পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

さaやう স্বামীজীর বাণী ও রচনা এই উপনিষদের আর দু-একটি তত্বসম্বন্ধে আমি তোমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করিতে ইচ্ছা করি, কারণ উপনিষৎসমূহ অনন্ত জ্ঞানের সমুদ্র, আর আমার ন্যায় একজন অযোগ্য ব্যক্তিরও উহার সকল তত্ত্ব বলিতে গেলে বংসরের পর বৎসর কাটিয়া যাইবে, একটি বক্তৃতায় কিছু হইবে না। এই কারণে উপনিষদের আলোচনায় যে-সকল বিষয় আমার মনে উদিত হইয়াছে, তাহাদের মধ্যে শুধু দুই-একটি বিষয় তোমাদের নিকট বলিতে চাই। প্রথমতঃ জগতে ইহার ন্যায় অপুর্ব কাব্য আর নাই। বেদের সংহিতাভাগ আলোচনা করিয়া দেখিলে তাহাতেও স্থানে স্থানে অপুর্ব কাব্য-সৌন্দর্যের পরিচয় পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ ঋগ্বেদ-সংহিতার নাসদীয় সূক্তের’ বিষয় আলোচনা কর । উহার মধ্যে প্রলয়ের গভীর-অন্ধকারবর্ণনাত্মক সেই শ্লোক আছে : তম আসীত তমসাগৃঢ়মগ্রে ইত্যাদি। যখন অন্ধকারের দ্বারা অন্ধকার আবৃত ছিল—এটি পড়িলেই অনুভব হয় যে, ইহাতে কবিত্বের অপুর্ব গাম্ভীর্য নিহিত রহিয়াছে। তোমর কি ইহা লক্ষ্য করিয়াছ যে, ভারতের বাহিরে এবং ভারতের অভ্যন্তরেও গম্ভীর ভাবের চিত্র অঙ্কিত করিবার অনেক চেষ্টা হইয়াছে ? ভারতের বাহিরে এই চেষ্টা সর্বদাই জড় প্রকৃতির অনন্ত ভাব-বর্ণনার আকার ধারণ করিয়াছে—কেবল অনন্ত বহিঃপ্রকৃতি, অনন্ত জড়, অনন্ত দেশের বর্ণনা । যখনই মিণ্টন বা দান্তে বা অপর কোন প্রাচীন বা আধুনিক বড় ইওরোপীয় কবি অনস্তের চিত্র আঁকিবার প্রয়াস পাইয়াছেন, তখনই তিনি তাহার কবিত্বের পক্ষসহায়ে নিজের বাহিরে মৃদুর আকাশে বিচরণ করিয়া অনন্ত বহিঃপ্রকৃতির কিঞ্চিৎ আভাস দিবার চেষ্টা করিয়াছেন। এ চেষ্টা এখানেও হইয়াছে। বেদসংহিতায় এই বহিঃপ্রকৃতির অনন্ত বিস্তার যেমন অপুর্ব ভাবে চিত্রিত হইয়া পাঠকদের নিকট স্থাপিত হইয়াছে, আর কোথাও এমনটি দেখিতে পাইবে না । সংহিতার এই ‘তম আলী তমস গৃঢ়ম্ বাক্যটি স্মরণ রাখিয়া তিন জন বিভিন্ন কবির অন্ধকারের বর্ণনা তুলনা করিয়া দেখ। আমাদের কালিদাস বলিয়াছেন, ‘স্বচীভেদ্য অন্ধকার’, মিন্টন বলিতেছেন, ‘আলোক নাই, দৃশ্যমান অন্ধকার । কিন্তু ঋগ্বেদসংহিতা বলিতেছেন, ‘অন্ধকার—অন্ধকারের দ্বারা আবৃত, অন্ধকারের মধ্যে অন্ধকার লুকায়িত ’ গ্রীষ্মপ্রধানদেশবালী আমরা ইহা সহজেই বুঝিতে পারি। যখন হঠাৎ নূতন বর্ষাগম হয়, তখন সমস্ত দিথলয় অন্ধকারাচ্ছন্ন হইয়া উঠে এবং সঞ্চরণশীল তাম মেঘপুর ক্রমশ অন্ত মেঘরাশি আছয় ਕਿ থাকে। যাহা