পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন-রাঞ্জি পিতার মুক্তি ভিক্ষণ করেছি। श्रीख़ ।* ভগবান যে সত্যই লঘুপাপে বালিকাকে গুরুদণ্ড দিবেন, ইহা শরৎকুমার কিছুতেই মনে করিতে পারিলেন না ; তিনি আশ্বস্ত চিত্তে কহিলেন—“সেই কথাই ঠিক । ভগবান তোমার মনের সংশয় মোচন করবেন নিশ্চয়ই । তোমার পিতা এ ক্ষেত্রে তারই প্রতিনিধি,—আমার অনুরোধ রক্ষা কর, অামাকে কথা দাও, এ সম্বন্ধে তিনি তোমার পথে যে কৰ্ত্তব্য স্থির করবেন, তাই তুমি ভগবানের আদেশ ব’লে মেনে নেবে । রাজাবাহাদুর যে তোমার কৰ্ত্তব্যপালনে বিরোধী হবেন না—-এ বিশ্বাস কর ত ?” জ্যোতিৰ্ম্ময়ী একটু ভাবিয়া বলিলেন—“বেশ, তাই হোকৃ। কিন্তু—কিন্তু আমি ত তাকে সব কথা খুলে বলতে পারব না—আমি যে কি রকমে কতদূর বাধা পড়েছি, তাও ত ঠিক বোঝাতে পারব না, এ ছাড়। বিপক্ষের প্রতি তিনি এমনই শ্রদ্ধাহীন যে, খাটি পক্ষপাতশূন্ত বিচার এ ক্ষেত্রে তার পক্ষে সম্ভবপর না-ও হ’তে পারে ।” ডাক্তার একটুখানি থামিয়া বলিলেন—“ত হ'লে মহাত্মাজীকেও এখানে আনি ? তিনি ত দিব্যদর্শক, --তার বিচার ত নিভুল হবে ? রাজাবাহাদুরের মুক্তিপত্ৰখানা আমার কাছে আছে ; সেখানা তাকে দিয়ে দুজনকেই আমি সঙ্গে ক’রে আনছি। আর তারা যদি অণুমতি দেন ত এইখানেই আমাদের ভাগা-বন্ধন হয়ে যাবে।” বলিয়া শরৎকুমার রাজকুমারীর হাতখানি আর একবার হাতের মধ্যে ধরিলেন । তাছার পর তাহাকে ছাড়িয়া দ্রুতপদে সেখান হইতে চলিয়া গেলেন। খুড়দাদ উপলক্ষ সপ্তত্রিংশ পরিচ্ছেদ ৬াক্তার চলিয়া যাইবার পর মুহূৰ্ত্তকাল জ্যোতিস্ময়ী স্তম্ভিতভাবে বসিয়া রছিলেন। আজিকার ঘটনাবলী তরঙ্গ স্রোতের মত তাহার মনের উপর দিয়া অবিশ্রাস্তবেগে চলিয়া যাইতে লাগিল । সহসা র্তী হার মনে হইল, রাজাকে ডাক্তায় এথানে ডাকিয়া আনিতে গেলেন, ইহা ত ঠিক হইল না,—তাহারই ত এখনই পিতার নিকট যাওয়া উচিত ছিল । তিনি শরৎকুমারের অমুসরণ উদ্দেশ্রে ভাড়াতাড়ি উঠিয়া কিছু দূর অগ্রসর হইলেন, কিন্তু যথাসাধ্য দূরে দৃষ্টিপাত কল্পিয়াও র্তাহাকে আর দেখিতে পাইলেন না, تدسسؤه ৯৭ বুঝিলেন, তিনি বহুদূরে চলিয়া গিয়াছেন ; হয় ত বা এতক্ষণে প্রাসাদেহ পেছিয়া থাকিবেন। একাকীই জ্যোতিস্ময়ী তখন কানন-পথে এ ত চলিতে লাগিলেন । হঠাৎ যেন পাতার উপরে সাবধানে হস্ত— পদপথা শুনিতে পাইলেন । পশ্চাতে মুখ ফিরাইয়া অদূরে বনমধ্যে একটা ছায়ামূৰ্ত্তি লক্ষ্য করিলেন,-- তখন পিস্তলের আওয়াজ উঠিল ; মুখুলে জ্যোতিৰ্ম্মন্ধী ভূমি-লুণ্ঠত হইয়া পড়িলেন । তিনি পড়িয়া যাইবামাত্র এক ব্যক্তি নিকটে আসিয়। তাছার পাশ্বদেশ অধিকার করিয়া বসিল । পথিপাশ্বের গাছপালার আiড়াণ ইহঁতে চাদের আলে। তখন কাননের এই অংশে কুহেলি-মলিনতা bালিয়া দিয়াছিল। খুনী সেই অস্পষ্ট আলোকে ভূপতিত মুমুৰুর প্রতি ঝু কিয় তাহাকে নিরীক্ষণ করিয়া দেখিয়; বলিয়া উঠিল,—"এ কি ! এ ত ডাক্তার নয় । ইনি যে রাজকন্যা ! হান্স হায় ! এ কি করলেম ! কি হ’ল এ ?” তিনি মৃত কি তখনও জীবিত, তাহা বুঝিবার জন্স অজ্ঞান রাজকন্তকে সে একবার নাড়ী দিল । রাজকুমারী চোখ পুলিলেন ; পাশে লোক দেখিয়া ভাবিলেন,—শরৎকুমার বুঝি ! কিন্তু বিজন যখন আহিলাদের স্বরে বলিয়া উঠিল, “বেচে আছেন, —এখনও বেঁচে আছেন ইনি, তখন তাংরি ভুল ভাঙ্গিল,--জিজ্ঞাসা করিলেন--"কে তুমি ?” উত্তর হইল –“চিনতে পাব্‌ছ না আমাকে ? আমি যে বিজন রায় ! আমারই যে তুমি বাগদত্ত ! স্বেচ্ছাতেই যে আমার পত্নী হ'তে স্বীকৃত হয়েছ তুমি। আর নিজের হাতে আমি তোমাকে বধ করলুম! উ:, কি জ্বালা ! হা ভগবান, এ পাপের প্রায়শ্চিত্ত কি কিছু আছে।” রাজকুমারী তখনও পুর্ণ জ্ঞান ফিরিয়া পান নাই। প্রকৃত ব্যাপার ঠিক বুঝিতে পারিলেন না, একবার উঠিবার চেষ্টা করিলেন ; কিন্তু দেহে বেদন অনুভব করিয়া আবার নিম্পণ হইয়া গেলেন । ক্ষতস্থান হইতে রক্তস্রাব নির্গত হইতে লাগিল,-জ্যাকেট ফুড়িয় তাহার বা দিক্‌টা সমস্তই রক্তময় হইয়া উঠিল । বিজনের মাথায় একখান উড়ানি পাগড়ীর মত করিয়া বাধা ছিল। সেখানা মাথা হইতে খুলিয়া, জ্যোতিৰ্ম্ময়ীর বাচ্চ ও বক্ষের মধ্যস্থিত রক্তাক্ত অংশ গ্ৰহ! দ্বারা চাপিয়া ধরিয়ু পাগলের মত বলিল, “কি করণেম, হায়, এ কি হোল ? যে পিস্তল ছুড়লেম ডাক্তারের উদেশে —কার বুকে গিয়ে হায় রে—তার গুণী বিধলে ?” রাজকুমারী আর একবার উঠিতে চেষ্টা করিলেন,