পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতের ভবিষ্যৎ ১৮৭ বা না জাকুক। • এই সংস্কৃত ভাষার—আমাদের গৌরবের বস্তু এই সংস্কৃত ভাষার কাঠিতুই এই-সকল ভাবপ্রচারের এক মহান অন্তরায়, আর যতদিন না আমাদের সমগ্র জাতি উত্তমরূপে সংস্কৃতভাষা শিখিতেছে, ততদিন ঐ অন্তরায় দূরীভূত হইবার নহে। সংস্কৃতভাষা যে কঠিন, তাহা তোমরা এই কথা বলিলেই বুঝিবে যে, আমি সারাজীবন ধরিয়া ঐ ভাষা অধ্যয়ন করিতেছি, তথাপি প্রত্যেক নৃর্তন সংস্কৃত গ্রন্থই আমার কাছে নূতন ঠেকে। যাহাদের ঐ ভাষা সম্পূর্ণরূপে শিক্ষা করিবার অবসর কখনই হয় নাই, তাহদের পক্ষে উহ। কিরূপ কঠিন হইবে, তাহা তোমরা অনায়াসেই বুঝিতে পারে । স্বতরাং তাহাদিগকে অবশ্যই চলিত ভাষায় এই-সকল তত্ত্ব শিক্ষা দিতে হইবে । সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃত শিক্ষাও চলিবে । কারণ সংস্কৃতশিক্ষায়, সংস্কৃতশব্দুগুলির উচ্চারণমাত্রেই জাতির মধ্যে একটা গৌরব—একটা শক্তির ভাব, জাগিবে। মহানুভব রামান্তজ, চৈতন্য ও কবীর ভারতের নিম্নজাতিগুলিকে উন্নত করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন, তাহদের চেষ্টার ফলে সেই মহাপুরুষগণের জীবৎকালে অদ্ভূত ফল-লাভ হইয়াছিল । কিন্তু পরে তাহদের কার্যের এরূপ শোচনীয় পরিণাম কেন হইল, নিশ্চয় তাহার কিছু কারণ আছে ; এই মহান আচার্যগণের তিরোভাবের পর এক শতাব্দী যাইতে না যাইতে কেন সেই উন্নতি বন্ধ হইল ? ইহাবু উত্তর এই—তাহার নিম্নজাতিগুলিকে উন্নত করিয়াছিলেন বটে, তাহারা উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে আরূঢ় হউক, ইহা তাহদের আস্তরিক ইছা ছিল বটে, কিন্তু সর্বসাধারণের মধ্যে সংস্কৃতশিক্ষা-বিস্তারের জন্য শক্তিপ্রয়োগ তাহার করেন নই। এমন কি, মহান বুদ্ধও সর্বসাধারণের মধ্যে সংস্কৃতশিক্ষার বিস্তার বন্ধ করিয়া একটি ভুল পথ ধরিয়াছিলেন । তিনি তাহার কার্যের আশু ফল-লাভ চাহিয়াছিলেন, সুতরাং সংস্কৃতভাষা নিবদ্ধ ভাবসমূহ তখনকার প্রচলিত ভাষা পালিতে অনুবাদ করিয়া প্রচার করিলেন । অবশ্ব ভালই করিয়াছিলেন - লোকে তাহার ভাব বুঝিল, কারণ তিনি সর্বসাধারণের ভাষায় উপদেশ দিয়াছিলেন । এ খুব ভালই হইয়াছিল—তাহার প্রচারিত ভাবসকল শীঘ্রই চারিদিকে বিস্তৃত হইতে লাগিল ; অতি দূরে দূরে র্তাহার ভাবসমূহ ছড়াইয়া পড়িল ; কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃউভাষার বিস্তার হওয়া উচিত ছিল। জ্ঞানের বিস্তার হইল বটে, কিন্তু তাহার সঙ্গে সঙ্গে ‘গৌরব-বোধ ও ‘সংস্কার’ জন্মিল না। শিক্ষা মজাগত হইয়া কৃষ্টিতে পরিণত হইলে ভাববিপ্লবের