পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>之8 স্বামীজীর বাণী ও রচনা আবার আমাদের ভাষ্যকারদিগের ভাষ্য আলোচনা করিতে গেলে আর এক বাধা উপস্থিত হয় । অদ্বৈতবাদী ভাষ্যকার যখন অদ্বৈতপর শ্রুতির ব্যাখ্যা করেন, তখন তিনি উহার সোজাসুজি অর্থ করেন ; কিন্তু তিনিই আবার যখন দ্বৈতপর শ্রুতিব ব্যাখ্যায় প্রবৃত্ত হন, তখন উহার শব্দার্থ বিকৃত করিয়া উহা হইতে অদ্ভুত অদ্ভূত অর্থ বাহির করেন। ভাৰ্য্যকার নিজ মনোমত অর্থ বাহির করিবার জন্য সময়ে সময়ে ‘অজা’ ( জন্ম-রহিত ) শব্দের অর্থ ছাগী করিয়াছেন—কি অদ্ভুত পরিবর্তন ! দ্বৈতবাদী ভাষ্যকারেরাও এইরূপ, এমন কি ইহা অপেক্ষাও বিকৃতভাবে শ্রুতির ব্যাখ্যা করিয়াছেন। যেখানে যেখানে তাহারা দ্বৈতপর শ্রুতি পাইয়াছেন, সেগুলি যথাযথ রাখিয় দিয়াছেন, কিন্তু যেখানেই অদ্বৈতবাদের কথা আসিয়াছে, সেইখানেই তাহারা সেই-সকল শ্রুতির যথেচ্ছ ব্যাখ্যা করিয়াছেন । এই সংস্কৃত ভাষা এত জটিল, বৈদিক সংস্কৃত এত প্রাচীন, সংস্কৃত শব্দশাস্ত্র এত সুপরিণত যে, একটি শব্দের অর্থ লইয়া যুগযুগান্তর ধরিয়া তর্ক চলিতে পারে। কোন পণ্ডিতের যদি খেয়াল হয়, তবে তিনি যেকোন ব্যক্তির প্রলাপোক্তিকেও যুক্তিবলে এবং শাস্ত্র ও ব্যাকরণের নিয়ম উদ্ধৃত করিয়া শুদ্ধ সংস্কৃত করিয়া তুলিতে পারেন। উপনিষদ বুঝিবার পক্ষে এই-সকল বাধাবিঘ্ন আছে। বিধাতার ইচ্ছায় আমি এমন এক ব্যক্তির সঙ্গলাভের সুযোগ পাইয়াছিলাম, যিনি একদিকে যেমন ঘোর দ্বৈতবাদী, অপরদিকে তেমনি একনিষ্ঠ অদ্বৈতবাদী ছিলেন ; ধিনি একদিকে যেমন পরম ভক্ত, অপরদিকে তেমনি পরম জ্ঞানী ছিলেন । এই ব্যক্তির শিক্ষাতেই আমি শুধু অন্ধভাবে ভাৰ্য্যকারদিগের অনুসরণ না করিয়া স্বাধীনভাবে উৎকৃষ্টরূপে প্রথমে উপনিষদ ও অন্যান্য শাস্ত্র বুঝিতে শিপিয়াছি । আমি এ-বিষয়ে যৎসামান্য যাহা অনুসন্ধান করিয়াছি, তাহাতে এই সিদ্ধাস্তে উপনীত হইয়াছি যে, এই-সকল শাস্ত্রবাক্য পরস্পরবিরোধী নহে। সুতরাং আমাদের শাস্ত্রের বিরুত ব্যাখ্যা । করিবার কোন প্রয়োজন নাই। শ্রতিবাক্যগুলি অতি মনোরম, অতি অদ্ভূত আর উহারা পরস্পরবিরোধী নহে, ঐগুলির মধ্যে অপুর্ব সামঞ্জস্য বিদ্যমান, একটি তত্ত্ব যেন অপরটির সোপানস্বরূপ । আমি এই-সকল উপনিষদেই একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্য করিয়ছি যে, প্রথমে দ্বৈতভাবের কথা—উপাসনা প্রভৃতি আরম্ভ হইয়াছে, শেষে অদ্বৈতভাবের অপুর্ব উচ্ছ্বাসে সে-গুলি সমাপ্ত হইয়াছে ।