পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিয়ালকোটে বক্তৃতা—ভক্তি &Q? হয়। উহার স্মৃেত ক্ষীণতর হইয়া যাইবে, স্রোতের বেগও হ্রাস পাইবে। এই জীবন একটু গুরুতর ব্যাপার-নিজ ভাবাহযায়ী ইহাকে পরিচালিত করিতে হুইবে । যে-দেশে সকলকে এক পথে পরিচালিত করিবার চেষ্টা করা হয়, সেদেশ ক্রমশঃ ধর্মহীনু হইয়া দাড়ায় । ভারতে কখনও এরূপ চেষ্টা করা হয় নাই । বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে কখন বিরোধ ছিল না, অথচ প্রত্যেক ধৰ্মই স্বাধীনভাবে নিজ নিজ কাৰ্যসাধন করিয়া গিয়াছে—সেইজন্যই এখানে প্রকৃত ধর্মভাব এখনও জাগ্রত। এখানে ইহাও স্মরণ রাখিতে হইবে যে, বিভিন্ন ধর্মে বিরোধ দেখা দেয় কারণ –একজন মনে করিতেছে—সত্যের চাবি আমার কাছে, আর যে আমায় বিশ্বাস না করে, সে মূখ। অপর ব্যক্তি আবার মনে করিতেছে—ও-ব্যক্তি কপট, কারণ তাহা না হইলে সে.আমার কথা শুনিত । সকল ব্যক্তিই এক ধর্মের অমুসরণ করুক, ইহাই যদি ঈশ্বরের ইচ্ছা হইত, তবে এত বিভিন্ন ধর্মের উৎপত্তি হইল কিরূপে ? তোমরা কি সেই সর্বশক্তিমানের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করিতে পারে ? সকলকে একধর্মাবলম্বী করিবার জন্য অনেক প্রকার উদ্যোগ ও চেষ্টা হইয়াছে, কিন্তু তাহাতে কোন ফল হয় নাই । এমন কি, তরবারি-বলে সকলকে একধর্মাবলম্বী করিবার চেষ্টাও যেখানে হইয়াছে, ইতিহাস বলে—সেখানেও একবাড়িতে দশটি ধর্মের উৎপত্তি হইয়াছে। সমগ্র জগতে একটি ধর্ম কখনও থাকিতে পারে না । বিভিন্ন শক্তি মানবমনে ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া করিলে মানুষ চিন্তা করিতে সমর্থ হয় । এই বিভিন্ন শক্তির পক্রয়া-প্রতিক্রিয়া না থাকিলে মাহৰ চিন্তা করিতেই সমর্থ হইত না, এমন কি মনুস্যপদবাচ্যই হইত না । ‘মন’ ধাতু হইতে মনুষ্য-শব্দ ব্যুৎপন্ন হইয়াছে—মমুন্য শব্দের অর্থ মননশীল। মনের পরিচালনা না থাকিলে চিন্তাশক্তিও লোপ পায়, তখন সেই ব্যক্তিতে এবং একটা সাধারণ পশুতে কোন প্রভেদ থাকে না । তখন এরূপ ব্যক্তিকে দেখিয়া সকলেরই ঘৃণার উদ্রেক হয়। ঈশ্বরেচ্ছায় ভারতের যেন কখন এমন অবস্থা না হয় ! অতএব মহুষ্যত্ব যাহাতে থাকে, সেজন্য এই একত্বের মধ্যে বহুত্বের প্রয়োজন। সকল বিষয়েই এই বহুত্ব বা বৈচিত্র্য-রক্ষার প্রয়োজন ; কারণ যতদিন এই বহুত্ব থাকিবে; তুতদিনই জগতের অস্তিত্ব। অবশ্য বহুত্ব বা বৈচিত্র্য বলিলে ইহা বুঝায় না দে, উহার মধ্যে ছোট-বড় আছে। যদি সকলেই সমানও হয়,