পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Rసి 8 স্বামীজীর বাণী ও রচনা প্রত্যেক লোককেই তাহার বিশেষ উপাসনা-পদ্ধতি, ভগবানুের দিকে অগ্রসর হইবার বিশেষ পথ অবলম্বন করিতে হইবে। আর সেই নির্বাচিত পথই তযুহার ইষ্ট। অন্য উপাসনাগুলিকে সহানুভূতির চক্ষে দেখিতে হইবে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে নিজ উপাসনাপদ্ধতি-অনুসারে সাধন করিতে হইবে, যতদিম না সাধক গন্তব্য স্থলে উপনীত হন, যতদিন না তিনি সেই কেন্দ্রস্থলে উপনীত হন, যেখানে আর জড়ের সাহায্য প্রয়োজন নাই। এই প্রসঙ্গে ভারতের অনেক স্থানে প্রচলিত কুলগুরুপ্রথা সম্বন্ধে—যে-প্রথা এক প্রকার বংশপরম্পরাগত গুরুগিরিমাত্ৰ—সে সম্বন্ধে সাবধান করিয়া দিবার জন্য দুই-চারিটি কথা বলা আবশ্যক । শাস্ত্রে আমরা পড়িয়া থাকি, যিনি বেদের সার মর্ম বুঝেন, যিনি নিষ্পাপ, যিনি অর্থলোভে বা অপর কোন উদ্দেশ্বে লোককে শিক্ষা দেন না, যাহার কৃপা অহৈতুকী, বসন্ত ঋতু যেমন বৃক্ষলতাদির নিকট কিছু প্রার্থনা করে না, কিন্তু যেমন বসন্তাগমে বৃক্ষলতাদি সতেজ হইয়া উঠে, উহাদের নূতন ফলপত্র-মুকুলাদির উদগম হয়, সেইরূপ র্যাহার স্বভাবই লোকের কল্যাণসাধন করা, যিনি উহার পরিবর্তে কিছুই চাহেন না, যাহার সারাজীবনই অপরের কল্যাণের জন্য, এইরূপ লোকই গুরুপদবাচ্য, অন্যে নহে অসদগুরুর নিকট তো জ্ঞানলাভের সম্ভাবনাই নাই, বরং তাহার শিক্ষায় একটি বিপদের আশঙ্কা অাছে। কারণ গুরু কেবল শিক্ষক বা উপদেষ্টামাত্র নহেন, শিক্ষকতা র্তাহার কর্তব্যের অতি সামান্য অংশমাত্র। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন যে, গুরু শিয়ে শক্তিসঞ্চার করেন। একটি সাধারণ জডজগতের দৃষ্টান্ত ধরুন—যদি কোন, ব্যক্তি ভাল বীজের টিকা না লন, তাহার শরীরে দূষিত অনিষ্টকর বীজ প্রবেশের ভয় আছে । সেইরূপ অসদগুরুর শিক্ষায় কিছু মন্দ শিখিবার আশঙ্কা আছে । স্বতরাং ভারতবর্ষ হইতে এই কুলগুরুর ভাবটি উঠিয়া যাওয়া একান্ত প্রয়োজন । হইয়াছে। গুরুর কার্য যেন ব্যবসায়ে পরিণত না হয় । ইহা নিবারণ করিতেই হইবে, ইহা শাস্ত্রবিরুদ্ধ। নিজেকে গুরু বলিয়া পরিচয় দিবার সময় কুলগুরুপ্রথা যে-অবস্থা স্বষ্টি করিয়াছে, তাহ সমর্থন করা কাহারও উচিত নহে । আহার সম্বন্ধে আজকাল যে কঠোর নিয়মের উপর ঝোক দেওয়া হয়, সেটির অধিকাংশ বাহ ব্যাপার এবং যে উদ্দেশ্বে ঐ-সকল নিয়ম প্রথম বিধিবদ্ধ ১ তুলনীয় : বিবেকচুড়ামণি, ৩৯