” “অাছে আছে, আমার কাছে পিস্তল অাছে । আমার জন্ত ভাবনা কোরো না। ডাকাতরা কিছু বোঝার অাগেই ও গাড়ীখানাকে বাচিয়ে নিয়ে আমি পালাতে পারব।” অনাদি অগত্যা গাড়ী চালাইয়া দিল । শরৎকুমার রাস্তায় দাড়াইয়া না থাকিয়া গাড়ীর শব্দ লক্ষ্যে অগ্রসর হইতে লাগিলেন। তখন আকাশের কালো রং অনেকটা ঘোলা হইয়া আসিয়াছিল। পূৰ্ব্বের অন্ধকার মেঘ দুই চারিখানা উত্তরে সরিজা আসিয়া সে দিকটা বেশ সাফ করিয়া দিয়া গেল। পথ মুক্ত হইয়া শেষ রাত্রির দিশাহার চাদ বনজঙ্গলের উপর অশ্রুময় ধোয়াটে আলোক ছড়াইয়া দিলেন। শরৎকুমার দূর হইতে দেখিলেন, একখানা নয়, দুইখানা গাড়ী রাস্তায় না আসিয়া, ঘুরিয়া জঙ্গলপথের কাছাকাছি গিয়া থামিল, তাহার পর পিপীলিকাসারির মত অস্ত্রধারী বহু মমুম্বা তাহ। হইতে বহির হইয়া পড়িল। শরৎকুমার বুঝিলেন,