পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૨ ૦ স্বামীজীর বাণী ও রচনা এই বেদান্ত । বিশেষত: এই যুগে ইহার প্রচার বিশেষত আবখ্যক হইয়া পডিয়াছে। কারণ আমি তোমাদিগকে এইমাত্র বলিয়াছি, ভারতীয়,সকল সম্প্রদায়েরই উপনিষদের প্রামাণ্য মানিয়া চলা উচিত বটে, কিন্তু এই-সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে আমরা আপাততঃ অনেক বিরোধ দেখিতে পাই | উপনিষদসমূহের মধ্যে যে অপুর্ব সমন্বয় রহিয়াছে, অনেক সময় প্রাচীন বড় বড় ঋষিগণ পর্যন্ত তাহ ধরিতে পারেন নাই। অনেক সময় মুনিগণ পর্যস্ত পরম্পর মতভেদহেতু বিবাদ করিয়াছেন। এই মতবিরোধ এক সময়ে এত বাড়িয়া উঠিয়াছিল যে, ইহা একটি চলিত বাক্য হইয়া গিয়ছিল—যাহার মত অপরের মত হইতে ভিন্ন নহে, তিনি মুনিই নহেন—‘নাসে মুনির্যন্ত মতং ন ভিন্নম্। কিন্তু এখন ও-রূপ বিরোধে আর চলিবে না। উপনিষদের মন্ত্রগুলির মধ্যে গৃঢ়রূপে যে সমন্বয়ভাব রহিয়াছে, এখন তাহার ব্যাখ্যা ও প্রচার আবশুক । দ্বৈতবাদী, বিশিষ্টাদ্বৈতবাদী, অদ্বৈতবাদী প্রভৃতি সম্প্রদায়গুলির মধ্যে যে-সমন্বয় রহিয়াছে, তাহ জগতের কাছে স্পষ্টরূপে দেখাইতে হইবে । শুধু ভারতের নয়, সমগ্র জগতের সম্প্রদায়গুলির মধ্যে যে সামঞ্জস্য রহিয়াছে, তাহাই দেখাইতে হইবে । ঈশ্বর-কুপায় আমার এমন এক ব্যক্তির পদতলে বসিয়া শিক্ষালাভের সৌভাগ্য হইয়াছিল, যাহার সমগ্র জীবনই উপনিষদের এই মহাসমন্বয়ের ব্যাখ্যাস্বরূপ—যাহার জীবন উপদেশ অপেক্ষা সহস্ৰগুণে উপনিষদমন্ত্রের জীবন্ত ভাৰ্যস্বরূপ । তাহাকে দেখিলে মনে হইত, উপনিষদের ভাবগুলি বাস্তবিকই যেন মানবমূর্তি ধরিয়া প্রকাশিত হইয়াছে। সম্ভবতঃ সেই সমন্বয়ের ভাব আমার ভিতরেও কিছু আসিয়াছে। আমি জানি না, জগতের কাছে উহা প্রকাশ করিতে পারিব কি না, কিন্তু বৈদাস্তিক সম্প্রদায়গুলি যে পরস্পরবিরোধী নহে, পরস্পর-সাপেক্ষ, একটি যেন অন্তটির পরিণতি-স্বরূপ, একটি যেন অন্যটির সোপান-স্বরূপ এবং সর্বশেষ চরম লক্ষ্য অদ্বৈতে ‘তত্ত্বমসি’তে পর্যবসিত, ইহ দেখানোই আমার জীবনব্ৰত । এমন এক সময় ছিল, যখন ভারতে কর্মকাণ্ড প্রবল প্রতাপে রাজত্ব করিত। বেদের ঐ কর্মকাণ্ডে অনেক উচ্চ উচ্চ আদর্শ ছিল সন্দেহ নাই, আমাদের বর্তমান দৈনন্দিন কতকগুলি পুজাৰ্চনা এখনও ঐ বৈদিক কর্মকাণ্ড অনুসারে নিয়মিত হইয়া থাকে ; কিন্তু তথাপি বেদের কর্মকাও ভারতভূমি হইতে প্রায় অন্তহিত হইয়াছে। বৈদিক কর্মকাণ্ডের অনুশাসন অনুসারে আমাদের জীবন আজকাল