পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Whe b- স্বামীজীর বাণী ও রচনা আমরা প্রকৃতপক্ষে ক+ মনকে জানিতে পারি, এবং এই জ্ঞানক্রিয়ার মধ্যে মনের ভাগটি এত অধিক যে, উহা ঐ ‘ক’-এর সর্বাংশব্যাপী, আর ঐ ক’-এর স্বরূপ প্রকৃতপক্ষে চিরকালই অজ্ঞাত ও অজ্ঞেয় ; অতএব যদি বহির্জগৎ বলিয়া কিছু থাকে, তবে উহা চিরকালই অজ্ঞাত ও অজ্ঞেয় । আমাদের মনের দ্বারা উহা যেরূপ আকারে রূপান্তরিত হয়, উহাকে আমরা সেই ভাবেই জানিতে পারি। অন্তর্জগৎ সম্বন্ধেও সেইরূপ । আমাদের আত্মা সম্বন্ধেও ঠিক ঐ কথা খাটে । আত্মাকে জানিতে হইলে উহাকেও আমাদের মনের মধ্য দিয়া জানিতে হয়, অতএব আমরা এই আত্মা সম্বন্ধে যতটুকু জানি, তাহা আত্মশ্ৰ-মন ব্যতীত আর কিছুই নহে। অর্থাৎ মনের দ্বারা আবৃত, মনের দ্বারা পরিণত বা গঠিত আত্মাকেই আমরা জানি । আমরা পরে এই তত্ত্ব-সম্বন্ধে বিশেষভাবে আলোচনা করিব । তবে এখানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা মনে রাখা আবশ্যক । তারপর আর একটি বিষয় বুঝিতে হইবে । এই দেহ এক নিরবচ্ছিন্ন জড়ম্রোতের নামমাত্র। প্রতিমুহূর্তে আমরা ইহাতে নূতন নূতন উপাদান দিতেছি, প্রতিমুহূর্তে আবার ইহা হইতে অনেক পদার্থ বাহির হইয়া যাইতেছে। যেন একটি সদ-প্রবাহিত নদী—উহার রাশি রাশি জল সর্বদাই এক স্থান হইতে অপর স্থানে চলিয়া যাইতেছে, তথাপি আমরা কল্পনাৰলে সমস্তটিকে একবস্তুরূপে গ্রহণ করিয়া উহাকে সেই একই নদী বলিয়! থাকি । কিন্তু নদীটি প্রকৃতপক্ষে কি ? প্রতিমুহূর্তে নূতন নূতন জল আসিতেছে, প্রতি মুহূর্তে নদীর তটভূমি পরিবর্তিত হইতেছে, প্রতি মুহূর্তে তীরবর্তী বৃক্ষলতা এবং পত্রপুষ্পফলাদির পরিবর্তন ঘটিতেছে। তবে নদীটি কি ? নদী এই পরিবর্তন-সমষ্টির নামমাত্র । মনের সম্বন্ধেও ঐ এক কথা । বৌদ্ধের এই ক্রমাগত পরিবর্তন লক্ষ্য করিয়াই মহান ক্ষণিকবিজ্ঞানবাদ মতের স্বষ্টি করেন। উহা ঠিক ঠিক বুঝ। অতি কঠিন ব্যাপার, কিন্তু বৌদ্ধ দর্শনে এই মত সুদৃঢ় যুক্তি দ্বারা প্রতিপাদিত হইয়াছে, আর ভারতে বেদাস্তের কোন কোন অংশের বিরুদ্ধে এই মত উখিত হইয়াছিল। এই মতকে নিরস্ত করার প্রয়োজন হইয়াছিল, আমরা পরে দেখিব, কেবল অদ্বৈতবাদই এই মতকে খণ্ডন করিতে সমর্থ আর কোন মতই নহে । আমরা পরে ইহাও দেখিব যে, অদ্বৈতবাদ-সম্বন্ধে লোকের নানাবিধ অদ্ভুত ধারণা সত্ত্বেও, অদ্বৈতবাদের নামে ভয় পাওয়া সত্বেও বাস্তবিক ইহাতেই জগতের পরিত্রাণ ; কারণ ੇ অদ্বৈতবাদেই সব কিছুর যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা পাওয়৷