পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিয়ালকোটে বক্তৃতা-ভক্তি ૨૭૪ করিলে মনে অপবিত্র ভাব উদিত হয় । ব্রাহ্মণের সন্তান হইয়াও সে-ব্যক্তি যদি লম্পট ও কুক্রিয়াসক্ত হয়, তবে তাহার হাতে খাওয়া উচিত নয়। এখন এ-সব চলিয়া গিয়াছে—এখন শুধু এইটুকু অবশিষ্ট আছে যে, আমাদের আত্মীয়-স্বজন না হইলে তাহার হাতে আর খাওয়া হইবে না— সে-ব্যক্তি হাজার জ্ঞানী ও উপযুক্ত লোক হউক না কেন । এই-সকল নিয়ম যে কিভাবে উপেক্ষিত হইয়া থাকে, ময়রার দোকানে গেলে তাহার প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাইবে । দেখিবে মাছিগুলি চারিদিকে ভন ভন্‌ করিয়া উড়িয়া দোকানের সব জিনিসে বসিতেছে — রাস্তার ধূলি উড়িয়া মিঠাই-এর উপর পড়িতেছে, আর ময়রার কাপড়খানা এমনি যে, চিমটি কাটিলে ময়লা উঠে । কেন, খরিদারেরা সকলে মিলিয়া বলুক না—দোকানে গ্লাসকেস না বসাইলে আমরা কেহ মিঠাই, কিনিব না। এইরূপ করিলে আর মাছি আসিয়া খাবারের উপর বসিতে পারিবে না এবং কলেরা ও অন্যান্য সংক্রামক রোগের বীজ ছড়াইবে না। পুর্বকালে লোকসংখ্যা অল্প ছিল—তখন যে-সকল নিয়ম ছিল, তাহাতেই কাজ চলিয়া যাইত। এখন লোকসংখ্যা বাড়িয়াছে, অন্যান্য অনেক প্রকার পরিবর্তনও ঘটিয়াছে। সুতরাং এই-সকল বিষয়ে আমাদের এতদিন উৎকৃষ্টতর বিধিব্যবস্থা প্রণয়ন করা উচিত ছিল । কিন্তু আমরা উন্নতি না করিয়া ক্রমশঃ অবনতই হইয়াছি । মন্থ বলিয়াছেন, জলে থুথু ফেলিও না ; আর আমরা করিতেছি কি ? আমরা গঙ্গায় ময়লা ফেলিতেছি । এই-সকল বিবেচনা করিয়া স্পষ্ট প্রতীত হয় যে, বুহি শোঁচের বিশেষ আবশ্বক। শাস্ত্রকারেরাও তাহা জানিতেন, কিন্তু এখন এই-সকল শুচি-অশুচি-বিচারের প্রকৃত উদ্বেগু লোপ পাইয়াছে—এখন শুধু উহার খোসাটা পড়িয়া আছে। চোর, লম্পট, মাতাল, অতি ভয়ানক জেলখাটা আসামী—ইহাদিগকে আমরা স্বচ্ছন্দে জাতিতে লইব, কিন্তু একজন সৎ ও সুন্নাস্ত লোক যদি নিম্নবর্ণের অথচ তাহার মতো সমমর্যাদাসম্পন্ন কোন ব্যক্তির সঙ্গে বসিয়া খায়, তবে সে তৎক্ষণাৎ জাতিচু্যত হইবে—চিরদিনের জন্য পতিত হইয়া রহিল । ইহাতেই আমাদের দেশে ঘোরতর অনিষ্ট হইতেছে। সুতরাং এইটি স্পষ্টরূপে জানা উচিত যে, পাপীর সংসর্গে পাপ এবং সাধুর সঙ্গে সাধুতা আসিয়া থাকে; এবং অসৎ-সংসর্গ দূর হইতে পরিহার করাই বাহ শৌচ ৷ আভ্যন্তর শুদ্ধি আরও কঠিন । অন্তঃশৌচসম্পন্ন হইতে গেলে সত্যভাষণ, দরিদ্রসেবা এবং বিপন্ন ও অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করা আবশ্যক ।