পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন-রাত্রি রাজকন্ত ? আমিও সবে মাত্র আজকেই মুক্তি লাভ করেছি—” "আজকেই—কেবল আজকেই ?” রাজকন্যার এই আনন্দ-ঔৎসুক্যপূর্ণ প্রশ্নের উত্তরে ডাক্তার বলিলেন,—হঁ্য রাজকন্তে, আজকেই। আর সঙ্গে সঙ্গেই সদাশয় ম্যাজিষ্ট্রেটের কৃপায় এই মুসংবাদের বার্তাবহ হয়ে এসেছি ।* “বাবাকে অবগু এ খবরটা জানিয়ে এসেছেন ?” “না, আমি আগে এইখানেই এসেছি।” রাজকন্তী অধীরভাবে বলিয়া উঠিলেন—"তিনি তবে এখনও এ খবর জানেন না ? বেশ ত আপনি ? চলুন চলুন, এখনই তার কাছে যাই ।” রাজকন্তী উঠিয়া দাড়াইলেন,—শরৎকুমার আবার একটু হাসিয়া বলিলেন,—“চলুন, ধাচ্ছি, কিন্তু এতক্ষণে তিনি এ খবর পেয়েছেন—* "কে দিলে ? কি ক’রে পেলেন ?” “আমার সঙ্গে একই ট্রেণে এলেন, আমাদের দেশপুজ্য গোবিন্যজী। রাজা বাহাদুরের সঙ্গে দেখা করতেই তিনি এসেছেন । তার মারফৎ রাজাকে খবর পাঠিয়ে আমি আপনার কাছে এলুম।” রাজকণ্ঠ অহলাদে বলিয়া উঠিলেন, "মহাত্মাজী এসেছেন ? কত দিন থেকে যে র্তীকে দেখার ইচ্ছে করছি। চলুন তবে—-চলুন চলুন-” দুষ্ট চাদ অবসর বুঝিয়। এই সময় তঁtহাদের প্রতি সন্মোহন বাণ ছুড়িল—রাজকন্যা শরৎকুমারের প্রেমদীপ্ত মুখের দিকে চাহিয়৷ সপ্তপদী-গমনের এক পদ যেন বাড়াইয়া দিলেন । শরৎকুমার তাহার হাত ধরিয়া পুনরায় বেঞ্চে বসাইয়া, সামুনয়ে কহিলেন— “একটুখানি অপেক্ষ করুন ; শুধু আর একটি মিনিট বমন ; একটা কথা আছে।” রাজকন্ত। পলকহীন, পূর্ণ কটাক্ষে তাহার দিকে চাহিয়া নীরবে যেন জিজ্ঞাসা করিলেন--"কি কথা ?” উত্তর পাইলেন,"এই স্ব-খবরের পুরস্কার রাজকুমারি ? আমাকে নিষ্কাম বার্তাবহ মনে করবেন না। এই শুভদিনে আমি পুরস্কার-প্রার্থী।” ষট ত্রিংশ পরিচ্ছেদ শরৎকুমারের কথা রাজকন্তার কামে তাল করিয়া পৌঁছিতে না পৌছিতে র্তাহার মাথা ঘুরিয়া উঠিল ; তিনি কাষ্ঠাসনের এক পাশের হাতাখানা দুই হাতে ধরির ঘূর্ণ্যমাণ মন্তক তাহার উপর রক্ষা S& করিলেন । শরৎকুমার ব্যস্তভাবে এক হাতে তাহার মাথা ধরিয়া রাখিয়া--অন্ত হাতে পকেট হইতে রুমাল বাহির করিয়া তাঁহাকে বীজন করিতে লাগিলেন । কিন্তু বালিকা প্রকৃতপক্ষে দুৰ্ব্বল-প্রকৃতি নহেন, তাহার ক্ষণিকের এই দুর্বলতা-অবসাদ ক্ষণিকের মধ্যেই তিরোহিত হইল । শরৎকুমারের হাতের ভর হইতে মাথা সরাইয়া লইয়া বেঞ্চের উপর তিনি আবার সোজা হইয়াই বসিলেন ; ডাক্তারের প্রেমপুর্ণ উৎকণ্ঠ-ব্যাকুল মুখের দিকে চাহিয়, দৃষ্টিতে প্রেমিকার আবেগ, স্বরে নিরাশার ক্ষুব্ধ ব্যথা প্রকাশ করিয়া বলিলেন —“ডাক্তারদ, আমি অন্তের বাগদত্ত ।” - শরৎকুমার এতক্ষণে বুঝিলেন, রাজকন্তী ৰেন র্তাহার আগমনে হর্ষ প্রকাশ করেন নাই। “তিনি বন্দী বলিয়া রাজা কি তবে অন্ত পাত্র মনোনীত করিয়াছেন ? এই ভাবিয়া তীব্র যাতনায় ডাক্তার নিৰ্ব্বাক্ হইয়া পড়িলেন, কিছু পরে শুষ্ক কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিলেন--"কে সে ?” “উত্তর হইল –“বিজন রায় ।” “বিজন রায় !” ডাক্তারের নৈরাশু-বেদন অবজ্ঞা-ঘৃণাভারে যেন নিম্পেষিত হইয়া উঠিল । তিনি অসংযত অtবেগে কহিলেন—“রাজা বাহাদুর কি জানেন না—যে, বিজন—“ র্তাহাকে কথা শেষ করিতে না দিয়াই জ্যোতিস্বাধী বলিলেন, “ন, বাব এ বিষয়ের কিছুই জানেন না, আমি নিজেই রায় বাহাদুরকে কথা দিয়েছি।”

  • নিজে, আপনি নিজে !” যদি আকাশ-খণ্ড তদণ্ডে সহসা শরৎকুমারের মাথার উপর খসিয়া পড়িত, তাহ হইলেও তিনি বুঝি এত ব্যথিত-এত বিস্মিত হইতেন না ।

রাজকন্ত! আবার বলিলেন, “হ্যাঁ, আমি নিজে, ত হ'লে বাবা বিপন্মুক্ত হবেন, এই বিশ্বাসে । যে চেক তিনি বিদ্রোঙ্গীদের দিয়েছিলেন—সে চেক রায়খুড়োর হাতে এসে পড়েছিল---” কিন্তু সে যে জলি চেক !” "বুঝি নি তাঁ। কিন্তু কথা দিয়ে ত আর ফেরান ६iब्र नौ ।” “সত্যই কি মনে করেন, আপনি সে কথায় বাধা পড়েছেন ?” “মনে করি বৈ কি । নয়—ধৰ্ম্মতঃ শপথ *

  • ফাকি দিয়ে তারা যে শপথ আদায় ক’রে নিয়েছে, ভুল বুঝে–ভুল বুঝে যে তাদের তুমি কথা

সে ত আমার মুখের কথা