পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতীয় মহাপুরুষগণ >@@ সময়ে ভগবঢুক্ত প্লাক্যের তাৎপর্য ধরিতে পারেন নাই। গীতাতে কি দেখিতে পাওয়া যায় ? আধুনিক ভাষ্যকারগণের ভিতরই বা কি দেখিতে পাওয়া যায় ? একজন অদ্বৈতবাদী ভাষ্যকার কোন উপনিষদের ব্যাখ্যায় প্রবৃত্ত হইলেন ; শ্রুতিতে অনেক দ্বৈতভাবাত্মক বাক্য রহিয়াছে ; তিনি কোনরূপে সেগুলিকে ভাঙিয়া চুরিয়া নিজের মনোমত অর্থ তাহা হইতে বাহির করিলেন। আবার দ্বৈতবাদী ভাষ্যকারও অদ্বৈতবাদাত্মক বাক্যগুলিকে ভাঙিয়া চুরিয়া দ্বৈত অর্থ করিলেন । কিন্তু গীতায় শ্রুতির তাৎপর্য এরূপ বিকৃত করিবার চেষ্টা নাই । ভগবান বলিতেছেন, এগুলি সব সত্য ; জীবাত্মা ধীরে ধীরে স্কুল হইতে সূক্ষ্ম, স্বক্ষ হইতে সুন্ধতর সোপানে আরোহণ করিতেছেন, এইরূপে ক্রমশঃ তিনি সেই চরম লক্ষ্য অনন্ত পুর্ণস্বরূপে উপনীত হন। গীতাতে এই ভাবে বেদের তাৎপর্য বিবৃত হইয়াছে, এমন কি কর্মকাণ্ড পর্যন্ত গীতায় স্বীকৃত হইয়াছে; আর ইহা দেখানো হইয়াছে যে, যদিও কর্মকাণ্ড সাক্ষাৎভাবে মুক্তির সহায় নয়, গৌণভাবে মুক্তির সহায়, তথাপি উহা সত্য ; মূর্তিপূজাও সত্য, সর্বপ্রকার অনুষ্ঠান ক্রিয়াকলাপও সত্য, শুধু একটি বিষয়ে বিশেষ লক্ষ্য রাখিতে হইবে— চিত্তশুদ্ধি । যদি হৃদয় শুদ্ধ ও অকপট হয়, তবেই উপাসনা সত্য হয় এবং আমাদিগকে চরম লক্ষ্যে লইয়া যায়, আর এই-সব বিভিন্ন উপাসনাপ্রণালীই সত্য, কারণ সত্য না হইলে সেগুলির স্বষ্টি হইল কেন ? আধুনিক অনেক ব্যক্তির মত-বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায় কতকগুলি কপট ও দুষ্ট লোক স্থাপন করিয়াছে ; তাহারী কিছু অর্থ-লালসায় এই-সকল ধর্ম ও সম্প্রদায় স্বষ্টি করে। এ কথা একেবারে ভুল , তাহাদের ব্যাখ্যা আপাতদৃষ্টিতে যতই যুক্তিযুক্ত বলিয়া বোধ হউক না কেন, উহা সত্য নহে ; ঐগুলি ঐরূপে স্বৰ্ষ্ট হয় নাই । জীবাত্মার স্বাভাবিক প্রয়োজনে ঐগুলির অভু্যদয় হইয়াছে। বিভিন্ন শ্রেণীর মানবের ধর্মপিপাসা চরিতার্থ করিবার জন্য সেগুলির অভু্যদয় হইয়াছে, স্বতরাং উহাদের বিরুদ্ধে দাড়াইয়া কোন ফল নাই । যে-দিন সেই প্রয়োজন আর থাকিবে না, সে-দিন সেই প্রয়োজনের অভাবের সঙ্গে সেগুলিও লোপ পাইবে, আর যতদিন এই প্রয়োজন থাকিবে, ততদিন তোমরা যতই ঐগুলির তীব্র সমালোচনা কর না কেন, যতই ঐগুলির বিরুদ্ধে প্রচার কর না কেন, ঐগুলি অবশুই থাকিবে"। " তরবারি-বন্দুকের সাহায্যে পৃথিবী রক্তস্রোতে ভাসাইয়। দিতে পারে, কিন্তু যতদিন প্রতিমার প্রয়োজন থাকিবে, ততদিন প্রতিমাপুজ।