পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Y 8ა) স্বামীজীর বাণী ও রচনা অনস্তের একটু আভাস পায় ; তখন আমাদের সম্মুখে এমন এক বস্তু প্রকাশিত হয়, যেখানে মন বা বাক্য-কিছুই যাইতে পারে না । সাধারণ ৰোকের জীবনেই সময়ে সময়ে এইরূপ ঘটিয়া থাকে ; অভ্যাসের দ্বারা এই অবস্থাকে প্রগাঢ়, স্থায়ী, পরিপূর্ণ ও নিখুত করিতে হইবে । মানুষ শত শত যুগ পূর্বে আবিষ্কার করিয়াছে যে, আত্মা ইন্দ্রিয় দ্বারা বদ্ধ ব্লা সীমিত নহে, এমন কি চেতনার দ্বারাও নহে। আমাদের বুঝিতে হইবে যে, চেতনা সেই অনন্ত শৃঙ্খলের একটি ক্ষুদ্র অংশের নাম মাত্র । চেতনা সত্তার সহিত অভিন্ন নহে, উহা সত্তার একটি অংশ মাত্র । ঋষিগণ ইন্দ্ৰিয়-জ্ঞানের অতীত ভূমিতে নিভীকভাবে আত্মানুসন্ধান করিয়াছেন । চেতনা পঞ্চেন্দ্রিয় দ্বার সীমাবদ্ধ । আধ্যাত্মিক জগতের সত্যলাভ করিতে হইলে মাহুষকে ইন্দ্রিয়ের বাহিরে যাইতেই হইবে। আর এখনও এমন সব লোক আছেন, যাহারা পঞ্চেন্ত্রিয়ের বাহিরে যাইতে সমর্থ। ইহাদিগকেই ঋষি বলে ; কারণ ইহার আধ্যাত্মিক সত্যসমূহ সাক্ষাৎ করিয়া থাকেন। মৃতরাং আমার সম্মুখস্থ এই টেবিলটিকে আমি যেমন প্রত্যক্ষ প্রমাণ দ্বারা জানিয়া থাকি, বেদনিহিত সত্যসমূহের প্রমাণও সেইরূপ প্রত্যক্ষ অনুভূত। টেবিলটিকে আমরা ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধি করিয়া থাকি, আর আধ্যাত্মিক সত্যসমূহও জীবাত্মার অতিচেতন অবস্থায় প্রত্যক্ষ অনুভূত হইয়া থাকে। এই ঋষিত্বলাভ দেশ-কাল-লিঙ্গ বা জাতিবিশেষের উপর নির্ভর করে না । বাংস্ত্যায়ন অকুতোভয়ে বলিয়াছিলেন যে, এই ঋষিত্ব ঋষির বংশধরগণের, আর্য-অনার্য এমন কি স্লেচ্ছগণের পর্যন্ত সাধারণ সম্পত্তি । ع বেদের ঋধিত্ব বলিতে ইহাই বুঝায় ; আমাদিগকে ভারতীয় ধর্মের এই অষ্টদশ সর্বদা মনে রাথিতে হইবে, আর আমি ইচ্ছা করি যে, জগতের অন্যান্য জাতিও এই আদর্শটি স্মরণ রাখিবেন, তাহা হইলেই বিভিন্ন ধর্মে বিবাদবিসংবাদ কমিয়া যাইবে । শাস্ত্রপাঠেই ধর্মলাভ হয় না ; অথবা মতমতান্তরের দ্বারা বা বচনে, এমন কি যুক্তিতর্ক-বিচারের দ্বারাও ধর্মলাভ হয় না। ধর্ম সাক্ষাং করিতে হইবে—ঋষি হইতে হইবে । বন্ধুগণ, যতদিন না তোমাদের প্রত্যেকেই ঋষি হইতেছ, যতদিন না আধ্যাত্মিক সত্য সাক্ষাৎ করিতেছ, ততদিন তোমাদের ধর্মজীবন আরম্ভ হয় নাই, জানিবে। যতদিন না অতীন্দ্রিয় অনুভূতির দ্বার খুলিয়া যায়, ততদিন তোমার পক্ষে ধর্ম কেবল কথার কথা মাত্র,