পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেদাস্ত ○ > > তারপর আর একটি বিষয়ে মনোযোগ দিতে হইবে। ইহা সম্ভবতঃ তোমাদের . নিকট অদ্ভুত বলিয়া বোধ হইতে পারে, কিন্তু এই তত্ত্বটিও বিশেষভাবে ভারতীয়—আর এই বিষয়টি আমাদের সকল সম্প্রদায়ের মধ্যেই বর্তমান । এই জন্য আমি তোমাদিগকে এই তত্ত্বটির প্রতি অবহিত হইতে এবং উহা স্মরণ রাথিত্বে অনুরোধ করিতেছি, কারণ ইহা—ভারতীয় বলিতে যাহা কিছু, সে-সকলেরই ভিত্তিস্বরূপ । তোমরা জার্মান ও ইংরেজ পণ্ডিতগণ কর্তৃক পাশ্চাত্যদেশে প্রচারিত শারীর-পরিণামবাদের (doctrine of physical evolution ) বিষয় শুনিয়াছ । ঐ মতে সকল প্রাণীর শরীর প্রকৃতপক্ষে অভিন্ন ; আমরা যে ভেদ দেখি, তাহ একই বস্তুর বিভিন্ন প্রকাশমাত্র আর ক্ষুদ্রতম কীট হইতে মহত্তম সাধু পর্যন্ত সকলেই প্রকৃতপক্ষে একু একটি অপরটিতে পরিণত হইতেছে, আর এইরূপ চলিতে চলিতে ক্রমশঃ উন্নত হইয়া পুর্ণত্ব লাভ করিতেছে । আমাদের শাস্ত্রেও এই পরিণামবাদ রহিয়াছে । যোগী পতঞ্জলি বলিয়াছেন, ‘জাত্যন্তরপরিণাম: প্রকৃত্যাপুরাৎ • —অর্থাৎ এক জাতি অপর জাতিতে, এক শ্রেণী অপর শ্রেণীতে পরিণত হয় । তবে ইওরোপীয়দিগের সহিত আমাদের প্রভেদ কোন খানে ?—‘প্রকৃত্যাপুরাৎ —প্রকৃতির আপুরণের দ্বারা । ইওরোপীয়গণ বলে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রাকৃতিক ও যৌন-নির্বাচন প্রভৃতি এক প্রাণীকে অপর প্রাণীর শরীর গ্রহণ করিতে বাধ্য করে। কিন্তু আমাদের শাস্ত্রে এই জাত্যন্তরপরিণামের যে হেতু নিদিষ্ট হইয়াছে, সহ দেখিয়া মনে হয়, ভারতীয়েরা ইওরোপীয়গণ অপেক্ষ অধিক বিশ্লেষণ করিয়াছিলেন, তাহারা আবুও ভিতরে প্রবেশ করিয়াছিলেন । এই প্রকৃতির আপুরণের অর্থ কি ? আমরা স্বীকার করিয়া থাকি যে, জীবাণু ক্রমশঃ উন্নত হইয়া বুদ্ধ-রূপে পরিণত হয়। আমরা ইহা স্বীকার করিলেও আমাদের দৃঢ় ধারণা যে, কোন যন্ত্রে কোন না কোন আকারে যদি উপযুক্ত পরিমাণ শক্তি প্রয়োগ না করা যায়, তবে তাহা হইতে তদনুরূপ কাজ পাওয়া যায় না । যে আকারই ধারণ করুক না, শক্তিসমষ্টি চিরকালই সমান। এক প্রাস্তে যদি শক্তির বিকাশ দেখিতে চাও, তবে অপর প্রাস্তে শক্তি প্রয়োগ করিতে হইবে ; হইতে পারে-উহা অন্য আকারে প্রকাশিত হইবে, কিন্তু পরিমাণ এক হওয়া চাই-ই ১ যোগসূত্র, ৪২