পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন-রাত্র গেণ যে, পা ভাঙ্গিয়া এত দিন যে মিসেস্ রো অসহ যন্ত্ৰণীভোগ করিয়াছিলেন—তাহা তাহার স্মৃতির বিষয় মাত্রই হইয়া রছিল। বলা বাহুল্য, মিঃ মনরোর সতর্কতা সত্বেও, এই চিকিৎসাস্থত্রে ম্যাজিষ্ট্রেট-দম্পতির সহিত শরৎকুমারের গভীর বন্ধুত্ব জন্মিল । বন্দীর সাজ-সজ্জা ফুড়িয়া-- ভিতরকার আসল মানুষটি তাছাদের চোথে ধরা পড়িল। শরৎকুমার যে নিৰ্দ্দোষ, তাহাতেও তাঁহাদের সংশয়মাত্র রছিল না । ইংরাজের আর যত দোষই থাকুক, সাধারণতঃ ইংরাজ গুণের বশ । একান্তভাবে স্বার্থীন্ধ না হইলে শক্র. মনুষ্যত্বকেও শ্রদ্ধা না করিয়া ইংরাজ থাকিতে পারে মা । দুঃখের বিষয় এই, অবস্থাচক্রে এ দেশের মনুষ্যত্বহীন মনুষ্যই সচরাচর উাহীদের দৃষ্টিতে পড়ে । যে দিন শরৎকুমার ম্যাজিষ্ট্রেটকে জানাইলেন যে, তাহার আর রোগীকে দেখিতে অগসিবার দরকার মাই, সেই দিন "সাহেব’ মেম দুই জনেই দুঃখ অমুভব করিলেম । বিদায়দামের সময় মিঃ রো তাহাকে বলিলেন, “আমি কি অপমার কোম উপকার করতে পারি?” শরৎকুমার একটু ভাবিয়া বলিলেন—“নিশ্চয়ই পারেম –কিন্তু জানি না, সে প্রার্থনা করা আমার পক্ষে ঠিক হবে কি না ?” মিসেস রো অশ্রুপূর্ণনেত্রে বলিলেন, "বড়ই দুঃখ যে, আমার স্বামী আপনাকে ছেড়ে দিতে পারেন মা ! কেন না, আপনি যখন অভিযুক্ত, তখন বিচার পৰ্য্যন্ত আপনাকে জেলে থাকৃতেই হবে। তবে অামার ধ্রুব বিশ্বাস—বিচারে আপনি নিশ্চয়ই দোষমুক্ত হবেস ” শরৎকুমার বলিলেন—“মা, এরূপ অসম্ভব প্রার্থমার ইচ্ছ। আমার মনে আসে নাই। যদি ম্যজিষ্ট্রেট ‘সাহেব' সম্মতি দেন—তা হ’লে রাজাবাহাদুর যে কিরূপ বিপদগ্ৰস্ত, টেলিগ্রাম ক’রে ক্লাউডেম ‘সাছেবকে আমি সে কথা জানাই । তিনি এখন পালর্ণমেণ্ট সভার এক জন অাইয়িস মেম্বর, তার উদ্যোগে রাজাবাহাদুর নিস্কৃতি পেতে পারেন ।” ইতিপূৰ্ব্বে পাঠককে জানাম হয় নাই যে, গতর্ণমেণ্টের সহিত বনিনাও না হওয়ায় মিঃ ক্লাউডেম কৰ্ম্মত্যাগপুৰ্ব্বক দেশে গিয়া পালপমেণ্টের এক জম সদস্ত নির্বাচিত হইয়াছেন। মিসেস রো অtছলাদিতচিত্তে কহিলেম,—“আচ্ছা, আমি নিজেই এ খবর তাকে টেলিগ্রামে জানাব • د--iه ૧૭) এবং চিঠিতেও লিখব । তিনি আমার cousin হন । আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন “ শরৎকুমার ইহার পর শাস্ত সমাহিতচিত্তে জেলে ফিরিয়া গেলেন। ম্যাজিষ্ট্রেট র্তাহার জন্য জার কিছু করিতে না পারুন–নির্জন কারাবাস হইতে সাধারণ জেলখানায় তাহাকে সরাইয়া দিলেন এবং অন্ত কঠোর পরিশ্রমের পরিবর্তে হাসপাতালের কাৰ্য্যতার তাহাকে দেওয়া হইল । রাজা যখন বন্দিরূপে প্রসাদপুরে আনীত হইলেন, তখন ম্যাজিষ্ট্রেটের কৃপায় উtহাকেও জেলে অfবদ্ধ থাকিতে হইল না, বিচার শেষ পর্য্যস্ত প্রসাদপুর-রাজবাড়ীতেই তিনি interned হইয়া রছিলেন । অষ্টাবিংশ পরিচ্ছেদ রাজা অতুলেশ্বর বিদ্রোহিত অপরাধে গ্রেপ্তার হইবার পূর্ববৰ্ত্তী সন্ধ্যাকালে হ্রদের ধারে কোমল অস্তিরণ বিস্তৃত বাধান চাতালের উপর একাকী বসিয়াছিলেন । হাসি ও তাঁহায় ম; দিদিমার সহিত রাজকন্যা বায়স্কোপ দেখিতে গিয়াছেন, গু মাচরণও র্তাহীদের সঙ্গ গ্রহণ করিয়াছেন। চন্দ্রঙ্গীন রাত্রি, তারক-ভূষিত আকাশচ্ছটায় কাননহ্রদের স্নিগ্ধ জ্যোতিৰ্ম্মণ্ডিত রূপ মূৰ্ত্তিমতী একখানি মায়ারাগিণীর মত য়াজার নম্বন-মন মুগ্ধ করিয়া তুলিয়ছিল । সুরলহরীর সেই চিত্রাপিত দৃপ্তের দিকে চাহিয়া মনের কোণে হারান গানের দুইটা ছজ তাহার মসে পড়িয়া গেল,— মুরলী কি বীণা— আহি মরি কি বাজিল তী’ ত জামি না ! সহসা মূহূমন শীত বাতাসে তালপত্রাবলী হইতে মৰ্ম্মর গীতি উঠিল, সঙ্গে সঙ্গে যেন এক স্বয়সিক অদৃপ্ত জলদেবতা, বাধা নেীকাথামাকে নৃত্যতঙ্গে জুলাইয়া দিয়া, পুষ্পগন্ধ উড়াইয়া লইয়। রাজার মুখে সকৌতুকে একটা ঝাপটা মায়িয়া গেল । একি ! হালি আসিল না কি ? ঠিক তাহারই অঙ্গবসনের জবস এ যে ! রাজা আশে পাশে পশ্চাতে মুখ ফিরাইয়া দেখিলেন,—কেহ কোথাও মাই, তিমি একাকী । একটা মৃন্থ দীর্ঘ নিঃশ্বাস উঠিল । সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়িল--হসির সে দিমের সেই শেষ কথা—“আপমি ষে রাজ ।”