পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সর্বাবয়ব বেদান্ত Ջ 8 ֆ আমি অবাস্তবু প্রসঙ্গের আলোচনায় প্রস্তাবিত বিষয় একরূপ ভুলিয়াই গিয়াছিলাম ; বিষয়টি বিস্তীর্ণ এবং আমার তোমাদিগকে এত কথা বলিবার আছে যে, আমি সব ভুলিয়া যাইতেছি। যাহা হউক, অদ্বৈতবাদীর মতে— আমাদের যে ব্যক্তিত্ববোধ রহিয়াছে, তাহা ভ্ৰমমাত্র । সমগ্র জগতের পক্ষেই এই কথাটি ধারণা করা অতি কঠিন । যখনই তুমি কাহাকেও বলে যে, সে ‘ব্যক্তি’ নহে, সে ঐ কথায় এত ভীত হইয়া উঠে যে, সে মনে করে, তাহার আমিত্ব—তাহা যাহাই হউক না কেন—বুঝি নষ্ট হইয়া যাইবে। কিন্তু অদ্বৈতবাদী বলেন, প্রকৃতপক্ষে তোমার আমিত্ব বলিয়া কিছুই নাই । জীবনের প্রতি মুহূর্তেই তোমার পরিবর্তন হইতেছে । তুমি এক সময় বালক ছিলে, তখন একভাবে চিন্তা করিয়াছ ; এখন তুমি যুবক, এখন একুভাবে চিন্তা করিতেছ ; আবার যখন বৃদ্ধ হইবে, তখন আর একভাবে চিন্তা-করিবে । সকলেরই পরিণাম হইতেছে । ইহাই যদি হয়, তবে আর তোমার আমিত্ব’ কোথায় ? এই অামিত্ব’ বা ‘ব্যক্তিত্ব’ তোমার দেহগত নহে, মনোগতও নহে । এই দেহমনের পারে তোমার আত্মা ; আর অদ্বৈতবাদী বলেন, এই আত্মা ব্রহ্মস্বরূপ । দুইটি অনন্ত কখন থাকিতে পারে না । একজন ব্যক্তিই আছেন—তিনি অনন্তস্বরূপ । সাদা কথায় বুঝাইতে গেলে বলিতে হয়, আমরা বিচারশীল প্রাণী, আমরা সব জিনিসই বিচার করিয়া বুঝিতে চাই। এখন বিচার বা যুক্তি কাহাকে বলুে ? যুক্তি-বিচারের অর্থ—অল্প-বিস্তর শ্রেণীভুক্তকরণ, ক্রমশঃ পদার্থনিচয়কে উচ্চ উচ্চ শ্রেণীতে অস্তভূক্ত,করিয়া শেষে এমন একস্থানে পৌছানে, যাহার উপর আর যাওয়া চলে না। সসীম বস্তুকে যদি অনন্তের পর্যায়ভুক্ত করিতে পারা যায়, তবে উহার চরম বিশ্রাম হয়। একটি সসীম বস্তু লইয়া উহার কারণ অনুসন্ধান করিয়া যাও, কিন্তু যতক্ষণ না তুমি চরমে অর্থাৎ অনন্তে পৌছিতেছ, ততক্ষণ কোথাও শাস্তি পাইবে না। আর অদ্বৈতবাদী বলেন : এই অনন্তেরই একমাত্র অস্তিত্ব আছে ; আর সবই মায়া, আর কিছুরই সত্তা নাই। যে-কোন জড়বস্তু হউক, তাহার যথার্থ স্বরূপ যাহা, তাহা এই ব্রহ্ম । আমরা এই ব্ৰহ্ম ; নামরূপাঁদ আর যাহা কিছু সবই মায়া, ঐ নামৰূপ তুলিয়া লও, তাহা হইলে আর তোমার আমাক্স মধ্যে কোন প্রভেদ নাই। কিন্তু আমাদিগকে এই আমি শটি ভাল করিয়া বুঝিতে হইবে। সাধারণতঃ লোকে বলে,যদি আমি ব্রহ্মই