পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন-রাত্র প্লাজমাতা চমকিয়া উঠিলেন। জ্যোতিৰ্ম্ময়ী কাছে আসিয়া হাত ধরিয়া টানিয়া বলিলেন – "চল ঠাকুরমা-খেতে চল, বেল প’ড়ে গেছে একেবারে—আর দেরী করলে চলবে না।” রাজমাত উঠিয়া রাজকন্তfর কাধে ভর দিয়া দাড়াইম্ব কহিলেন--”খাব না, রাজা, খাব না এথন, নিয়ে চল আমাকে শু্যামসুন্দরের কাছে, তার পদতলে হত্য দেব, তিনি আমাকে নিন— নয় অতুলকে বঁচোন।” বলিতে বলিতে মহারাণী ভূমিতলে কাপেটের উপরই শুইয়া পড়িলেন। রাজকন্তী কাছে বসিয়া মাথায় হাত বুলাইতে বুলাইতে বলিলেন, “কি হয়েছে ঠাকুরমা—নতুন কিছু কি রায়-খুড়ে ব’লে গেলেন ?” অতুলেশ্বর স্বজনকে রায় খুড়েী বলেন, তাই জ্যোতিৰ্ম্ময়ীও র্তাহীকে সেই নামে ডাকেন। “বলবে অার কি ? অতুল যে চেক বিদ্রোহী ছেলেদের দিয়েছিলেন, সেই চেক তার হাতে এসেছে, সেটা দেখালেন । এ চেক আদালতে যদি দাপিল করেন তিনি, তবে আর কোন কথাই মানবে না সরকার /* এ কথায় অবিশ্বাস করিবার কিছু ছিল না ; রাজকন্যার মুখ পংশুবর্ণ হইয়া উঠিল । একটুখানি wৰ লইয়। তিনি বলিলেন, “রায়-খুড়ে কি সত্যিসত্যি সে চেক কোর্টে দাখিল করবেন ? এতদুব সৰ্ব্বনাশ কি ভূমি আমাদের করতে পারেন " যাহার অন্তঃকরণ মহ২–সে এইরূপ করিয়াই ভাবে । মহারাণী বলিলেন, “বলেছে ত সুজন—তা করবে ন!—তবে—” "তবে কি ?” *বন্ধুতার বদলে তিনি বন্ধুতা চাল ।” "সে কথা ত বলাই বাহুল্য, এ উপকার কি আমরা কখনো ভুলতে পারব ?” “আরে পাগলি, তিনি চান তোকে তার পুত্রবধু করতে ; তা নইলে—” রাজমাতার আর কথা ফুটিল না ; রাজকন্তীও নিম্পদ নিৰ্ব্বাক্ হইয়া গেলেন, মুজনের সর্ত বুঝিতে পারিলেন । কিছু পরে উঠিয়া জ্যোতিৰ্ম্মন্ধী জানালার কাছে গিয়া দাড়াইলেন, উৰ্দ্ধমুখ হইয়া মনে মনে কহিলেন – “হে নিৰ্ম্মম নিষ্ঠুর বিধাতা, ঐটুকু পারি নি শুধু ; নিজের কণ্ঠ তোমার খাড়ার তলে বাড়িয়ে ধরেছি, তবু ঐটুকু পারি নি প্ৰভু, ঐটুকু পারি মি । আমার ष्र-•१ VᏜ ভালবাসার দেবতাকে মন থেকে ছিন্ন ক'রে তোমার চরণে বলি দিতে পারি নি। তুমি কিন্তু নিষ্ঠুর হরি –তাই চাও, তোমার ইচ্ছাই পুর্ণ হোক ; পরীক্ষা শেষ কর, যাহা অসম্ভব, তাহাই সম্ভব হোক, আমার হৃদয়প্রাণের পরিপূর্ণ সম্পদ অখণ্ড প্রেম খণ্ড খণ্ড ক’রে তোমার চরণে সমৰ্পণ করি— এ বলি তোমার গ্রহণীয় হোকু ” ফিরিয়া আসিয়া ঠাকুরমাকে বলিল –“ঠাকুরন, ভেবো না তুমি, ওঠে, কিছু খেয়ে নেবে চল, যা বলছ তুমি, তাই হবে ।” ঠাকুরমা বিস্ময়ে উঠিয়া বসিলেন । রাজকতা বলিলেন, “এখনও সম্ভবতঃ রায় বাহাদুর যাবার ঘরেই আছেন—আমি যাই—অাব দেরী করব না । আমার যা বলবার, তাকেই বলব। তুমি চল, প্রসাদ মুখে দাও একটু ” রাজমাতার বুক ফাটিয়া উঠিল, রাজকুমারীর মনের বেদন তিনি নিজের মনে অমুভব করিলেন, কাতর দৃষ্টিতে তাহার মুখের দিকে চাহিয়া বলিলেন —“উঠছি, রাজা, উঠছি, তুই যা, আমি উঠছি।” রাজকন্য। চলিয়া গেলেন, রাজমাতা মন্দিরে গিয়া গুণমসুন্দরের পদতলে ধন্না দিয়া পড়িলেন । চতুস্ত্রিংশ পরিচ্ছেদ "নানি গো, নানি, শোন গো নানি ; মানান্ধে আজি আনতে যাচ্ছি মোরা তোর তরে ।” বয়সভারে অবনত পৃষ্ঠ হইয়াও এক জন বৃদ্ধ লাঠি হাতে বেশ জোরে জোরেই পথ চলিতেছিল । রাস্তার দুষ্ট ছোকরা দুই জন বুড়ীর এই হাস্তকর সামর্থ্যে কৌতুকপীড়িত হইয়া উক্তরূপ সম্ভাষণবাক্যে অভিনন্দিত করিতে করিতে কন্তু বা তাহার নিকটে, কভু বা হাসিয়া বুড়ীর উদ্ধত লাঠির বজ্ৰকোপ হইতে কিছু দূরে হটিয়া দাড়াইতেছিল । এইরূপ আন্তর্জাতিক বাধা-বিঘ্নপত্ত্বেও বুড়ীর গতি এবং ছেলেদের ব্যঙ্গোক্তি কিন্তু বেশ অবিরামগতিতেই চলিয়াছিল । ক্রমশ: এই রহস্তfলাপ গড়াইয়া আসিল প্রসাদপুর-প্রাসাদসন্নিহিত রাজপথে। তখন বেলা ছুইটী । পথে বড় একটা লোকচলাচল নাই। এক জন চুড়িওয়াল এই কৌতুকদৃপ্তের মধ্যে আসিয়া পড়িয়া ডাক-হাক বন্ধ করিয়া দিয়া এইখানেই দাড়াইয়া গেল। রাস্তার অপর পাশ্বের এক জন গাড়োয়ান এই দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া হাসিয়া গরুর ল্যাজ মলিতে