পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতীয় জীবনে বেদান্তের কার্যকারিতা סיס\ל দেখিতে পাইতেছি, চেষ্টা না করিলেও আমাদের সকলের একত্বভাব স্বভাবতই আসিয়া থাকে। রাজনীতি ও সমাজনীতির ক্ষেত্রেও যে-সকল সমস্যা বিশ বৎসর পুর্বে শুধু জাতীয় সমস্যা ছিল, এখন আর জাতীয় ভিত্তিতে সেগুলির সমাধান করা যায় না। উক্ত সমস্তাগুলি ক্রমশ: বিপুলায়তন হইতেছে, বিরাট আকার ধারণ করিতেছে। আন্তর্জাতিক ভিত্তিরূপ প্রশস্ততর ভূমি হইতেই শুধু উহাদের মীমাংস করা যাইতে পারে । আন্তর্জাতিক সংহতি, আন্তর্জাতিক সঙ্ঘ, আন্তর্জাতিক বিধান-ইহাই এ যুগের মূলমন্ত্র। সকলের ভিতর একত্বভাব কিভাবে বিস্তৃত হইতেছে, ইহাই তাহার প্রমাণ । বিজ্ঞানেও জড়তত্ত্ব সম্বন্ধে এইরূপ উদার ভাব এখন আবিষ্কৃত হইতেছে । এখন তোমরা সমগ্র জড়বস্তুকে-সমগ্র জগৎকে এক অখণ্ড বস্তুরূপে, এক বৃহৎ জড়সমূদ্ররূপে বর্ণনা করিয়া থাকে ; তুমি, আমি, চন্দ্রস্থর্য, এমন কি আর যাহা কিছু —সবই এই মহান সমুদ্রের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আবর্ত মাত্র, আর কিছু নহে । মানসিক দৃষ্টিতে দেখিলে উহা এক অনন্ত চিন্তাসমূদ্ররূপে প্রতীত হয় ; তুমি আমি সেই চিন্থাসমূদ্রে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আবর্ত, আর চৈতন্যদৃষ্টিতে দেখিলে সমগ্র জগং এক অচল অপরিণামী অগণ্ড সন্তা অর্থাং আত্মা বলিয়া প্রতীত হয়। নীতির জন্যও জগং আগ্রহ প্রকাশ করিতেছে —তাহাও আমাদের গ্রন্থে রহিয়াছে । নীতি তত্ত্বের ভিত্তি সম্বন্ধে ও জগং জানিতে উৎসুক—তাহাও আমাদের শাস্ত্র হইতেই পাইবে । ভারতে—আমাদের কি প্রয়োজন ? বৈদেশিকগণের যদি এই-সকল বিষয়ের প্রয়োজন থাকে, তবে আমাদের বিশগুণ প্রয়োজন আছে । কারণ আমাদের উপনিষদ যতই বড় হউক, অন্যান্য জাতির সহিত তুলনায় আমাদের পুর্বপুরুষ ঋষিগণ যতই বড় হউন, আমি তোমাদিগকে স্পষ্ট ভাষায় বলিতেছি—আমরা দুর্বল, অতি দুর্বল। প্রথমতঃ আমাদের শারীরিক দৌর্বল্য—এই শারীরিক দৌর্বল্য আমাদের অন্ততঃ এক-তৃতীয়াংশ দুঃখের কারণ । আমরা অলস, আমরা কাজ করিতে পারি না ; আমরা একসঙ্গে মিলিতে পারি না ; আমরা পরস্পরকে ভালবাসি না ; আমরা ঘোর স্বার্থপর ; আমরা তিন জন এক সঙ্গে মিলিলেই পরস্পরকে ঘৃণা করিয়া থাকি, ঈর্ষা করিয়া থাকি । আমাদের এখন এই অবস্থা—আমরা অতিশয় বিশৃঙ্খলভাবাপন্ন, ঘোর স্বার্থপর হুইয়া পড়িয়াছি—