পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৬ স্বামীজীর বাণী ও রচনা ধৰ্মজীবনের প্রথম অবস্থায় মানুষ ঈশ্বরকে প্রভু ও নিজেকে তাহার দাস মনে করে । সে কৃতজ্ঞচিত্তে বলে, “হে প্রভূ, আজ আমাকে দু-পয়সা দিয়ােছ—সেজন্য তোমাকে ধন্যবাদ দিতেছি । এইভাবে কেহ বলে, “হে ঈশ্বর, ভরণপোষণের জন্য আমাদিগকে আহার্য প্রদান কর।’ কেহ বলে, “হে প্রভো, এই এই কারণে আমি তোমার প্রতি বড়ই কৃতজ্ঞ’ ইত্যাদি। এই ভাবগুলি একেবারে পরিত্যাগ কর । শাস্ত্র বলেন, জগতে একটিমাত্র আকর্ষণী শক্তি আছে—সেই আকর্ষণী শক্তির বশে সূর্য চন্দ্র এবং অন্যান্য সকলেই বিচরণ করিতেছে । সেই আকর্ষণী শক্তি ঈশ্বর । এই জগতে সকল বস্তু—ভালমন্দ যাহা কিছু সবই ঈশ্বরাভিমুখে চলিতেছে । আমাদের জীবনে যাহা কিছু ঘটিতেছে, ভালই হউক, মন্দই হউক —সবই তোহার দিকে লইয়া যাইতেছে । নিজের স্বার্থের জন্য একজন অণর একজনকে খুন করিল। অতএব নিজের জন্যই হউক আর অপরের জন্যই হউক, ভালবাসাই ঐ কার্যের মূলে। ভালই হউক, মন্দই হউক, ভালবাসাই সকলকে প্রেরণা দেয় । সিংহ যখন ছাগশিশুকে হত্যা করে, তখন সে নিজে বা তাহার শাবকের ক্ষুধার্ত বলিয়াই ঐৰূপ করিয়া থাকে। যদি জিজ্ঞাসা করা যায়, ঈশ্বর কি ?—তাহা হইলে বলিতে হইবে, ঈশ্বর প্রেমস্বরূপ । সর্বদা সকল অপরাধ ক্ষমা করিতে প্রস্তুত অনাদি অনন্ত ঈশ্বর সর্বভূতে বিরাজমান। তাহাকে লাভ করিবার জন্য কোন নির্দিষ্ট সাধনপ্রণালী অনুষ্ঠান করিতে হুইবে, নতুবা র্তাহাকে লাভ করা যাইবে না—ইহা তাহার অভিপ্রায় নয়। মানুষ জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে তাহার দিকে চলিয়াছে। পতির পরম অনুরাগিণী পত্নী জানে না যে, তাহার পতির মধ্যে সেই মহা আকর্ষণ শক্তি রহিয়াছে—তাহাই । তাহাকে স্বামীর দিকে টানিতেছে । আমাদের উপাস্ত কেবল এই প্রেমের ঈশ্বরণ যতদিন আমরা তাহাকে স্রষ্ট পাতা ইত্যাদি মনে করি, ততদিন বাহ পুজার প্রয়োজন থাকে, কিন্তু যখন ঐ-সকল চিন্তা পরিত্যাগ করিয়া তাহাকে প্রেমের মূর্ত প্রতীক বলিয়া চিস্তা করি এবং সকল বস্তুতে র্তাহাকে এবং র্তাহাতে সকলকে অবলোকন করি, তখনই আমরা পরা ভক্তি লাভ করিয়া থাকি ।