পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সর্বাবয়ব বেদান্ত 豪Vう〉 উপনিষদে ফেসকল বিষয় শিক্ষা দেওয়া হইয়াছে, এখন আমরা সে সম্বন্ধে আলোচনা করিব। উহাতে নানাবিধ ভাবের শ্লোক দেখা যায় ; কোন কোনটি --সম্পূর্ণ দ্বৈতবাদাত্মক। দ্বৈতবাদাত্মক বলিলে আমি কি লক্ষ্য করিতেছি ? কতকগুলি বিষয়ে ভারতের সকল সম্প্রদায় একমত। প্রথমতঃ সকল সম্প্রদায়ই ‘সংসারবাদ’ বা পুনর্জন্মবাদ স্বীকার করিয়া থাকেন। দ্বিতীয়তঃ মনস্তত্ত্ব-বিজ্ঞানেও সকল সম্প্রদায়ের একরূপ। প্রথমতঃ এই স্কুলশরীর, ইহার পশ্চাতে স্বক্ষশরীর বা মন। জীবাত্মা সেই মনেরও পারে। পাশ্চাত্য ও ভারতীয় মনোবিজ্ঞানের মধ্যে এইটি বিশেষ প্রভেদ যে, পাশ্চাত্য মনোবিজ্ঞানে মন ও জীবাত্মার মধ্যে কিছু প্রভেদ করা হয় নাই, কিন্তু এখানে তাহা নহে। ভারতীয় মনোবিজ্ঞানের মতে মন বা অন্ত:করণ যেন জীবাত্মার যন্ত্রস্বরূপ। ঐ যন্ত্রসহায়ে উহ, শরীর অথবা বাহা জগতের উপর কাজ করিয়া থাকে। এই বিষয়ে সকলেই একমত । বিভিন্ন সম্প্রদায় ইহাকে জীব, আত্মা, জীবাত্মা প্রভৃতি বিভিন্ন নামে অভিহিত কবেন । কিন্তু সকলেই স্বীকার করেন যে, জীবাত্মা অনাদি অনন্ত ; যতদিন না শেষ মুক্তিলাভ হয়, ততদিন তিনি পুনঃ পুনঃ জন্ম গ্রহণ করেন। আর একটি মুখ্য বিষয়ে সকলেই একমত, আর ইহাই ভারতীয় ও পাশ্চাত্য চিন্তাপ্রণালীর মৌলিক প্রভেদ যে, তাহারা জীবাত্মাতে পূর্ব হইতেই সকল শক্তি অবস্থিত বলিয়া স্বীকার করেন। ইন্সপিরেশন ( inspiration )-শব্দ দ্বারা ইংরেজীতে যে ভাবের প্রকাশ হইয়া থাকে, তাহাতে বুঝায় যেন বাহির হটুতে কিছু আসিতেছে ; কিন্তু আমাদের শাস্ত্রানুসারে সকল শক্তি, সর্ববিধ মহত্ত্ব ও পবিত্রত আত্মার মধ্যেই রহিয়াছে। যোগীরা বলিবেন, অণিমা লঘিমা প্রভৃতি সিদ্ধি, যাহা তিনি লাভ করিতে চান, তাহ প্রকৃতপক্ষে লাভ করিবার নহে, তাহারা পুর্ব হইতেই আত্মাতে বিদ্যমান, ব্যক্ত করিতে হইবে মঞ্চত্র। পতঞ্জলির মতে তোমার পদতলচারী অতি ক্ষুদ্রতম কীটে পর্যন্ত অষ্টসিদ্ধি রহিয়াছে ; কেবল তাহার দেহরূপ আধার অনুপযুক্ত বলিয়া উহারা প্রকাশিত হইতে পারিতেছে না। উন্নততর শরীর পাইলেই সেই শক্তিগুলি প্রকাশিত হইবে, কিন্তু উঠার পুর্ব হইতেই বিদ্যমান। তিনি তাহার স্থত্রের একস্থলে বলিয়াছেন, ‘নিমিত্তমপ্রয়োজকং প্রকৃতীনাং বরণভেদস্তু তত: ক্ষেত্রিকবৎ’।’ ১ যোগসূত্ৰ, siওঁ।