পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেদাস্ত \4 צ'כ কিন্তু এইখানেই বৌদ্ধদের সহিত মহী বিরোধ আরম্ভ। বৌদ্ধের দেহকে বিশ্লেষণ করিয়া বলেন, দেহ একটি জড়শ্রোত-মাত্র ; সেইরূপ মনকে বিশ্লেষণ করিয়া উহাকেও এইরূপ একটি জড়প্রবাহ বলিয়া বর্ণনা করেন । আত্মার সম্বন্ধে তাহারা বলেন : উহার অস্তিত্ব স্বীকার করা অনাবশ্বক। উহার অস্তিত্ব অকুমান করিবার কিছুমাত্র প্রয়োজন নাই। একটি দ্রব্য এবং ঐ দ্রব্যসংলগ্ন গুণরাশির কল্পনা করিবার প্রয়োজন কি ? আমরা শুধু গুণই স্বীকার করিয়া থাকি। যেখানে একটি কারণ স্বীকার করিলেই সব কিছুর ব্যাখ্যা হয়, সেখানে দুইটি কারণ স্বীকার করা যুক্তিবিরুদ্ধ। এইরূপে বৌদ্ধদের সঙ্গে বিরোধ আরম্ভ হইল, আর যে-সকল মত দ্রবাবিশেষের অস্তিত্ব স্বীকার করিত, বৌদ্ধের সে-সকল মতই খণ্ডন করিয়া ফেলিয়া দিলেন । যাহারা দ্রব্য ও গুণ উভয়ের অস্তিত্ব স্বীকার করে, যাহাবা বলে—তোমার একটি আত্মা, আমার একটি আত্মা, প্রত্যেকেরই শরীর ও মন হইতে পৃথক একটি একটি আত্মা আছে, প্রত্যেকেরই স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব আছে, তাহাদের মতে বরাবরই একটু গলদ ছিল । অবশ্ব দ্বৈতবাদের মত এ পর্যন্ত ঠিক ; ইহা আমরা পুর্বেই দেখিয়াছি যে, এই শরীর রহিয়াছে, এই স্বক্ষ মন রহিয়াছে, আত্মা রহিয়াছেন, আর সকল আত্মার ভিতর সেই পরমাত্মা রহিয়াছেন । এখানে মুশকিল এইটুকু যে, এই আত্মা ও পরমাত্মা উভয়ই বস্তু, আর উহাদের উপর দেহ মন প্রভৃতি গুণরূপে লাগিয়া রহিয়াছে—স্বীকার করা হয়। এখন কথা এই—কেহই কখন বস্তু দেখে নাই, উহার সম্বন্ধে চিন্তা করিতেও পারে না । অতএব তাহারা বলেন, এই বস্তুর অস্তিত্ব স্বীকার কুরিবার প্রয়োজন কি ? ক্ষণিকবিজ্ঞানবাদী হইয়া বলে না কেন যে, মানসিক তরঙ্গরাজি ব্যতীত আর কিছুরই অস্তিত্ব নাই ? মানসিক তরঙ্গগুলি কেহই পরস্পরের সহিত সংলগ্ন নহে, উহারা মিলিয়া 3 বস্তু হয় নাই, সমুদ্রের তরঙ্গরাজির ন্যায় একটির পশ্চাতে আর একটি চলিয়াছে, উহার কখনই সম্পূর্ণ নহে, কখনই উহার একটি অখণ্ড একত্ব গঠন করে না। মানব কেবল এইরূপ তরঙ্গপরম্পরামাত্র – একটি তরঙ্গ চলিয়া যায়, যাইবার সময় আর একটির জন্ম দিয়া যায়, এইরূপ চলিতে থাকে ; আর এই-সকল তরঙ্গের নিবৃত্তিকেই ‘নির্বাণ' বলে। • তোমরা দেখিণ্ডেছ, দ্বৈতবাদ এই মতের নিকট নীরব ; দ্বৈতবাদের পক্ষে ইহার বিরুদ্ধে আর কোন প্রকার যুক্তিতর্ক প্রয়ো{ করা সুসম্ভব । দ্বৈতবাদীর