বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:স্বামিজীর সহিত হিমালয়ে - ভগিনী নিবেদিতা (১৯৫১).pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলমোড়ায় প্রাতঃকালীন কথোপকথন

সুকুমার হৃদয়েরও যে, যে কোন মুহূর্তে সংসারের পাপ-কালিমায় কলুষিত হইবার আশঙ্কা বর্ত্তমান, এই সম্বন্ধে তিনি সেইখানে এক ঘণ্টা বা ততোধিক কাল দাঁড়াইয়া বর্ণনা করিতে লাগিলেন। তিনি সেই ভারতবর্ষীয়া সন্ন্যাসিনীর কথা উল্লেখ করিলেন, যিনি মানুষ কথন ধর্ম্মপথে আপনাকে সম্পূর্ণ নিরাপদ জ্ঞান করিতে পারে, এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসিত হইয়া এক খুরি ছাই উত্তরস্বরূপে প্রেরণ করিয়াছিলেন। কারণ রিপুগণের বিরূদ্ধে সংগ্রাম সুদীর্ঘ ও ভয়ঙ্কর এবং যে কোন মুহূর্ত্তেই বিজেতার বিজিত হইবার আশঙ্কা রহিয়াছে।

 তাঁহার কথা শুনিতে শুনিতে মনে হইতে লাগিল, যেন এই ত্যাগের পতাকা এক মহান্‌ বিজয়ের পতাকা, যেন “চিরন্তন বধূস্বরূপ শ্রীভগবানকে বিবাহেচ্ছু আত্মার নিকট দৈন্য এবং আত্মজয়ই একমাত্র উপযুক্ত আভরণ এবং জীবনটা যেন দানযজ্ঞের এক সুদীর্ঘ সুযোগ, আর আমাদের আমার বলিতে যদি এমন কিছু থাকে যাহার প্রার্থী আমরা পাই না, সেইটাই শুধু নষ্ট হইল মনে করিয়া দুঃখপ্রকাশ করা উচিত।” বহু সপ্তাহ পরে কাশ্মীরে যখন তিনি পুনরায় এই ভাবের কথা কহিতেছিলেন, সেই সময় আমাদের মধ্যে একজন সাহস করিয়া তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল যে, তিনি এইরূপে যে ভাবের উদ্রেক করিয়া দিতেছেন, উহা ইউরোপে যে দুঃখোপাসনাকে রোগীর লক্ষণ বলিয়া অত্যন্ত ঘৃণার চক্ষে দেখে, তাহাই কি না।

 মুহূর্ত্তমাত্র বিলম্ব না করিয়া স্বামিজী উত্তর করিলেন, “আর সুখের পুজাটাই বুঝি ভারী উঁচুদরের জিনিস?” তারপর একটু থামিয়া পুনরায় বলিলেন, “কিন্তু আসল কথা এই যে, আমরা দুঃখেরও

৪৫