পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিয়ালকোটে বক্তৃতা—ভক্তি Re(t করিয়া রাখে। • পিতামাতার প্রতি সস্তানের যে ভালবাস, সে ভালবাসা শ্রদ্ধাজনিত-ভয়-মিশ্রিত। ঈশ্বর কিছু স্বষ্টি করুন বা না-ই করুন, তিনি আমাদের রক্ষণকর্তা হউন বা না-ই হউন, এ-সকল জানিয়া আমাদের কি লাভ ? তিনি আমাদের প্রাণের প্রিয়তম আরাধ্য দেবতা, সুতরাং ভয়ের ভাব ছাড়িয়া দিয়া তাহাকে উপাসনা করা চাই । যখন মানুষের সকল বাসনা চলিয়া যায়, তখন সে অন্ত কোন বিষয়ের চিন্তা করে না ; যখন সে ঈশ্বরের জন্য উন্মত্ত হয়, তখনই মানুষ ভগবানকে যথার্থভাবে ভালবাসিয়া থাকে। সংসারে প্রেমিক যেমন র্তাহার প্রেমাম্পদকে ভালবাসিয়া থাকে, তেমনি আমাদের ভগবানকে ভালবাসিতে হইবে । কৃষ্ণ স্বয়ং ঈশ্বর—রাধা তাহার প্রেমে উন্মত্ত যে-সকল গ্রন্থে রাধা-কৃষ্ণের উপাখ্যান আছে, সে-সকল গ্রন্থ পাঠ কর, তখন বুঝিবে কিরূপে ঈশ্বরকে ভালবাসিতে হয়। কিন্তু এ অপূর্ব প্রেমের তত্ব ক্ষে বুঝিবে ? অনেক ব্যক্তি আছে, যাহাদের অন্তরের অন্তস্তল পর্যন্ত পাপে পুর্ণ—তাহারা পবিত্রতা বা নীতি কাহাকে বলে জানে না ; তাহারা কি এই-সব তত্ত্ব বুঝিবে ? তাহারা কোনমতেই এ-সকল তত্ত্ব বুঝিতে পারিবে না । যখন লোকে মন হইতে সমুদয় অসং চিন্তা দূর করিয়া পবিত্র নৈতিক ও আধ্যাত্মিক পরিবেশে বাস করে, তখন তাহারা মূখ হইলেও শাস্ত্রের অতি জটিল ভাষারও রহস্য ভেদ করিতে সমর্থ হয়। কিন্তু এরূপ লোক সংসারে কয়জন ?— কয়জনের এরূপ হওয়া সম্ভব ? • এমন কোন ধর্ম নাই, যাহা অসং লোক কলুষিত না করিতে পারে । ‘জ্ঞানমার্গের দোহাই দিয়া মানুষ অনায়াসেই বলিতে পারে—আত্মা যখন দেহ হইতে সম্পূর্ণ পৃথক, তখন দেহ যাহাই করুক না কেন, আত্মা তাহাতে .কখনই লিপ্ত হন না। যদি মাহ্য যথার্থভাবে ধর্মের অনুসরণ করিত, তৱে কি হিন্দু, কি মুসলমান, কি খ্ৰীষ্টান-যে-কোন ধর্মাবলম্বীই হউক না, সকলেই পবিত্রতার মূর্ত প্রতীক হইত। কিন্তু প্রকৃতি মদ হইলে লোক মন্দ হইয়া থাকে, আর মানুষ নিজ নিজ প্রকৃতি-অনুযায়ী পরিচালিত হয়—ইহা অস্বীকার করিবার উপায়ু, নাই। কিন্তু অসাধু লোকের সংখ্যা বেশী হইলেও সকল ধর্মেই এমন কতকগুলি ব্যক্তি আছেন, যাহারা ঈশ্বরের নাম শুনিলেই মাতিয়া ওঠেন ঈশ্বরের গুণগান কীর্তন করিতে করিতে প্রেমাশ্র বিসর্জন করেন। এরূপ লোকই যথার্থ ভক্ত ।