পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

38 c স্বামীজীর বাণী ও রচনা করিতেছি । ইহার পশ্চাতে—প্রত্যেক ইন্দ্রিয়ভোগের পশ্চাতে ঘোর দুঃখ-যন্ত্রণা, পৈশাচিকতা, ঘৃণা-বিদ্বেষ লুকাইয়া থাকিতে পারে,–কিন্তু তাহাতে কোনু ক্ষতি নাই ! *অপরদিকে আমাদের দেশের দার্শনিকগণ প্রথম হইতে ঘোষণা করিয়াছেন যে, প্রত্যেক অভিব্যক্তিই—যাহাকে তোমরা ক্রমবিকাশ বলে!—তাহ সেই অব্যক্তকে ব্যক্ত করিবার বৃথা চেষ্টামাত্র। এই জগতের সর্বশক্তিমান কারণস্বরূপ তুমি নিজেকে ক্ষুদ্র পঙ্কিল ডোবায় প্রতিবিম্বিত করিবার বৃথা চেষ্টা করিতেছ। কিছুদিন ঐ চেষ্টা করিয়া তুমি বুঝিবে, উহা অসম্ভব। তখন যেখান হইতে আসিয়াছিলে, পলাইয়া সেইখানেই ফিরিবার চেষ্টা করিতে হইবে। ইহাই বৈরাগ্য—এই বৈরাগ্য আসিলেই ধর্ম আরম্ভ হইল বুঝিতে হইবে । ত্যাগ ব্যতীত কিরূপে ধর্ম বা নীতির আরম্ভ হইতে পারে ? ত্যাগেই ধর্মের আরম্ভ, ত্যাগেই উহার সমাপ্তি | ত্যাগ কর । বেদ বলিতেছেন : ত্যাগ কর—ইহা ব্যতীত অন্য পথ নাই –ন প্রজয়া ধনেন ন চেজ্যয়া ত্যাগেনৈকে অমৃতত্বমানগু: ॥১ –সন্তানের দ্বারা নহে, ধনের দ্বারা নহে, যজ্ঞের দ্বারা নহে, একমাত্র ত্যাগের দ্বারাই মুক্তিলাভ হইয়া থাকে। ইহাই সকল ভারতীয় শাস্ত্রের আদেশ | অবশ্য অনেকে রাজসিংহাসনে বসিয়াও মহাত্যাগীর জীবন দেখাইয়া গিয়াছেন, কিন্তু জনককেও কিছুদিনের জন্য সংসারের সহিত সংস্রব একেবারে পরিত্যাগ করিতে হইয়াছিল, এবং তাহার অপেক্ষ বড় ত্যাগী কে ছিলেন ? কিন্তু আজকাল আমরা সকলেই 'জনক' বলিয়া পরিচিত হইতে চাই । তাহারা জনক বটে, কিন্তু তাহারা কতকগুলি হতভাগা সস্তানের জনকমাত্র—তাহারা তাহাদের পেটের ভাত ও পরনের কাপড় জোগাইতেও অসমর্থ। ঐটুকুই তাহাদের জনকত্ব, পূর্বকালীন জনকের মতে। র্তাহীদের ব্রহ্মনিষ্ঠা নাই । আমাদের আজকালকার জনকদের এই ভাব ! এখন জনক হইবার চেষ্টা একটু কম করিয়া লক্ষ্যের দিকে সোজা অগ্রসর হও দেখি । যদি ত্যাগ করিতে পারো, তবেই তোমার ধর্ম হইবে। যদি না পারে, তবে তুমি প্রাচ্য হইতে পাশ্চাত্য পর্যন্ত সমগ্র পৃথিবীতে যত পুস্তকালয় আছে, ১ নারায়ণ উপ. ১২৭৩ F.