পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেদান্ত \ף לכ পারে—ঈশ্বরের অস্তিত্ব নাই। র্তাহার অস্তিত্ব-বিষয়ে কোন প্রমাণ নাই, বরং নাস্তিত্ব-বিষয়ে কতকগুলি প্রমাণ আছে। তোমার ঈশ্বর, তাহার গুণ, দ্রব্যস্বরূপ অসংখ্য জীবাত্মা, আবার প্রত্যেক জীবাত্মাই ব্যক্তি—এই-সকল লইয়া তুমি কেমন করিয়ার্তাহার অস্তিত্ব প্রমাণ করিতে পারো ? তুমি ব্যক্তি কিসে? দেহহিসাবে তুমি ব্যক্তি নও, কারণ তোমরা আজ প্রাচীন বৌদ্ধগণ অপেক্ষাও ভালরূপে জানো যে, এক সময় হয়তো যে পদার্থ স্বর্ষে ছিল, আজ তাহারা তোমাতে আসিয়া থাকিতে পারে, আর হয়তো এখনই বাহির হইয়া গিয়া বৃক্ষলতাদিতে থাকিতে পারে। তবে তোমার ব্যক্তিত্ব কোথায় ? মনের সম্বন্ধেও এই কথা খাটে। তবে তোমার ব্যক্তিত্ব কোথায় ? আজ তোমার এক রকম ভাব, আবার কাল আর এক ভাব ! যখন শিশু ছিলুে তখন যেরূপ চিন্তা করিতে, এখন আর সেরূপ চিন্তা কর না ; বৃদ্ধ যেরূপ চিন্তা করে, যুবা-অবস্থায় সে সেরূপ চিন্তা করে নাই। তবে তোমার ব্যক্তিত্ব কোথায় ? জ্ঞানেই তোমার ব্যক্তিত্ব -এ-কথা বলিও না, জ্ঞান অহংতত্ত্বমাত্র, আর উহা তোমার প্রকৃত অস্তিত্বের অতি সামান্ত-অংশব্যাপী ! আমি যখন তোমার সহিত কথা বলি, তখন আমার সকল ইন্দ্রিয় কাজ করিতেছে, কিন্তু আমি সে সম্বন্ধে জানিতে পারি না । যদি জ্ঞানই অস্তিত্বের প্রমাণ হয়, তবে বলিতে হইবে ইন্দ্ৰিয়সমূহ নাই, কারণ আমি তো উহাদের অস্তিত্ব জানিতে পারি না। তবে আর তোমার ব্যক্তিবিশেষ ঈশ্বর সম্বন্ধে মতবাদগুলি কোথায় দাড়ায় ? এরূপ ঈশ্বর তুমি কিভাবে প্রমাণ করিতে পারো ? আবার বৌদ্ধেরা উঠিয়া রলিলেন : ইহা যে শুধু অযৌক্তিক তাহা নহে, এরূপ বিশ্বাস নীতিবিরুদ্ধও বটে, কারণ উহা মানুষকে কাপুরুষ হইতে এবং বাহিরের .সাহায্য প্রার্থনা করিতে শিখায়—কেহই কিন্তু তাহাকে এরূপ সাহায্য করিতে পারে না। এই ব্ৰহ্মাও পড়িয়া রহিয়াছে, মানুষই ইহা এরূপ করিয়াছে। তবে কেন বাহিরের একজন কাল্পনিক ব্যক্তিবিশেষে বিশ্বাস কর, র্যাহাকে কেহ কখন দেখে নাই বা অনুভব করে নাই, অথবা র্যাহার নিকট হইতে কেহ কখনও সাহায্য পায় নাই ? তবে কেন নিজেদের কাপুরুষ করিয়া ফেলিতেছ, আর তোমাদের সন্তান-সন্তর্তিকে শিখাইতেছ যে, মানুষের সর্বোচ্চ অবস্থা কুকুরের মতো হওয়া, এই কাল্পনিক পুরুষের সম্মুখে নিজেকে দুর্বল, অপত্রি ও জগতে অতি হেয় অপদার্থ মনে করিয়াহাটু গাড়িয়া থাকা ?