পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨ S 8 স্বামীজীর বাণী ও রচনা সহিত নিজেদের তুলনা করি নাই ; আপনারা সকলেই জানেন, যে-দিন হইতে রাজ রামমোহন রায় এই সঙ্কীর্ণতার বেড ভাঙিলেন, সেই দিন হইতেই ভারতের সর্বত্র আজ যে-একটু স্পন্দন, একটু জীবন অহুভূত হইতেছে, তাহার আরম্ভ হইয়াছে। সেইদিন হইতেই ভারতবর্ষের ইতিহাস অন্য পথ অবলম্বন করিয়াছে এবং ভারত এখন ক্রমবর্ধমান গতিতে উন্নতির পথে চলিয়াছে । অতীত কালে যদি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্রোতস্বিনী দেখা গিয়া থাকে, তবে জানিবেন—এখন মহা বন্যা আসিতেছে, আর কেহই উহার গতিরোধ করিতে পরিবে না। অতএব আমাদিগকে বিদেশে যাইতে হুইবে । আর আদান-প্রদানই অভু্যদয়ের মূলমন্ত্র । আমরা কি চিরকালই পাশ্চাত্যের পদতলে বসিয়া সব জিনিস, এমন কি ধর্ম পর্যন্ত শিথিব ? অবশ্য তাহাদের নিকট আমরা কলকজা শিখিতে পারি, আরও অন্যান্য অনেক জিনিস শিখিতে পারি, কিন্তু আমাদেরও তাহাদিগকে কিছু শিখাইতে হইবে। আমরা তাহাদিগকে আমাদের ধর্ম, অামাদের গভীব আধ্যাত্মিকতা শিখাইব । জগৎ পুর্ণাঙ্গ সভ্যতার অপেক্ষায় রহিয়াছে । পুর্বপুরুষগণের নিকট হইতে উত্তরাধিকারস্বত্রে ভারত যে ধর্মরূপ অমূল্য রত্ন পাইয়াছে, তাহার দিকে জগৎ সতৃষ্ণনয়নে চাহিয়া আছে। হিন্দুজাতি শত শতাব্দীর অবনতি ও দুঃখ-দুৰ্বিপাকের মধ্যেও যে আধ্যাত্মিকতা সযত্নে হৃদয়ে আঁকড়াইয়া ধরিয়া আছে, জগং সেই রত্নের আশায় সতৃষ্ণনয়নে চাহিয়া রহিয়াছে । o তোমাদের পূর্বপুরুষগণের সেই অপুর্ব রত্বরাজির জন্য ভারতের বাহিরের লোকেরা কতখানি উদগ্রীব হইয়া রহিয়াছে, তাহা তোমরা কি বুঝিবে ? আমরা এখানে অনর্গল বাক্যব্যয় করিতেছি, পরম্পর বিবাদ করিতেছি, যাহা কিছু গভীর শ্রদ্ধার বস্তু সব হাসিয়া উড়াইয়া দিতেছি—এখন এই হাসিয়া উড়াইয়া দেওয়াটা একটা জাতীয় পাপ হইয়া দাড়াইয়াছে। কিন্তু আমাদের পুর্বপুরুষগণ এই ভারতে যে অমৃত রাখিয়া গিয়াছেন, তাহার এক বিন্দু পান করিবার জন্য ভারতের বাহিরের লক্ষ লক্ষ নরনারী কতটা আগ্রহের সহিত হাত বাড়াইয়া রহিয়াছে, তাহা আমরা কিরূপে বুৰিব ? অতএব আমাদিগকে ভারতের বাহিরে যাইতে হইবে। আমাদের আধ্যাত্মিকতার বিনিময়ে তাহার যাহা কিছু দিতে পারে, তাহাই গ্রহণ করিতে হইবে। অধ্যাত্ম জগতের অপুর্ব তত্ত্বসমূহের বিৰিময়ে আমরা জড়রাজ্যের অভূত আবিষ্কারগুলি শিক্ষা করিব।