পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেদান্ত [লাহোরে প্রদত্ত তৃতীয় বক্তৃতা, ১২ই নভেম্বর, ১৮৯৭ ] আমরা দুইটি জগতে বাস করিয়া থাকি-বহির্জগৎ ও অন্তর্জগৎ । অতি প্রাচীনকাল হইতেই মানুষ এই উভয় জগতেই প্রায় সমভাবে উন্নতি করিয়া আসিতেছে । প্রথমেই বহির্জগতে গবেষণা আরম্ভ হয় এবং মানুষ প্রথমতঃ বহিঃপ্রকৃতি হইতেই সকল গভীর সমস্যার উত্তর পাইবার চেষ্টা করিয়াছে । সে প্রথমতঃ তাহার চতুষ্পাশ্বস্থ সমুদয় প্রকৃতি হইতে তাহার মহান ও সুন্দরের জন্য পিপাসা নিবৃত্তির চেষ্টা করিয়াছে ; নিজেকে এবং নিজের ভিতরের সমুদয় বস্তুকে স্কুলের ভাষায় প্রকাশ করিবার চেষ্টা করিয়া সে যে-সকল উত্তর পাইয়াছে, ঈশ্বরতত্ত্ব ও উপাসনাতত্ত্বসমূহ সম্বন্ধে যে-সকল অতি অদ্ভুত সিদ্ধাস্ত করিয়াছে, সেই শিবসুন্দরকে যে আবেগময়ী ভাষায় বর্ণনা করিয়াছে, তাহা অতি অপুর্ব । বহির্জগৎ হইতে মানুষ যথার্থ ই মহান ভাবসমূহ লাভ করিয়াছে। কিন্তু পরে তাহার নিকট অন্য এক জগৎ উন্মুক্ত হইল, তাহ আরও মহত্তর, আরও সুন্দরতর, আরও অনস্তগুণে বিকাশশীল । বেদের কর্মকাণ্ডভাগে আমরা ধর্মের অতি অদ্ভূত তত্ত্বসমূহ বিবৃত দেখিতে পাই, আমরা জগতের স্বষ্টিস্থিতিলয়-কর্তা বিধাতার সম্বন্ধে অত্যন্ত বিস্ময়কর তত্ত্বসমূহ দেখিতে পাই, আর এই ব্রহ্মাণ্ডকে সে ভাষায় বর্ণনা করা হইয়াছে, তাহা স্থানে স্থানে অতিশয় প্রাণম্পর্শী। তোমাদের মধ্যে হয়তো অক্ষকেরই ঋগ বেদ-সংহিতার প্রলয়বর্ণনাত্মক সেই অপুর্ব মন্ত্রটির কথা স্মরণ আছে। বোধ হয় এরূপ মহম্ভাব-দ্যোতক বর্ণনা করিতে এ পর্যন্ত কেহ চেষ্টা করে নাই। তথাপি উহা কেবল বহিঃপ্রকৃতির মহান ভাবের বর্ণনা—উহা স্কুলেরই বর্ণনা, উহাতে যেন এখনও কিছু জড়ভাব লাগিয়৷ রহিয়াছে । উহা কেবল জড়ের ভাষায়, সীমার ভাষায় অসীমের বর্ণনা ; উহ। জড় দেহেরই বিস্তারের বর্ণনা—মনের নহে ; উহা দেশেরই অনস্তত্বের বর্ণন, মনের মুহে ! এই কারণে বেদের দ্বিতীয় ভাগে অর্থাৎ জ্ঞানকাণ্ডে দেখিতে পাই, সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রণালী আহস্থত হইয়াছে। প্রথম প্রণালী ছিল—বহিঃপ্রকৃতি হইতে বিশ্বের প্রকৃত সত্য অনুসন্ধান করা । জড়জগৎ হইতেই জীবনের সমুদয় গভীর সমস্তার মীমাংসা করিবার চেষ্টা প্রথমে হইয়াছিল। ‘খস্তৈতে হিমবস্তে