পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

{ 6 স্বামীজীর বাণী ও রচনা যখন আমরা তাহার বিবিধভাবসমন্বিত চরিত্রের বিষয় আলোচনা করি, তখন কিছুমাত্র আশ্চর্য বোধ হয় না যে, তাহার প্রতি এরূপ বিশেষণ প্রযুক্ত হইয়াছে। তিনি একাধারে অপুর্ব সন্ন্যাসী ও অদ্ভূত গৃহী ছিলেন ; তাহার মধ্যে বিস্ময়কর রজ:শক্তির বিকাশ দেখা গিয়াছিল, অথচ তাঁহার অদ্ভূত ত্যাগ ছিল। গীতা পাঠ না করিলে কৃষ্ণচরিত্র কখনই বুঝা যাইতে পারে না ; কারণ তিনি তাহার নিজ উপদেশের মূর্তিমান বিগ্রহ ছিলেন । সকল অবতারই, র্তাহারা যাহা প্রচার করিতে আসিয়াছিলেন, তাহার জীবন্ত উদাহরণস্বরূপ ছিলেন। গীতার প্রচারক ঐকৃষ্ণ চিরজীবন সেই ভগবদগীতার সাকার বিগ্ৰহরুপে বর্তমান ছিলেন ; তিনি অনাসক্তির মহৎ দৃষ্টান্ত ছিলেন । তিনি অনেককে রাজা করিলেন, কিন্তু স্বয়ং সিংহাসনে আরোহণ করিলেন না ; সেই সমগ্র ভারতের নেতা, যাহার বাক্যে রাজগণ নিজ নিজ সিংহাসন ছাড়িয়া দিয়াছিলেন, তিনি স্বয়ং রাজা হইতে ইচ্ছা করেন নাই। বাল্যকালে যেশ্ৰীকৃষ্ণ সরলভাবে গোপীদের সহিত ক্রীড়া করিতেন, জীবনের সকল অবস্থাতেই তিনি সেই সরল সুন্দর শ্ৰীকৃষ্ণ । র্তাহার জীবনের সেই চিরস্মরণীয় অধ্যায়ের কথা মনে পড়িতেছে, যাহ। অতি দুর্বোধ্য। যতক্ষণ না কেহ পূর্ণ ব্রহ্মচারী ও পবিত্রস্বভাব হইতেছে, ততক্ষণ তাহা বুঝিবার চেষ্টা করা উচিত নয়। সেই প্রেমের অপূর্ব বিকাশের কথা মনে পড়িতেছে, যাহা সেই বৃন্দাবনের মধুর লীলায় রূপকভাবে বর্ণিত হইয়াছে ; প্রেমমদিরা-পানে যে একেবারে উন্মত্ত হইয়াছে, সে ব্যতীত আর কেহ তাহা বুঝিতে পারে না। কে সেই গোপীদ্রের প্ৰেম-জনিত বিরহযন্ত্রণার ভাব বুঝিতে সমর্থ, যে-প্রেম প্রেমের চরম আদর্শস্বরূপ, যে-প্রেম আর কিছু চাহে না, ঘে-প্রেম স্বৰ্গ পর্যস্ত আকাঙ্ক্ষা করে না, যে-প্রেম ইহলোক-পরলোকের কোন বস্তু কামনা করে না ! হে বন্ধুগণ, এই গোপীপ্রেম দ্বারাই সগুণ ও নিগুণ ঈশ্বর সম্বন্ধে বিরোধের একমাত্র মীমাংস হইয়াছে । আমরা জানি, মানুষ সগুণ ঈশ্বর হইতে উচ্চতর ধারণা করিতে পারে না। আমরা ইহাও জানি, দার্শনিকদৃষ্টিতে সমগ্র জগদ্ব্যাপী ঈশ্বরে—সমগ্র জগং যাহার বিকাশ, সেই নিগুৰ্ণ ঈশ্বরে বিশ্বাসই স্বাভাবিক । এদিকে আমাদের প্রাণ একটা সাকার বস্তু চায়— এমন বস্তু চায়, যাহা আমরা ধরিতে পারি, র্যাহার পাদপদ্মে প্রাণ ঢালিয়া দিতে পারি। সুতরাং সুগুণ ঈশ্বরই মানবমনের সর্বোচ্চ ধারণা। কিন্তু যুক্তি এই ধারণায়