পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Σ Σ & স্বামীজীর বাণী ও রচনা লোকে পরমাত্মীয়কে যেমন যত্বের সহিত নানা উপচারের দারা সেবা করে, সেইরূপ তিনি যেখানেই যাইবেন, লোকে সেই স্থানের সর্বোৎকৃষ্ট বস্তুসমূহের দ্বারা তাহার সেবা করিবে। এখানে কোথাও যতক্ষণ পর্যন্ত এক টুকরী রুটি থাকিবে, ততক্ষণ কোন ভিক্ষুককেই না থাইয়া মরিতে হয় না । এই দানশীল দেশে আমাদিগকে প্রথম দুই প্রকার দানে সাহসপুর্বক অগ্রসর হইতে হইবে। প্রথমতঃ আধ্যাত্মিক জ্ঞানদান। এই জ্ঞানদান আবার শুধু ভারতেই সীমাবদ্ধ থাকিলে চলিবে ন—সমগ্র জগতে ইহা প্রচার করিতে হইবে । ইহাই বরাবর হইয়া আসিয়াছে র্যাহারা তোমাদিগকে বলেন ভারতীয় চিস্তারাশি কখনও ভারতের বাহিরে যায় নাই, র্যাহারা তোমাদিগকে বলেন ভারতের বাহিরে ধর্মপ্রচারের জন্য আমিই প্রথম সন্ন্যাসী গিয়াছি, তাহারা নিজেদের জাতির ইতিহাস জানেন না । এই ব্যাপার অনেকবার ঘটিয়াছে। যখনই জগতের প্রয়োজন হইয়াছে, তখনই এই আধ্যাত্মিকতার অফুরন্ত বন্য জগৎকে প্লাবিত করিয়াছে। অগণিত সৈন্যদল লইয়া উচ্চরবে ভেরী বাজাইতে বাজাইতে রাজনীতিক শিক্ষা বিস্তার করা যাইতে পারে ; লৌকিক জ্ঞান বা সামাজিক জ্ঞান বিস্তার করিতে হইলেও তরবারি বা কামানের সাহায্যে উহা হইতে পারে ; কিন্তু শিশির যেমন অশ্রুত ও অদৃষ্ঠভাবে পড়িলেও রাশি রাশি গোলাপ-কলিকে প্রস্ফুটিত করে, তেমনি আধ্যাত্মিক জ্ঞানদান নীরবে—সকলের অজ্ঞাতসারেই হওয়া সম্ভব । f ভারত বার বার জগংকে এই আধ্যাত্মিক জ্ঞান উপহার দিয়া আসিতেছে । যখনই কোন শক্তিশালী দিগ্বিজয়ী জাতি উঠিয়া জগতের বিভিন্ন জাতিকে একস্থত্রে গ্রথিত করিয়াছে, যখনই তাহারা পথঘাট নির্মাণ করিয়া বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত সুগম করিয়াছে, অমনি ভারত উঠিয়া সমগ্র জগতের উন্নতিকল্পে তাহার যাহা দিবার আছে, অর্থাৎ আধ্যাত্মিক জ্ঞান বিতরণ করিয়াছে। বুদ্ধদেব জন্মিবার বহুদিন পূর্ব হইতেই ইহা ঘটিয়াছে। চীন, এশিয়া-মাইনর, ও মালয়দ্বীপপুঞ্জের মধ্যভাগে এখনও তাহার চিহ্ন বর্তমান । ষখন সেই প্রবল গ্রীক দিগ্বিজয়ী তদানীন্তন পরিচিত জগতের সমগ্র অংশ একত্র গ্রথিত করিলেন, তখনও এই ব্যাপার ঘটিয়াছিল--তখনও ভারতীয় ধর্ম সেই-সকল স্থানে ছুটিয়া গিয়াছিল । আর এখন পাশ্চাত্য দেশ যে-সভ্যতার গর্ব করিয়া থাকে, তাহ। সেই মহাবস্তার অবশিষ্ট চিহ্নমাত্র। এখন আবার সেই সুযোগ উপস্থিত ।