পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\9br স্বামীজীর বাণী ও রচনা করিতে পারি, তুমি অন্য কাজ করিতে পারে। তুমি না হয় একটা দেশ শাসন করিতে পারে, আমি একজোড়া জুতা সারিতে পারি। কিন্তু তা বুলিয়া তুমি আমা অপেক্ষ বড় হইতে পার না। তুমি কি আমার জুতা সারিয়া দিতে পারো ? আমি কি দেশ শাসন করিতে পারি ? এই কার্যবিভাগ স্বাভাবিক । আমি জুতা সেলাই করিতে পটু, তুমি বেদপাঠে পটু। তা বলিয়া তুমি আমার মাথায় পা দিতে পার না। তুমি খুন করিলে প্রশংসা পাইবে; আর আমি একটা আম চুরি করিলে আমাকে ফাসি যাইতে হইবে—এরূপ হইতে পারে না। এই অধিকার-তারতম্য উঠিয়া যাইবে । জাতিবিভাগ ভাল জিনিস। জীবনসমস্যাসমাধানের ইহাই একমাত্র স্বাভাবিক উপায় । লোকে নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ করিবে ; ইহা অতিক্রম করিবার উপায় নাই । যেখানেই যাও, জাতি।বভাগ থাকিবেই। কিন্তু তাহার অর্থ এই নয় যে, অধিকার-তারতম্যগুলিও থাকিবে । এগুলিকে প্রচণ্ড আঘাত করিতে হইবে। যদি জেলেকে বেদান্ত শিখাও, সে বলিবে—তুমি যেমন আমিও তেমন, তুমি না হয় দার্শনিক, আমি না হয় মৎস্যজীবী ; কিন্তু তোমার ভিতর যে-ঈশ্বর আছেন, আমার ভিতরও সেই ঈশ্বর আছেন। আর ইহাই আমরা চাই—কাহারও কোন বিশেষ অধিকার নাই, অথচ প্রত্যেক ব্যক্তির উন্নতি করিবার সমান সুবিধা থাকিবে । সকল ব্যক্তিকেই তাহার অন্তর্নিহিত দেবত্ব সম্বন্ধে শিক্ষা দাও । প্রত্যেকে নিজেই নিজের মুক্তিসাধন করিবে। উন্নতির জন্য প্রথম প্রয়োজন—স্বাধীনতা । যদি তোমাদের মধ্যে কেহ এ-কথা বলিতে সাহসী হয় যে, আমি এই নারীর বা ঐ ছেলেটির মুক্তি করিয়া দিব ; তবে উহা অতি অন্যায়, অত্যন্ত ভূল কথা। আমাকে বারংবার জিজ্ঞাসা করা হইয়াছে, আপনি বিধবাদিগের ও নারীজাতির উন্নতির উপায় সম্বন্ধে কি চিন্তা করেন ? এ প্রশ্নের আমি শেষ বারের মতো উত্তর দিতেছি—আমি কি বিধবা যে, আমাকে এই অর্থহীন প্রশ্ন করিতেছ? আমি কি নারী যে, আমাকে বারংবার এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতেছ ? তুমি কে যে, গায়ে পড়িয়া নারীজাতির সমস্ত সমাধান করিতে অগ্রসর হইতেছ? তুমি কি প্রত্যেক বিধবা ও প্রত্যেক নারীর ভাগ্যবিধাতা স্বয়ং ঈশ্বর ? তফাত ! তাহারা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই পুরণ করিবে । কি আপদ! যথেচ্ছাচারী তোমরা ভাবিতেছ—সকলের জন্য সব করিতে পারে! তফাত ! ভগবান সকলকে দেখিবেন । তুমি কে যে, নিজেকে সর্বজ্ঞ মনে করিয়া লইয়াছ ?