পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমাদের উপস্থিত কর্তব্য ১৬৭ অবনতির এক প্রধান কারণ । আমরা যথেষ্ট শাস্তি পাইয়াছি, আর যেন আমরা ভ্ৰমে না পড়ি। ভারতবাসীর ভারতের বাহিরে যাওয়া অনুচিত— এ-সব আহাম্মকের কথা, ছেলেমান্বষি । এ-সব ধারণা সমূলে বিনাশ করিতে হইবে । তোমরা যতই ভারত হইতে বাহির হইয়া পৃথিবীর অন্যান্য জাতির সহিত মিশিবে, ততই. তোমাদের এবং দেশের কল্যাণ। তোমরা পুর্ব হইতেই—শত শত বৎসর পুর্ব হইতেই—যদি ইহা করিতে, তবে অজি এরূপ হইতে না—যে-কোন জাতি তোমাদের উপর প্রভূত্ব করিতে ইচ্ছা করিয়াছে, তাহারই পদানত হইতে না । জীবনের প্রথম স্পষ্ট চিহ্ন-বিস্তার। যদি তোমরা বাচিতে চাও, তবে তোমাদিগকে সঙ্কীর্ণ গণ্ডি ছাড়িতে হইবে। ষে-মুহূর্তে তোমাদের বিস্তার বন্ধ হইবে, সেই-মুহূর্ত হইতেই জানিবে মৃত্যু তোমাদিগকে ঘিরিয়াছে, বিপদ তোমাদের সম্মুখে। আমি ইওরোপ-আমেরিকায় গিয়াছিলাম, তোমরাও সহৃদয়ভাবে তাহা উল্লেখ করিয়াছ। আমাকে যাইতে হইয়াছিল, কারণ এই বিস্তৃতিই জাতীয় জীবনের পুনরভু্যদয়ের প্রথম চিহ্ন । এই পুনরদ্যুদয়শীল জাতীয় জীবন ভিতরে ভিতরে বিস্তৃত হইয়া আমাকে যেন দূরে নিক্ষেপ করিয়াছিল, আরও সহস্ৰ সহস্র ব্যক্তি এইরূপে নিক্ষিপ্ত হইবে । আমার কথা অবহিত হইয়া শ্রবণ কর, যদি এই জাতি আদৌ বাচিয়া থাকে, তবে এরূপ হইবেই হইবে । স্বতরাং এই বিস্তার জাতীয় জীবনের পুনরভু্যদয়ের সর্বপ্রধান লক্ষণ ; এই বিস্তারের সহিত মানবের জ্ঞানভাণ্ডারে আমাদের যাহা দিবার আছে, সমগ্র পৃথিবীর উন্নতিবিধানে আমাদের যেটুকু দেয় অাছে, তাহাও ভারতের বাহিরে যাইতেছুে । ইহা কিছু নূতন ব্যাপার নহে। তোমাদের মধ্যে যাহারা মনে কর, হিন্দুরা চিরকাল তাহদের দেশের চতুঃসীমার মধ্যেই আবদ্ধ, তাহারা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ; "তোমরা তোমাদের প্রাচীন শাস্ত্র পড় নাই, তোমরা তোমাদের জাতীয় ইতিহাস ঠিক ঠিক যথাযথ অধ্যয়ন কর নাই। যে-কোন জাতিই হউক, বাচিতে হইলে তাহাকে কিছু দিতেই হইবে । প্রাণ দিলে প্রাণ পাইবে, কিছু গ্রহণ করিলে উহার মূল্যস্বরূপ অপর সকলকে কিছু দিতেই হইবে। এত সহস্ৰ বংসর ধরিয়া আমরা যে বঁচিয়া আছি—এ-কথা তো অার অস্বীকার করিবার উপায় নাই। এখন কিরূপে আমরা এতদিন জীবিত রহিয়াছি, এই সমস্তার যদি সমাধান করিতে হয়, তবে স্বীকার করিতেই হইবে আমরা চিরকালই