পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Հ83 স্বামীজীর বাণী ও রচনা হই, তবে আমি যাহা ইচ্ছা করিতে পারি না কেন ? কিন্তু এখানে এই ‘আমি’ শব্দটি অন্য অর্থে ব্যবহৃত হইতেছে। তুমি যখন নিজেকে বদ্ধ বলিয়া মনে কর, তখন তুমি আর আত্মস্বরূপ ব্ৰহ্ম নও—ব্রহ্মের কোন অভাব নাই, তিনি অন্তর্জ্যোতিঃ, তিনি অস্তরারাম, আত্মতৃপ্ত ; র্তাহার কোন অভাব নাই, তাহার কোন কামনা নাই, তিনি সম্পূর্ণ নির্ভয় ও সম্পূর্ণ স্বাধীন ; তিনিই ব্রহ্ম। সেই ব্রহ্মস্বরূপে আমরা সকলেই এক । t সুতরাং দ্বৈতবাদী ও অদ্বৈতবাদীর মধ্যে এইটি বিশেষ পার্থক্য বলিয়া বোধ হয় । তোমরা দেখিবে, শঙ্করাচার্যের মতো বড় বড় ভাষ্যকারের পর্যন্ত নিজেদের মত সমর্থন করিবার জন্য স্থানে স্থানে শাস্ত্রের এরূপ অর্থ করিয়াছেন, যাহা আমার সমীচীন বলিয়া বোধ হয় না। রামানুজও শাস্ত্রের এমন অর্থ কবিয়াছেন, যাহা স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায় না। আমাদের পণ্ডিতদের ভিতরেও এই ধারণা দেখিতে পাওয়া যায় যে, বিভিন্ন মতবাদের মধ্যে একটি মতই সত্য হইতে পারে, আর সবগুলিই মিথ্যা, যদিও তাহারা শ্রুতি হইতে এই তত্ত্ব পাইয়াছেন —যে অপুর্ব তত্ত্ব ভারতের এখনও জগৎকে শিক্ষা দিতে হইবে—‘একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্তি’ অর্থাং প্রকৃত তত্ত্ব, প্রকৃত সত্তা এক, মুনিগণ র্তাহাকেই নানারূপে বর্ণনা করিয়া থাকেন। ইহাই আমাদের জাতীয় জীবনের মূলমন্ত্র, আর এই মূলতত্ত্বটিকে কার্যে পরিণত করাই আমাদের জাতির প্রধান জীবনসমস্যা । ভারতে কয়েকজন মাত্র পণ্ডিত ব্যতীত অমর। সকলেই সর্বদ এই তত্ত্ব ভুলিয়া যাই—আমি পণ্ডিত অর্থে প্রকৃত ধামিক ও জ্ঞানী ব্যক্তিকে লুক্ষ্য করিতেছি। আমরা এই মহান তত্ত্বটি সর্বদাই ভুলিয়া যাই, আর তোমরা দেখিবে অধিকাংশ পণ্ডিতের—আমার বোধ হয় শতকরা ৯৮ জনের—মত এই যে, হয় অদ্বৈতবাদ সত্য, নয় বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ সত্য, নতুবা দ্বৈতবাদ সত্য। যদি বারাণসীধামে পাচ মিনিটের জন্য কোন ঘাটে গিয়া উপবেশন কর, তবে তুমি আমার কথার প্রমাণ পাইবে ; দেখিবে, এই-সকল বিভিন্ন সম্প্রদায় ও মত লইয়া রীতিমত যুদ্ধ চলিয়াছে। আমাদের সমাজের ও পণ্ডিতদের তো এই অবস্থা ! এই বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক কলহ-দ্বন্দ্বের ভিতর এমন একজনের অভু্যদয় হইল, যিনি ভারতের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে যে সামঞ্জস্য রহিয়াছে, সেই সামঞ্জস্য কার্যে পরিণত করিয়া নিজ জীবনে দেখাইয়াছিলেন।১। আমি রামকৃষ্ণ